ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

বাঁকখালী রক্ষায় ২০৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন

কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্পের অনুমোদ দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রথম পর্যায়ের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্বে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার শহরের নাজিরটেকের বাঁকখালী নদীর মোহনা থেকে রামুর কাউয়ারখোপ পর্যন্ত সাড়ে ২৮ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে। নদীর একপাশে ১৮ কিলোমিটার এবং অন্যপাশে ২০ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি করা হবে। বাকখালীর নদীর ১.০৮ কিলোমিটার এলাকার নদী শাসন কিংবা ভাঙ্গন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে বাংলাবাজার, মুক্তারকুল, উলুবনিয়া, মিঠাছড়ি, মিস্ত্রীপাড়া, হাইটুপি, মনিরঝিল ও সিকদার পাড়ার মারাত্বক ভাঙ্গন ঠেকাতে ‘নদী শাসন’ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৮ টি স্লুইস গেইট নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এগুলো নির্মিত হবে তারাবনিয়াছড়া, গোদারপাড়া, আলী কদম ব্রিকফিল্ড, কুলিয়ারছড়া, ঘাট কুলিয়ার ছড়া, জয়নাল ছড়া, খতেখারকুল ও রামুর বড়ুয়া পাড়ায়। স্লুইস গেইট সংলগ্ন এলাকায় ১২ কিলোমিটার খাল খনন করা হবে। এছাড়া রামুর হাইটুপির যেসব স্থানে নদী শাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয় সেখানে ৮০০ মিটার ফ্লাট ওয়াল নির্মিত হবে।
প্রকল্পটি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। কক্সবাজারে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘বাঁকখালীর ড্রেজিং হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে কক্সবাজার শহরের মানুষ, এতে জোয়ার ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরে আসলে শহরের খাবার পানির স্তরের লবনাক্ততা হ্রাস পাবে, তাতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট কেটে যাবে। তাছাড়া ককসবাজার শহরের প্রতি বর্ষা মৌসুমে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় তা থেকে ককসবাজারবাসী পরিত্রাণ পাবে ও জেলাব্যাপী বন্যার প্রবণতা কমে যাবে। কক্সবাজারের নৌ-পর্যটনের বিকাশেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে। সেই সাথে নদী দু’পাশের অব্যাহত দখল ও ভূমিদস্যুতা হ্রাস পাবে।
তিনি বলেন, ‘বাকঁখালীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে প্রতি বছরই সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা। নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি, দীর্ঘ বন্যার কারণে শিশুরা পানিবাহিত রোগের শিকার হওয়া থেকে রেহায় পাবে। নাব্যতা না থাকায় বন্যার পানিও সহজে নামতে পারে না। প্রাকৃতিক দূর্যোগে একসময় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের নিরাপদ পোতাশ্রয় ছিল বাঁকখালী। কিন্তু নাব্যতা হ্রাসের কারণে সেই পোতাশ্রয় নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে বাকঁখালীর তীরজুড়ে অসংখ্য অবৈধ দখলদার অপরিকল্পিত স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। শহরের বর্জ্যে নদীর মারাত্মক দূষনের কারণে মাছের প্রজননসহ নদীর ইকোসিষ্টেম সম্পুর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং এতে নদী প্রবাহের স্বাভাবিক গতিপথ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বাঁকখালী নদীর ড্রেজিং হলে নদীর নাব্যতার ফিরে আসার পাশাপাশি মাছের প্রজনন বেড়ে শহরবাসীর প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পূরণ হবে।’
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, জেলার সর্বত্র অব্যাহত পাহাড় নিধনের ফলে বর্ষায় পাহাড়ি মাটি বাঁকখালীতে গিয়ে পড়ছে। নালা-নদর্মাগুলোকে মানুষ ব্যবহার করছে ডাস্টবিনের বিকল্প হিসেবে। এতে দিন দিন ভরাট হচ্ছে বাঁকখালী। এছাড়া বাঁকখালী নদীর তীরজুড়ে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরী করায় নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহে বিঘ্ন হচ্ছে। মাটি ও ময়লা-আবর্জনা জমে ক্রমাগতভাবে নাব্যতা হারাচ্ছে নদী। বাঁকখালীর ড্রেজিং অত্যডন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
সূত্রমতে, ২০১১ সালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার সফরে এসে কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালীর ড্রেজিংসহ নানা উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুসারে পরবর্তীতে কক্সবাজার পাউবো’র পক্ষ থেকে বাঁকখালীর নাব্যতা রক্ষায় নানা কর্মপরিকল্পনা সম্বলিত একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে সিদ্ধান্ত হয় ওই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আবার মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জানানো হয় পাউবো’র অধিনেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর প্রেক্ষিতে নতুন করে প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

পাঠকের মতামত: