ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাবেক সংসদ সদস্য জননেতা মহ্মুদুল করিম চৌধুরী স্মরণে

mahmudul-karim-cho-bnp-pekuaকে.এম. নাছির উদ্দিন :::

এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ক’জন নেতা তাঁর আপন মহিমায় মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন, তাদেরই একজন সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব মাহ্মুদুল করিম চৌধুরী। কাল  ২৭ ডিসেম্বর তাঁর ১১ তম মৃত্যু বার্ষিকী। দীর্ঘদিন ধরে কিডনী রোগে ভোগার পর ২০০৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মানুষে-মানুষে সহমর্মিতা সৃষ্টির যে মহান শিল্প তার নাম রাজনীতি, আর এ শিল্পের যিনি নিপূণ শিল্পী তারই নাম রাজনীতিবিদ। রাজনীতি নামক এ মহৎ শিল্প কর্মের খাতায় তিনি নাম লিখিয়েছিলেন ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে। মজলুম জননেতা মৌলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী ছিলেন তাঁর রাজনীতি গুরু। পরবর্তীতে জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন তাঁর নেতা। ১৯৭৩ সালে অ-বিভক্ত চকরিয়া থানার বৃহত্তর মগনামা ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেনে তাঁর গণ প্রতিনিধিত্ব জীবন শুরু। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ২য় নির্বাচনে তৎকালীন চকরিয়া-কুতুবদিয়া আসন হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান এবং জাতীয় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে তাঁর গণ প্রতিনিধিত্ব জীবনের সমাপ্তি। চৌধুরী একজন সংসদ সদস্য হিসেবে অ-বিভক্ত চকরিয়ার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনে সক্ষম হন। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, বানিয়ারছড়া-মগনামা সড়ক সহ স্থানীয় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তাঁর উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের বিশেষ স্মৃতি। জমিদার পরিবারের সন্তান হিসেবে আজীবন ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসে মগ্ন থেকে সমাজে নিজের কর্মপরিধি খুব সীমিত রেখে আয়ুস্কাল পার করে দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্বেও তিনি ছিলেন এক জনহিতকর ব্যক্তিত্ব। জনাব চৌধুরী সর্বশেষ ১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন হতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। দীর্ঘ সামরিক শাসনের হাত থেকে গণ আন্দোলনে দেশ মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণের পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে অঢেল অর্থের ছড়াছড়ির কাছে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজিত হন। রাজনীতিতে সারা জীবনের ত্যাগের পরেও নিচক অর্থের আধিপত্যের করুণ দশা দেখে নিজেকে অনেকটা অ-ঘোষিতভাবেই দলীয় কর্মকান্ড থেকে সরিয়ে রাখেন। সকল দলের-মতের মানুষের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে পারঙ্গম একজন দলীয় নেতাই হয়ে ওঠেণ, পরিপূর্ণ জননেতা হিসেবে। এ কথাটি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন তিনি। এজন্য তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছেও খুব প্রিয় ছিলেন। জনগণের কল্যাণ সাধন, জনগণের ভাগ্যেন্নয়ন ও জনসেবার মতো শ্রুতি মধুর কথা বলে জনগণের নেতা নির্বাচিত হযে, তার পিরীতে কাজ করে নিজের আখের গোছানোর যে অপসংস্কৃতি চলছে তার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। যে কারণে সুরম্য প্রাসাদের পরিবর্তে তিনি গ্রামে বসবাস করতে পৈত্রিক জমিদারীতে বাঁশের বেড়ায় নির্মিত ঘরে। আর সন্তান-সন্ততিদের পড়া-লেখার সুবিধার্থে চট্টগ্রামে অবস্থান করতেন ভাড়াটে বাসায়। তিনি ১৯৯৭ সালে চকরিয়া পুরাতন বিমান বন্দরস্থ বিজয় মঞ্চে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেছিলেন “দীর্ঘদিনেও বাংলাদেশ ভারত থেকে গঙ্গা নদীর ন্যায্যা হিস্যা আদায় করতে না-পারলেও সদ্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন আওয়ামীলীগ এ বিষয়ে ভারতের সাথে অন্তত একটি চুক্তি সম্পাদনে সক্ষম হয়েছে, এতে ভবিষ্যতে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের পথ সুগম হয়েছে-এজন্য আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এটি ছিল চকরিয়ার মাটিতে তাঁর জীবদ্দশায় শেষ বক্তব্য এবং এ মাটিতে তাঁকে শেষবারের মতো আনা হয়েছিল মরণোত্তর সময়ে ২৮ ডিসেম্বর-২০০৫ সালে, তার নামাজে জানাযার জন্য। সেদিন প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও জানাযায় বিপুল সর্বদলের সর্বমহলের বিপুল উপস্থিতি-তার প্রতি মানুষের অগাধ ভালোবাসর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর থেকে আজ অব্দি এলাকার সচেতন মহলে যে বিষয়টি বারবার নাড়া দিচ্ছে, তা’হল এতো বড় মাপের একজন মানুষের মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে কেউ কোনদিন একটি স্মরণ সভার প্রয়োজন অনুভব করার সময় পাননি। অথচ দূর্গম রাজাখালী ইউনিয়নের কিছু মানুষ, যারা জীবনে ক্খনো ক্ষমতার ছিটে-ফোটাও পাননি এবং জীবন-জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রামে অবস্থানরত কিছু মানুষ স্মরণ সভার আয়োজন করেছিলেন। মরহুমের শারীরিক অসুস্থতাকারীরন সময়ে সার্বক্ষণিকভাবে খবর নিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুল্লাহ্্ আল নোমান, কর্ণেল (অবঃ) অলি আহামদ সহ বিএনপিৎর প্রবীণ নেতৃবৃন্দ। চট্টগ্রাম, চকরিয়া এবং মগনামায় ৩য় দফা জানাযা শেষে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। সেদিন জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন, তাঁর রাজনীতির চির প্রতিদ্বন্ধি এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহামদ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সালাহ্উদ্দিন আহামদ সি.আই.কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক সহ সরকারী, বে-সরকারী বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।  চৌধুরী রাজনীতি যে আদর্শ চর্চা করতেন, তা এখন খুব বেশী প্রয়োজন এ প্রজন্মের রাজনীতিকদের চর্চা করার। কারণ এ প্রজন্মের রাজনীতিকদের কাছে দেশ-জাতির প্রত্যাশা অনেক। মরহুমের জ্যেষ্ট পুত্র শাফায়েত আজিজ চৌধুরী রাজু বর্তমানে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁর পিতার মতো তিনিও একজন আদর্শ রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হলেও ভবিষ্যতে তিনিও সাধারণ মানুষের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আল্লাহ্্ মরহুম মাহমুদুল করিম চৌধুরীকে জান্নাত দান করুন আজকের এদিনে-এটিই প্রার্থনা।

পাঠকের মতামত: