ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

baitusজামাল জাহেদ, কক্সবাজার :
কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ডাঃ মুশফিকুর রহমানের ভুল চিকিৎসায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবার বদলে বিগত কয়েক বছরে অন্তত শতাধিক রোগীর চিরতরে চক্ষু নষ্ট হয়ে অন্ধত্ব বরণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

দৃষ্টিশক্তি হারানো ওইসব রোগীদের এখন দুর্বীসহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অনেকে চট্রগ্রাম জেলার চক্ষু চিকিৎসার সর্বোচ্চ সুচিকিৎসার কেন্দ্রস্থল পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসারত বলে জানা যায়।

জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে চক্ষু চিকিৎসার নামে প্রকাশ্যে এই ধরনের ব্যবসা চালানো হলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের অভাবে প্রতিনিয়ত অসংখ্য রোগী প্রতারিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আর ররোগীর পরিবারের অভিযোগসুত্রে জানা যায়,জন্নাতুল মোস্তফা নামে এক রোগীর ছানি অপারেশন করে ১৪হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়, ৭দিন যেতেইই চোখে আর কিছু দেখেনা।

পুনরায় রোগীকে দেখাতে আসলে ২শত টাকা ফি নিয়ে ইনফেকশন বলে চট্রগ্রামে রেফার করে দেয়। সাথে ব্যথা বেশি জানালে ব্যথার কর্টন নামে ট্যাবলেট ৪টা এক সাথে খেতে বলে পরে হার্টের ব্যথায় রোগী অস্থির করাতে জরুরী হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। এই হলো ডাঃ মুশফিকুর রহমানের নামে বিচিত্র চোখের অপারেশন।

সাধারন চক্ষু রোগীরা তাদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে সেখানে ভূল চিকিৎসা ও ছানি অপারেশন করিয়ে প্রতারিত হয়ে আসছে প্রতিনিয়ত স্থানীয় জনগণ। কোন ধরনের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন দিয়ে অপারেশন করানো হয়ে থাকে তা সাধারন রোগীদের পক্ষে জানা সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। কেননা শুধু অর্থের লোভে অপারেশন করানোর জন্য যখন যাকে পাওয়া যায় তখন তার সাথেই কন্ট্রাক করা হয়।

ওই ক্লিনিকে নিজস্ব কোন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন না থাকায় কিছু ডাক্তার পরিচয়ে প্যারামেটিকস দ্বারা চক্ষু চিকিৎসা দেয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের জটিলতা দেখা দেয় বলে রোগীর অভিভাবকের অভিযোগ। ডাঃ মুশফিকুর মাসে একবার এসে দুদিন থেকে সাধারণ রোগীদের অপারেশন করে মোটা হাতিয়ে উড়াল দেয় বিমানে। শেষে অনেকে অন্য কোন চক্ষু বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয় ছানি রোগীদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে অতি নিম্নমানের লেন্স ব্যবহার, আবার লেন্স না লাগিয়েই শুধু সেলাই দিয়েই অপারেশন হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়।

অনেক সময় আলিকো লেন্সের নাম দিয়ে বিদেশী লেন্সের বিল ধরিয়ে দেয়। ভুল চিকিৎসায় দৃষ্টিশক্তি হারানো ও চক্ষু নষ্ট হওয়া অভিযোগকারী রোগীদের মধ্যে রয়েছেন, মহেশখালীর জন্নাতুল মোস্তফা, উখিয়ার রহিমা,খুরুশকুলের শাকের আহমদ সহ অনেকে। অপচিকিৎসায় দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা। ওইসব রোগীদের অনেকে চোখে তীব্র ব্যথায় অস্থির হয়ে উঠেন।

এদের মধ্যে অপচিকিৎসায় নষ্ট হওয়া অনেকের চোখ পযর্ন্ত তোলে ফেলতে হয়েছে। এ ছাড়া ইতোপূর্বে অনেকে ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল,চট্রগ্রাম পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল,জাতীয় চক্ষু ইনস্টেটিটিউট, চট্রগ্রামের শেভরনের আই কেয়ার সেন্টারসহ অসংখ্য হাসপাতালে ভর্তি বলে জানা যায়।

রোহিঙ্গা এক নাগরিককে চোখের এলার্জি রোগী বলে ভুয়া ভয় দেখিয়ে চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারনার মাধ্যমে সাড়ে আট হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার মতো গুরুত্বর অভিযোগ পাওয়া যায়। জব্বারিয়া নামে বার্মার এক ধার্মিক লোকের দাতব্য চিকিৎসার নামে মাত্র অল্প টাকায় সুচিকিৎসক দ্বারা সুচিকিৎসা করা হয় এমন প্রচারে গলাকাটা বানিজ্য শুরু করছে।

আদৌও ব্যাক্তি মালিকানাধীন বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল সরকারের চোখ ফাকি দিঢে প্রতিনিয়ত সরকারী কোষাগার থেকে আদায় করে নিচ্ছে বছরে কোটা কোটি টাকা, যার কোন বৈধ পন্থা নেই।স্থানীয় অনেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সুষ্ঠ তদন্ত পুর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।

বায়তুশ হাসপাতালে রোগী ফুঁসলিয়ে আনার জন্য তাদের রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। সহজ-সরল রোগীদের টার্গেট করে বিভিন্ন উপজেলায় লোক দেখানো চক্ষু ক্যাম্প বসিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসার নামে টেকনিশিয়ান দ্বারা প্রতারনামূল ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ওইসব রোগীদের নিয়োগকৃত দালাল দ্বারা অতি কৌশলে স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে চক্ষু রোগীদের ফুসলিয়ে জেলা শহরে বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালে আনার পর নানা কৌশলে অপারেশনের নামে মোটা অর্থ আদায় করে থাকে। যা বিভিন্ন সময় খবর প্রচারিত হয়েছে।

ইতোপূর্বে বিভিন্ন উপজেলা থেকে চক্ষু রোগীদের ফুঁসলিয়ে নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্স করে নিয়ে আসে তাদের নিয়ন্ত্রনে। পরে শুরু হয় চিকিৎসার নামে টাকা আদায়ের নতুন কৌশল।

ভুল চিকিৎসায় চক্ষু নষ্ট হয়ে যাওয়া কবির আহমদ তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমার ডান চোখে ছানি অপারেশনের জন্য বায়তুশ শরফে ফি বাবদ সাড়ে আট হাজার টাকা আদায় নিয়েছিলো কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, তাদের ভুল চিকিৎসায় চিরতরে আমার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার টাকা ও চোখ দুটোই গেল। অন্য এক ডাক্তার দেখানোর পর নষ্ট চোখ তুলে ফেলার জন্য বলেছিলেন, কিন্তু টাকার অভাবে পারছিনা। এই অপচিকিৎসার বিচার কার কাছে চাইবো।তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গরীব মানুষের কথা কেউ শুনতে চান না।

একই অভিযোগ, চিকিৎসার নামে টাকা নেয়ার পরেও অনেকের অপচিকিৎসায় তাদের চোখ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তারা আর কোনদিন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন না। অনেকে নষ্ট হওয়া চোখের অসহ্য ব্যথা-যন্ত্রনায় কাতর হয়ে পড়েন। ক্ষুদ্ধ রোগী ও তাদের স্বজনরা অর্থলোভী দাতব্য চিকিৎসার নামে কসাইখানা বায়তুশ শরফ কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘আশ্চর্য না হয়ে পারিনা চক্ষু চিকিৎসার নামে জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে এইসব কি হচ্ছে। তা দেখার কি কেউ নেই? জন স্বার্থে অবিলম্বে ওই ক্লিনিক সীলগালা করে তাদের বিচারের আওতায় এনে প্রশাসনকে জরুরীভাবে পদক্ষেপ গ্রহন করার দাবি জানান তিনি। অপর আরেক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠা দাতার সুযোগ্য পুত্রের হাতে হাসপাতালের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। জোর পুর্বক স্থানীয় প্রভাবশালীরা সভাপতি সেজে বছরের পর নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে বায়তুশ শরফ নামে পরিচালিত সব প্রতিষ্টান যার কারনে এমন অবস্থা বলে জানান তিনি।

বিতর্কিত এই হাসপাতালের ডাক্তার পরিচয়দানকারী প্যারামেটিকস ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় চক্ষু নষ্ট ও অন্ধত্ব বরনের অভিযোগ হচ্ছে অহরহ। আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্র আর প্রযুক্তিনির্ভর অপারেশন থিয়েটার না থাকায় খোলামেলা এনালগ পদ্ধতিতে জটিল সব অপারেশন করছে জেলার রোগীদের। যা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালে যোগাযোগ করলে কামাল নামে একজন ফোনে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিবেদককে জানান, ডাঃ মুশফিকুর রহিম চিফ সার্জন তিনিই সব অপারেশন করেন। এবং স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে বলেই অনেকে উপকৃত হচ্ছেন এমন দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে ককসবাজার বায়তুশ চক্ষু হাসপাতালের চিফ সার্জন ডাঃ মুশফিকুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,হয়তো সব রোগী ভালো না হতেই পারে তবে আমি চেষ্টা করি চোখের আলো ফেরাতে। তবে সম্ভব না হলে চট্রগ্রামে পাটিয়ে দেন বলে জানান তিনি। আরেক প্রশ্নে ককসবাজার সিভিল সার্জনের অনুমোদনকৃত চক্ষু চিকিৎসার চিফ সার্জন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বায়তুশ চক্ষু হাসপাতালে চোখের অপারেশন করাতে সিভিল সার্জনের কোন অনুমতি দরকার হয়না বলে জানান তিনি। যদিও বাৎসরিক সময়ে হাসপাতালের রেনিউ করার সময় কাগজপত্র জেলা সিভিল সার্জন কে অবগত কররেন বলে নিশ্চিত করেন।

ককসবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ পুচা নু জানান, সরবারী চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ব্যতীত কোন চক্ষু হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া সম্পূর্ন বে-আইনী। এমনকি প্যারামাটিকস বা টেকনিশিয়ান দিয়ে কোন ক্লিনিক চালানো যায়না। এ ব্যাপারে কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে অবশ্যই ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে জানান তিনি।

 

পাঠকের মতামত: