ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন অনেক, সংকট আস্থার

অনলাইন ডেস্ক ::::

শা1483385122ন্তি চুক্তির ২২ বছর চলছে। তিন পার্বত্য জেলা— বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। যারা আট বছর আগে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন, তারা বুঝতে পারবেন কতটা পরির্বতন হয়েছে এ জনপদে।  সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়া। পাহাড়ি কাঁচা রাস্তা এখন পিচঢালা পথ। গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল-মোটেল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সড়কে চলছে দামি দামি গাড়ি। বাহারি দোকানপাট। আগে যেখানে সন্ধ্যার পর নেমে আসতো ভুতুড়ে পরিবেশ, সেখানে এখন ভ্রমণ পিপাসু মানুষের পদভারে মুখরিত; কিন্তু এতো কিছুর পরও এলাকার পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে রয়েছে আস্থার সংকট। শান্তি চুক্তির অধিকাংশ দফাই বাস্তবায়িত হয়েছে; কিন্তু পাহাড়ে হানাহানি বন্ধে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিল তা বন্ধ করেনি এই অঞ্চলের সশস্ত্র গ্রুপগুলো। বন্ধ হয়নি অস্ত্রের ঝনঝনানি। ফলে পাহাড়ে সেই কাঙ্ক্ষিত শান্তি ফিরে আসেনি। উল্টো কিছু কিছু বিষয় নিয়ে অশান্ত হয়ে উঠছে পার্বত্য অঞ্চল। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা দিন দিন তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে চলছে। মজুদ বাড়াচ্ছে অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদের। ফলে মানুষের মধ্যে আবারও আশঙ্কা বাড়ছে নতুন সংঘাতের। এখানে এখনো গড়ে ওঠেনি বড় ধরনের কোনো শিল্প কারখানা। এলাকায় বাড়ছে বেকারত্ব। সরেজমিন পরির্দশনকালে এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এ চিত্রই পাওয়া যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা আস্থার সংকটের কথা স্বীকার করছেন। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে বাঙালি-পাহাড়ি সংখ্যা প্রায় সমান সমান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি, শান্তি পূর্ণ পরিবেশ ও সহাবস্থান এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের যেসব এলাকায় বিদ্রোহ, রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা  বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে সেখানে আস্থা ফেরাতে একটু সময় লেগেছে। আমাদেরও একটু সময় লাগবে। তবে এটা চলমান প্রক্রিয়া। সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

এলাকার পাহাড়ি ও বাঙালি বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শান্তি চুক্তির পর এলাকার মানুষ আশা করেছিল তাদের বসবাস হবে নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ; কিন্তু শান্তি চুক্তির সাড়ে তিন বছর পর ২০০১ সালে তা ভণ্ডুল হয়ে যায়। তবে ২০০৯ সালে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর আবার এলাকার মানুষ আবার আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে। শুরু হয় উন্নয়নের কার্যক্রম। তৈরি হতে থাকে একের পর এক অবকাঠামো; কিন্তু পাহাড়িদের সঙ্গে বাঙালিদের মধ্যে যে মানসিক দূরত্ব, তা এখনো বিরাজ করছে। যে কারণে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে এখনো।

এ দূরত্ব কীভাবে মেটানো সম্ভব- এমন প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পুলিশ, সেনাবাহিনী বা প্রশাসনের লোক দিয়ে এ দূরত্ব দূর করা সম্ভব না। এ জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বেশি করে সরব হতে হবে। রাজধানীতে বসে পাহাড়ের উন্নতির কথা বললে হবে না। তাদেরকে আসতে হবে পাহাড়ি জনপদের মানুষের কাছে। তারা বলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী-এমপিরা যত বেশি আসবেন এলাকার মানুষ তত বেশি আশ্বস্ত হবে।

নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, এখানে আপাতত কোনো বড় ধরনের শিল্প কারখানা গড়ে তোলার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে ছোট খাট শিল্প কারখানা হচ্ছে। পার্বত্যাঞ্চলের জনগণের জীবনমান আগের তুলনায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই উভয়পক্ষের মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় সেদিন। –ইত্তেফাক

পাঠকের মতামত: