ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

বঙ্গবন্ধু’র সোনার বাংলা গড়তেই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচারণে চকরিয়ার মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম মওলা

ছবির ক্যাপশন: স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করছেন চকরিয়ার মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম মওলা।

chakaria-picture-14-12-2016চকরিয়া অফিস:

৫৪যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করার পরও তৎকালিন পাকিস্তান সরকার ক্ষমতায় বসতে দেয়নি বাঙ্গালীদের। এভাবে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ব হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যাপিয়ে পড়ি। ৫২’ সালের ভাষা আন্দোলন ও ৭১’ এর ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ষের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা কিছু পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র সোনার বাংলা গড়ার জন্য এবং পাকিস্তানী শোষণের হাত থেকে মুক্তির জন্য আমরা যুদ্ধে করেছিলাম। এখনো সেই সোনার বাংলা আমার দেখতে পারছি না। কারণ এখনো স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত কাজ তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আমাদের ভয় হয়, স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। এজন্য সজাগ থাকতে হবে সবাই। চকরিয়া উপেজলার ফাশিয়াখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ১নং প্লাটুনের ১নং সেকশনের টু-আইসি বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম মওলা ৭১’সালের মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ৯মাস যুদ্ধে আঘাত প্রতিঘাত, আহার-অনাহারে, রাত-দিন পাহাড় পর্বত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। দেশ স্বাধীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, ভাতার জন্য যায়নি। মুক্তিযোদ্ধার ভেতরে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি লুকিয়ে আছে বলে দাবী করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম মওলা।

গোলাম মওলা তার স্মৃতিচারণে আরও বলেন, কক্সবাজার জেলার মরিচ্যা পালংয়ের স্থায়ী বাসিন্দা ক্যাপ্টেন (অব:) আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। ২৫ই মার্চ কাল রাতে নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মটর সেল নিক্ষেপ করলে বাঙ্গালী সৈনিক চত্রবঙ্গ হয়ে পড়ে। বাঙ্গালী সৈনিকরা ভারী অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে নিরাপদস্থান বার্মায় স্বরনার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন ক্যাপ্টেন (অব:) হারুনের নির্দেশে স্বরনার্থী ক্যাম্পে বিডিআর, আর্মি সংগ্রহ করে পূনরায় দেশে প্রবেশ করি।

নাইক্ষংছড়ি উপজেলার ডেকিবনিয়া এলাকায় অবস্থান করি। ওইএলাকার ছাত্র-যুব ও কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উখিয়ার রতœাপালন ইউনিয়নের সমশের আলম চৌধুরী হোয়াইকং ইউনিয়নের আলি মিয়া চৌধুরী স্থানীয় একটি পুকুরে ১৫টি রাইফেল রয়েছে বলে দেখিয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধাদের। আমরা ওইসব অস্ত্র ব্যবহারের উপযোগি করে অগ্রসর হই রামুর দিকে। জোয়ারিয়ানালা ব্রিজে ৫জন রাজাকারকে ধরে ফেলি। তাদের কাছ থেকে ২টি রাইফেল ও ৮৫রাউন্ড গুলি উদ্ধার করি। এরপর জোয়ারিয়ানালা থেকে ঈদগাঁও ব্রিজে আসলে বেশকজন রাজাকার পালিয়ে যায়। ওইসময় তাদের ফেলে যাওয়া ৯৫রাউন্ড গুলি উদ্ধার করি। ২২ নভেম্বর দ্বিতীয় বার ঈদগাও ব্রিজ এলাকায় ফিরে আসি। ঐদিন ১২টায় ঈদগাও এর উদ্দেশ্যে রওনা হই। পাহাড় পর্বত অতিক্রম করে ঈদগাও এর পূর্বে পার্শ্বে বমোরিয়াঘোনার ব্রিজে চারটি প্লাটুনে বিভক্ত হই। তাহাদের প্রতিশোধ নিতে হানাদার বাহিনী ২৪ নভেম্বর ভোর ৬ ঘটিকার সময় ক্যাম্পে অদূরে পৌছে গিয়েছে। একটি ফায়ার করে আমাদের ওপিডি হইতে ২০০ গজ দূরে ও ওপিডি ৩ জন হইতে ১ জন ক্যাম্পে গিয়া ফায়ার কথা বলে। তখন ক্যাপ্টেন সোবহান হুকুম দিল আর্মস এমিনিশন যার যার হাতে ব্যাংকারে পড়, তুমুল ২ঘন্টা যুদ্ধে ভারী অস্ত্রের মূখে টিকতে না ফেওে সিগনালের ম্যাধ্যমে আমরা উড্রো করি। মুক্তিযোদ্ধের খাওয়ার পানি সরবরাহকারী লাব্রে মুরং কে জঙ্গলে পেয়ে রাস্তায় এনে গুলি করে মেরে ফেলে হানাদারবাহিনী। এরপর ধীরে ধীরে শত্রুমুক্ত হতে থাকে। মুরং লাব্রে মুরং এর সমাধিস্থান স্মৃতির জন্য বৌদ্ধভূমি করার জোর দাবি জানান তার সহকর্মী মুক্তিযোদ্ধারা।

পাঠকের মতামত: