ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

উখিয়ায় হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণ

87

ডাক্তার, নার্স, আয়া, নাইট গার্ড সবাই মিলে ১২/১৩জন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। চার সন্ত্রাসী দ্বিতীয় তলায় উঠে অস্ত্রের মুখে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেডে ভর্তিরত মায়ের সঙ্গে থাকা ৭ম শ্রেণির ছাত্রীকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় অপহরণের কিছুক্ষণের মধ্যে উদ্ধার করা হলেও ততক্ষণে ঐ স্কুল ছাত্রীকে সন্ত্রাসীরা গণধর্ষন করে। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ ঘটনায় সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।

সোমবার দুপুর ১২টা দিকে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১নং বেডে কথা হয় ডায়রিয়া আক্রান্ত সেই মায়ের সঙ্গে। সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আমার মেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় তার পিতার সঙ্গে অসুস্থ মাকে দেখতে আসে হাসপাতালে। ঘরে কেউ না থাকার কারণে স্বামী সোমবার রাতে জালিয়াপালং ইউনিয়নের নিজ গ্রামের বাড়ি চলে যায় হাসপাতালে মেয়েকে রেখে। তিনি আরো বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওয়ার্ড থেকে পার্শ্ববর্তী বাথরুমে যাওয়ার সময় হাসপাতাল করিডোর থেকে তার মেয়েকে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ও হাসপাতালের রোগীরা চেঁচামেচি শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ও নাইট গার্ডরা হাসপাতালের উত্তর পাশের বাউন্ডারি ওয়াল সংলগ্ন কবরস্থান থেকে রাত ১টার দিকে বিবস্ত্র অবস্থায় ঐ কিশোরী স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বলে স্থানীয় উদ্ধারকারী নজরুল সহ কয়েকজন জানায়।

ঐ কিশোরীর পিতা বলেন, একটি সরকারি হাসপাতালে সব কিছু থাকার পরও কি করে সন্ত্রাসীরা হাসপাতালের ২ তলা উঠে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে সর্বনাশ ঘটাল এবং এর এর সুষ্ঠু বিচার পাব কিনা জানিনা। সোমবার সকালে সন্ত্রাসীরা হাসপাতালের বেডে এসে আমার স্ত্রীকে এই ঘটনায় কোন ধরনের বাড়াবাড়ি করলে শেষ করে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। এ কারণে মেয়েকে দ্রুত বাড়িতে নিয়ে আসি। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীকে নিয়ে দুপুরে ঘরে চলে আসি।

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা সরওয়ার কামাল পাশা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের জঘন্য ঘটনার সাথে প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন উক্ত হাসপাতালে রোগী, সংশ্লিষ্ট আত্মীয় স্বজন বিশেষ করে মহিলাদের কোন নিরাপত্তা নেই। সন্ত্রাসীরা সর্বদা তাদের উত্যক্ত করে বিরক্ত করে থাকে। উদ্ধারে সহায়তাকারী স্থানীয় নজরুল কাশেম, আক্কাস, খাইরু, মুজিব সহ আরো কয়েকজন বলেন, আমরা দ্রুত খোঁজা খুঁজি করে মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পেরেছি। অন্যথায় আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা ছিল।

উখিয়া হাসপাতালের প্রধান সহকারী ফরিদুল আলম এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সোমবার রাতে হাসপাতাল এলাকায় সরকারি দুইজন, আইওএম এর দুইজন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দুইজন ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসের একজন আনসার ও ভিডিপি সদস্য সহ মোট সাত জন নাইট গার্ড কর্মরত ছিল। এত নিরাপত্তার পরও কিভাবে সন্ত্রাসীরা হাসপাতাল থেকে রোগীর মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করলো এবং ঘটনার সম্পর্কে নাইট গার্ডরা কাউকে কিছু জানালো না তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

উখিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া হাসপাতালের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানান।

ঐ রাতে উখিয়া হাসপাতালে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তার আরিফা মেহের রুমী হাসপাতাল থেকে কিশোরী উঠে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন থাকায় হাসপাতালের কোয়াটার ছেড়ে কক্সবাজার আসা যাওয়া করতে হচ্ছে।

উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, ঘটনার সম্পর্কে জানতে পেরে কয়েক দফা পুলিশ অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কোন অভিযোগ না আসলেও অতি দ্রুত সন্ত্রাসীদের আটকের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাক্তার মিজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কিশোরী পরিবারকে যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।-ইত্তেফাক/

পাঠকের মতামত: