ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কুতুবদিয়া পাড়ার ৫২ জেলে এখনো নিখোঁজ

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
১২ দিন আগে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিল কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া গ্রামের হারুন। সঙ্গী ছিল এফবি সাজ্জাদের আরো ২৮ জেলে। রওয়ানা দেওয়ার দুদিন পরেই  প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়ে  সেই নৌকাটি। তখন থেকেই নিখোঁজ ২৬ বছর বয়সী  হারুন ও তার সঙ্গীরা। সেই থেকেই হারুনের হদিস পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে  বৃদ্ধ বাবা-মা, ভাই বোন ও প্রিয়তমা স্ত্রী। ঘুরছে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু কেউ তার সন্ধান দিতে পারছে না। ছেলের পথ চেয়ে দূর সাগরের পানে তাকিয়ে সময় কাটছে বৃদ্ধ বাবা- মায়ের ।
স্বামীর শোকে কাতর খুরশিদা আকতার জানান, সংসারে বৃদ্ধ বাবা- মা। একমাত্র উপার্জনকারী স্বামীও নিখোঁজ। তার উপরে তিনি অন্ত: সত্বা।  কিন্তু তার প্রিয়তম স্বামী বেঁেচ আছেন কিনা মরে গেছেন তাও তিনি জানেন না। কি করবেন , কোথায় যাবেন , কোথায় গেলে তার স্বামীর সন্ধান মিলেবে এর উত্তর খুজছেন জনে জনে।
শুধু এক হারুনের পরিবার নয় প্রিয়জনের পথ চেয়ে বসে আছে কক্সবাজার পৌরসভার কুতুবদিয়া পাড়া গ্রামের ৫২ টি পরিবার। এসব পরিবারের সকলের জিজ্ঞাসা তাদের প্রিয়জন বেঁেচ আছেন তো।  প্রিয়মুখের জন্য তাদের আর্তনাদে বিষাদের ছায়া নেমেছে পুরো গ্রামে। ভোর রাতে ওইসব পরিবারের আহাজারিতেই জেগে উঠছে প্রতিবেশীরা।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল জানান, ২২ দিনের সরকারী নিষেধজ্ঞা শেষে ৩ নভেম্বর কক্সবাজার থেকে শতাধিক মাছ ধরার নৌকা সাগরে যায়। এরই মধ্যে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দূর্যোগে সাগরে নিখোঁজ হয় ৫ টি ট্রলার। তার মধ্যে ২ টি নৌকা ফিরে আসলেও এখনো ৩ টি ট্রলারের হদিস মিলেনি। এর মধ্যে নিখোঁজ এফবি সাজ্জাদ, এফবি সুমী আকতার রেশমী ও এফবি জায়েদ উদ্দিনে কুতুবদিয়া পাড়ার ৫২ জন মাঝিমাল্লা রয়েছে। যাদের সন্ধান এখনো মিলেনি।
তিনি আরো জানান,৩ টি মাছ ধরার নৌকা ৭৪ জন জেলে নিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। নৌকা মালিকরা এব্যাপারে সদর থানায় নিখোঁজ ডায়েরী ও জেলা প্রশাসকের কাছে ৩ টি আলাদা তালিকা দিয়েছেন।  তালিকামতে, শহরের ২ নং ওয়ার্ডের ৬ নং ঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. কামাল হোসাইনের মালিকানাধীন এফবি সাজ্জাদের ২৯ জন  মাঝি-মাল্লা নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ জনই কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কুতুৃবদিয়াপাড়ার বাসিন্দা। তারা হলেন, শামসুল আলম বহদ্দারের ছেলে নুরু ছৈয়দ মাঝি, রশিদ আহমদের ছেলে ছৈয়দ ও তার সহোদর আব্দুস শুক্কুর, আবুল মুছার ছেলে মুফিজ, আবদুল মালেকের ছেলে মো. গুন্নু, ছালামত উল্লাহ’র ছেলে আজম, সৈয়দ নুরের ছেলে দুদু মিয়া, ছালেহ আহমদের ছেলে মিন্টু, আনোয়ার হোসেনের ছেলে সেলিম, জকির আলমের ছেলে এরশাদ, জামাল হোছেনের ছেলে মোহাম্মদ নুর,  আবুল হোসেনের ছেলে মুসলিম উদ্দিন,  মৃত আবুল খায়েরের ছেলে শাহাদাতুল করিম, আবুল কালামের ছেলে সোনা মিয়া, শামসুল আলমের ছেলে  হারুন, মো. হাসানের ছেলে মো. ইসমাঈল, নুরুচ্ছফার ছেলে ইউনুছ,  মো. হোসেনের ছেলে আজিম (২) এবং দেলোয়ার।
শহরের এন্ডারসন রোড়ের অধিবাসী আবুল হোসেনের মালিকানাধীন এফবি সুমি আকতার রেশমীর ২৬ জন জেলে এখনো নিখোজ রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯ জন মাঝি মাল্লা পরিবার সহ বসবাস করেন শহরের কুতুবদিয়া পাড়ায়। তারা হলেন, নিবাসী মৃত ইলিয়াছের ছেলে মিনহাজ উদ্দিন (মাঝি), মৃত গোলাম মাবুদের ছেলে মো. মানিক, মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে আলী হোসেন, আকবর আলীর ছেলে নুর বাদশা, ছৈয়দ আহমদের ছেলে আতা এলাহী, জাফর আহমদের ছেলে আনোয়ার, শাহাজাহানের ছেলে আমির হোসেন, মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মাহাম্মদ উল্লাহ, মো. কালু মিয়ার ছেলে মো. ইলিয়াছ, মৃত সুলতানের ছেলে নুরুল ইসলাম, মাহাম্মদুল করিমের ছেলে মো. হাছন, আবুল কাসেমের ছেলে আবদুল আমিন, নুর মোহাম্মদের ছেলে নুরুল আলম, আবু ছৈয়দের ছেলে মুজিবুর রহমান, মো. শাহাজানের ছেলে এরফান,  নুরুচ্ছফার ছেলে নুরুজ্জামান, মো. ইউছুপের ছেলে মো. ছিদ্দিক, মো. হানিফের ছেলে মো. হোসেন, আলী আহমদের ছেলে মো. সাইফুল।
শহরের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক মাঝির মালিকনাধীন এফবি জায়েদ উদ্দিন ৩ নভেম্বর থেকে ১৯ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৪ জনই কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা । তারা হলেন, মৃত অলি আহমদের ছেলে মোক্তার মাঝি, হাজী জামাল উদ্দিনের ছেলে মো. রুবেল, জামাল উদ্দিনের ছেলে মো. আবু হানিফ, আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুর রহিম, মোজাহের মিয়ার ছেলে শফি আলম, ফেরদৌসের ছেলে মো. লেডু, জাবেরের ছেলে সিরাজ, বাদশা মিয়ার ছেলে ছাদেক, গোলালুর রহমানের ছেলে আকতার, মহিউদ্দিনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, ওমর আলীর ছেলে জকরিয়া, মো, হোসেনের ছেলে রুহুল আমিন, আবুল হোসেনের ছেলে মো. ইউনুছ এবং কবির।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক দূযোর্গের কবলে পড়ে কক্সবাজার জেলার শতাধিক জেলা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি প্রশাসনকে সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছেন নিখোঁজদের সন্ধান নিতে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের কোন তালিকা না থাকলেও তাদের পক্ষ থেকে মৎস্য অধিদপ্তরে হদিস বিহীন ট্রলারের নাম উল্লেখ করে তালিকা পাঠানো হয়েছে। তাদের সন্ধানের জন্য নৌ বাহিনীকে অভিযান চালাতেও অনুরোধ করা হয়েছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, নিখোঁজদের সন্ধান পেতে প্রশাসন সর্বাত্বক চেষ্টা করছে।

পাঠকের মতামত: