ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

যেমন কর্ম তেমন ফল, যেমন সাংবাদিক তেমন সংবাদ

selimসেলিম উদ্দিন….

সংবাদ ও সাংবাদিক দু‘টি ভিন্ন শব্দ হলেও একটি আরেকটির পরিপূরক। একটি ছাড়া আরেকটি চিন্তাও করা যায় না। একটি আরেকটির সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে, যেমন দেহে ও রক্ত। সংবাদ আসলে কি এমন জিনিস বা এমন কি বিষয়? সংবাদের অভিন্ন কোন সংজ্ঞা নেই। তবে অনেকে বলে থাকে ইংরেজী চার দিকের নামের প্রথম অক্ষর গুলো মিলে সংবাদে শব্দের উৎপত্তি। আবার অনেকে বলে থাকেন যে, “নতুন কিছু” সংবাদ বা খবর। অর্থাৎ চারদিকের ঘটে যাওয়া সমস্ত নতুন ঘটনাই সংবাদ। সংবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে গুনী সাংবাদিক বলেছেন- সংবাদ হলো এমন কোন বিষয় যা সাংবাদিকরা লিখতে চান এবং পাঠকরা যার প্রতি আগ্রহ পোষন করেন। আবার অনেকে বলেছেন, সংবাদ হচ্ছে এমন কোন বিষয় যা শুনলে চোখের ভ্রু নড়ে উঠে ও বিবেককে নাড়া দেয়। সংবাদ সম্পর্কে উপরের তথ্য হতে কিছুটা হলেও ধারনা পেলাম যে, সংবাদ আসলে কি? সংবাদ কেমন হওয়া চাই । কিন্তু বর্তমানে এমন সংবাদ খুব সম্ভবত কম- ই দেখে বা শুনে থাকি। মূলতঃ কেন আমরা এখন আর বস্তু নিষ্ঠ সংবাদ দেখতে , পড়তে ও শুনতে পাইনা ? তারও যথাযথ কারন রয়েছে। তার মূল কারন হচ্ছে সাংবাদিক!

উপরের একটি সংজ্ঞাতে লিখেছিলাম সংবাদ হলো এমন কোন বিষয় যা সাংবাদিকরা লিখতে চান এবং পাঠকরা পড়তে আগ্রহ পোষন করে। এই সংজ্ঞাটি বিশ্লেষন করে বলতে পারি যে, সাংবাদিক হচ্ছে একজন লেখক, যিনি এমন সংবাদ লেখেন যা পড়তে পাঠকরা আগ্রহ পোষন করে। অন্য কথায় বলা যায়, যিনি সংবাদ সংগ্রহ করে সুবিন্যস্ত ভাবে পরিবেশন করেন তাকে সাংবাদিক বলে। উপরোক্ত সকল আলোচনার সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষনের সারমর্ম হিসাবে সাংবাদিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে নিদ্বিধায় বলতে পারি যে সাংবাদিক হল আমাদের চারপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী যা স্বচক্ষে অবলোকন করে যিনি সম্পূর্ণ বস্তনিষ্ঠতা বজায় রেখে যথাযথ প্রমান স্বাপেক্ষে পাঠক সমক্ষে পরিবেশন করেন। কেন সাংবাদিকের এমন দূরাবস্থা। অথাৎ বর্তমান সময়ের সংবাদ গুলো বস্তুনিষ্ট ও পাঠক নন্দিত হচ্ছেনা। তার মূল কারন হচ্ছে হলুদ সাংবাদিকতা । হলুদ সাংবাদিকরা কখনই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারে না। কথায় আছে যেমন কর্ম তেমন ফল। আমি এই কথাটির সাথে তাল মিলিয়ে বলতে চাই , যেমন সাংবাদিক তেমন সংবাদ। অর্থাৎ সাংবাদিকের যেগ্যতা , অভিজ্ঞতা ও কলাকৌশলের উপর সংবাদ যর্থাথ বস্তুনিষ্ঠতা পাবে এবং পত্রিকাটি ও পাঠক নন্দিত হবে।

কক্সবাজারে তালিকা অনুযায়ী দেখা যায় বর্তমানে আঞ্চলিক পত্রিকার সংখ্যা ১৮। সাপ্তাহিক, পাক্ষিক , মাসিক ও ষন্মাসিক পত্রিকার সংখ্যা ৪। ম্যাগাজিন ৩ এবং অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা ৫৫। যার ফলে সাংবাদিক বেড়েই চলছে কিন্তু বাড়ছে না সাংবাদিকদের কর্মদক্ষতা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আজকাল দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠছে। যে কারনে দেখা যাচ্ছে শিক্ষিত ও প্রতিভাবানরা এখন এ পেশায় আর আসতে চায়না । শুধু এ কারনটিই নয় আরো অনেক কারন রয়েছে, যার কারনে সাংবাদিকতা পেশাটিকে মানুষ এখন আড় চোখে দেখে এবং প্রতিভাবানরা এ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সংবাদের মান এবং মানুষ ক্রমেই সংবাদপত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সাংবাদিক মানে জাতির বিবেক কিন্তু বর্তমানে সাংবাদিকদের বিবেক কতটুকু আছে ? সাংবাদিকদের অবস্থা ক্রমেই এরূপ হতে থাকলে একদিন হয়তো সত্যিকারের যারা সাংবাদিক তাদেরকে এ মহান পেশায় আর পাওয়া যাবে না । মানবতার কল্যানে মহান এ পেশাটি কলুসিত হতে থাকবে । সাংবাদিকগন হারাবে তাদের মান সম্মান, খাবে রাস্তা ঘাটে মার , হবে নির্যাতিত। এখন খবরের কাগজ হাতে নিতে না নিতেই দেখা যায় সাংবাদিক নির্যাতিত হচ্ছে, মার খাচ্ছে। আর এই সবের মূল কারন-ই হচ্ছে সাংবাদিকদের দলে দলে বিভক্ত হওয়া ও যোগ্য সাংবাদিগের অল্পতা। ফলে একদল সাংবাদিক মার খাচ্ছে, আরেকদল সাংবাদিক দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে। এই হলো স্বাধীনতা ও স্বাধীন পেশা সাংবাদিকতার চিত্র। সংবাদ ও সাংবাদিক আজ অনেকাংশেই সন্ত্রসীদের কাছে জিম্মি । প্রায় প্রতিদিন-ই সাংবাদিক নির্যাতনের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। এভাবেই সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত নির্যতিত হচ্ছে পুলিশ, সরকারীদল ও বিরোধীদলীয় ক্যাডাদের হাতে । এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন তা নিয়ন্ত্রনেরও কোন উপায় থাকবেনা। সংবাদ পত্রের কন্ঠরোধ হলে রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বড় ক্ষতির সমক্ষীন হতে হবে। তার কারন সংবাদ পত্রের মাধ্যমে বা সংবাদের মাধ্যমে সরকার বা রাষ্ট্র জানতে পারে যে, দেশের কোথায় কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। আর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে সমস্যটি কাটিয়ে উঠা সম্ভব। কথায় আছে অসির চেয়ে মসির শক্তি বেশী।

লেখক: সেলিম উদ্দিন, সম্পাদক ও প্রকাশক- সাপ্তাহিক আলোকিত ঈদগাঁও (প্রস্তাবিত) ।

পাঠকের মতামত: