ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

বমু বিলছড়ির দাদন ব্যবসায়ীর কাছে ৫ শতাধিক ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প

STAMPlama-photo-19-12-16মোহম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা প্রতিনিধি ঃ

চর্তুদিকে লামা উপজেলা বেষ্টিত। কক্সবাজার জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিটমহল খ্যাত চকরিয়ার বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন। মাতামুহুরী নদী ও বমু খালের কুলে গড়ে ওঠা বিলছড়ি এলাকাটি একটি প্রাচীন জনপদ। চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে দূরবর্তী হওয়ায় বরাবরই স্বাভাবিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এই ইউনিয়নের জনসাধারণ। নেই কোন সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক ও পুলিশ স্টেশন। এই দূর্গমতাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে চড়া সুদের দাদন ব্যবসা করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করেছে চি‎িহ্নত কয়েকজন সুদি মহাজন।

গজালিয়া ইউনিয়নের গতিরাম পাড়ার নকুল চন্দ্র ত্রিপুরা, হানিচরণ ত্রিপুরা, বুড়ি ঝিরি গ্রামের মোঃ ইউনুচ, মোঃ সেলিম, বদু ছড়া এলাকার রাজন ত্রিপুরা, আকিরাম পাড়া গ্রামের জীবাদুর ত্রিপুরা, বমু পাদুখোলা গ্রামের জহির আলম সহ অনেকে জানিয়েছেন, বমু ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ফইজ্জাখোলা এলাকার গুরা মিয়ার ছেলে মোঃ রফিক এর চড়া সুদে দাদন এবং মহাজনী কারবারের কারণে ৫/৬শত লোক সর্বশান্ত। চড়া সুদের কারবার করে মোঃ রফিক বর্তমানে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার মালিক। বর্তমানে এই ৫/৬ কোটি টাকা এলাকায় দাদন হিসেবে লাগিয়ত করে মহাজনী ব্যবসা দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার সহজ সরল লোকদের আর্থিক দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প নিয়ে দাদনের টাকা প্রদান করে। লোকজন গ্রহণকৃত টাকা ফেরত দিলেও তাদের নিকট হতে গ্রহণকৃত স্ট্যাম্প ফেরত দেয়না। সুযোগ বুঝে স্ট্যাম্পে মনগড়া টাকার অংক বসিয়ে এবং ক্ষেত্রমতে জায়গা জমি ক্রয় বিক্রয় ও বন্ধক দলীল লিখে নিরহ লোকদেরকে হয়রানী করে আসছে। বর্তমানে তার নিকট ৫শতাধিক ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্প রয়েছে বলে ভুক্তভোগী লোকজন দাবী করেছেন।

গজালিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আকিরাম পাড়ার জীবাদুর(৫৫) বলেন, মোঃ রফিক থেকে আমি ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। এর বিপরীতে আমাকে ১লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল। টাকা দিতে দেরী হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে লামা থানায় মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানী করে।

গজালিয়া ইউনিয়নের বদু ছড়া এলাকার রাজন ত্রিপুরা(৫৬) বলেন, আমি মোঃ রফিক থেকে ৮ মাস আগে ১লক্ষ টাকা নিয়েছি। প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়। ইতিমধ্যে ৪০ হাজার টাকা সুদ দিয়েছি।

বুড়ি ঝিরি এলাকার মোঃ ইউনুচ (৪০) জানায়, আমি ব্যবসা করতে সুদের উপর ১ লক্ষ নিয়েছিলাম। ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পরেও আমি রফিকের টাকা ১বছরের মধ্যে ফেরত প্রদান করি। কিন্তু সে ১ বছরের সুদ ৬০ হাজার টাকার জন্য আমাকে মারধর করার হুমকী দিচ্ছে। লামা বাজার গেলে আমার হাত-পা ভেঙ্গে দিবে বলে জানায়। আমাকে এখন তার হুমকির কারণে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

বুড়ি ঝিরি গ্রামের মোঃ সেলিমের স্ত্রী ইয়াছমিন (২১) আক্তার বলেন, আমার স্বামী বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে মোঃ রফিক থেকে ২০১৩ সালে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলাম। ২ লাখ টাকার সুদ বছরে ৬০ হাজার টাকা। ১ বছরে ৬০ হাজার টাকা সুদ প্রদান করেছি। আরো ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা সুদের দাবীতে মোঃ রফিক আমার নিকট থেকে জোর পূর্বক ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে মোঃ রফিক বলেন, মানুষ বিপদে পড়লে আমি টাকা প্রদান করি। বমু বিলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতলব জিজ্ঞাসায় জানিয়েছেন, মোঃ রফিক সুদি ব্যবসা করে। চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, জনগণকে হয়রানী করার বিষয়ে যথাযত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: