ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পর্দা ওঠলো নতুন বছরের : সমুদ্র নগরীতে লাখো পর্যটক

beachকক্সবাজার সৈকতে ইংরেজি পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকদের ভিড়

গোলাম অাজম খান, কক্সবাজার:
বছরের সর্বশেষ সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকন মানেই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। নতুন বর্ষকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। এ দিকে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনেও হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করছেন। সৈকত থেকে শুরু করে শহরের পর্যটন স্পট ও হোটেলগুলোতে তিল পরিমাণ জায়গা নেই। পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা জোরদার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
চোখের সামনেই রক্তিম সূর্য ডুবে বিদায় নিলো আরেকটি বছর। বছরের শেষ সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে কক্সবাজারে আসা লাখ লাখ পর্যটক নয়ন জুড়িয়ে দেখে নিলেন ২০১৬ সালের সূর্যের শেষ অস্তক্ষণ। প্রতি বছরের মতো এবারো লাখো পর্যটকের পদচারণায় কক্সবাজার মুখরিত হয়ে উঠেছে। থার্টিফার্স্ট নাইটকে ঘিরে পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ-উদ্দীপনা। সৈকতে উন্মুক্ত বালিয়াড়ি, সাগরের নীল জলরাশি, পাহাড় আর প্রাকৃতিক অপার পরিবেশে পর্যটকেরা দারুণ উপভোগ করেছেন। এভাবে পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজারে ভিড় করেছেন লাখো পর্যটক।
বছরের এ বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ট্যুরিজম বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের বিচ কার্নিভাল। বিচ মাতাচ্ছেন দেশের তারকা শিল্পীরা। তাই আগে থেকেই বুকড বেশির ভাগ হোটেল-মোটেল। আজ ১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই বিচ কার্নিভাল। পর্যটন করপোরেশন আয়োজিত কার্নিভালে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দেশের তারকা শিল্পীদের পরিবেশনা। তাই উচ্ছ্বসিত পর্যটকেরা। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ডিজে পার্টিসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে শহরের হোটেলগুলো। ইতোমধ্যে নগরীর চার শতাধিক হোটেলের প্রায় সব কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। ভ্রমণপ্রিয় মানুষ দল বেঁধে দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারের দিকে ছুটে আসায় যানবাহন ও মানুষের ভিড়ে শহরে যান ও জনজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের চাপ বাড়তে থাকে। ৩১ ডিসেম্বর তা ব্যাপকতা পায়। বছরের এ সময়ে প্রায় ১০ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করেন বলে ধারণা হোটেল মালিকদের। তবে দুই বছর ধরে রাতে সমুদ্রসৈকতে ওপেন এয়ার কনসার্টের অনুমতি বাতিল করায় থার্টিফার্স্টের আগের জৌলুস কিছুটা কমে গিয়েছিল। এ বছর থেকে হোটেলের অভ্যন্তরে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন বাড়িয়ে তা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তা ছাড়া এবার আবহাওয়াও চমৎকার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। সব আয়োজন এবার শেষ হচ্ছে সন্ধ্যার আগেই।
এমন পরিবেশে শনিবার কক্সবাজারে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক অবস্থান করছেন বলে জানান কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম কিবরিয়া খান। তিনি বলেন, শুক্রবার থেকে লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। হিমছড়ি, ইনানী, সেন্টমার্টিন ও সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রেও এখন উপচে পড়া ভিড়। হোটেলে কোনো কক্ষ খালি নেই। কক্ষ না পেয়ে অনেকে সৈকতে অথবা রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। তার পরও কক্সবাজারের দিকে ছুটে আসছে মানুষ। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন জানান, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারে অনেকগুলো মেলা ও উৎসব চলছে। হোটেলগুলোয়ও চলছে নানা আয়োজন। এরই মাঝে সরকারি উদ্যোগে শুক্রবার থেকে চলছে তিন দিনব্যাপী বিচ কার্নিভাল।
এ দিকে গতকাল পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকদের ভিড়ে বিপণিকেন্দ্র ও রাস্তাঘাটে উপচে পড়া ভিড়। রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম। রেস্তোরাঁয় খাবারের জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন। সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের টিকিট পেতেও করতে হচ্ছে হুড়োহুড়ি।
হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, নগরীর চার শতাধিক হোটেলে কোনো কক্ষ খালি নেই। সরকারি-বেসরকারি অর্ধশতাধিক রেস্টহাউজেও সব কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। এমনকি ফ্ল্যাটবাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনগুলোও ভাড়া হয়ে গেছে। বর্তমানে কক্সবাজারে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের রাত কাটানোর সুযোগ রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সহসভাপতি শফিকুর রহমান কোম্পানি।
অন্য দিকে পর্যটকদের এই ভিড়কে পুঁজি করে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক গলাকাটা ব্যবসা ফেঁদেছে। হয়রানি চলছে আরো নানাভাবে। তবে অভিযোগ পেলে অপরাধ দমন ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র এএসপি মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী।

পাঠকের মতামত: