ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

৪ নাইজেরিয়ানের লটারি প্রতারণা

40323_f1অনলাইন ডেস্ক ::

‘ডিয়ার কাস্টমার, কনগ্রাচুলেশনস। ইউর মোবাইল নাম্বার ওন ফাইভ লাখ পাউন্ড অ্যান্ড ৫১ ইঞ্চি এলইডি টিভি ফ্রম স্যামসং লটারি, টু ক্লেইম সেন্ট ইউর নেইম, সেক্স, এজ, মোবাইল নাম্বার অ্যান্ড এড্রেস টু …’ পুরস্কার পাওয়ার বিষয় জানিয়ে এমন এসএমএস আসে নাদিয়া রহমানের ফোনে। একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর স্ত্রী নাদিয়া বেশ উৎফুল্ল। এমন একটা অপ্রত্যাশিত উপহার পাবেন তিনি তা ভাবতেই পারেননি। উপহারটি গ্রহণ করে সবাইকে চমকে দিতে চান এই নারী। তাই বিষয়টি গোপন রাখেন। এসএমএস এর সেন্টার নম্বরে কল দিয়ে কথা বলেন। শুদ্ধ ইংরেজি ব্যবহার করে অপর প্রান্ত থেকে কথা বলা হয়। বিশ্বাস দৃঢ় হয় নাদিয়ার। যথারীতি ওই মেইলে নিজের নাম, ঠিকানা, বয়স প্রেরণ করেন। তারপর মাত্র একদিনের ব্যবধান। প্রত্যাশিত সংবাদটি পান তিনি। আরো একটি এসএমএস। জানানো হয়, তার নামে একটি পার্সেল এসেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। নির্ধারিত ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে কাস্টমসের কাছ থেকে পুরস্কারের পার্সেলটি ডেলিভারি করাতে অনুরোধ করা হয়। এজন্য একটি বিকাশ নম্বর দেয়া হয়। এই খবর পেয়ে আনন্দের কমতি নেই নাদিয়ার। এসএমএস পাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠান তিনি। তারপরেই ঘটে মূল ঘটনা। ফোন নম্বরটি বন্ধ। কোনোভাবেই খোঁজ পান না পুরস্কার প্রদানকৃত কর্তৃপক্ষের। দু’চোখে অন্ধকার দেখতে পান। ছুটে যান শাহজালাল বিমানবন্দরে। না, কাস্টমসে নাদিয়ার নামে কোনো পার্সেল আসেনি। বুঝতে পারেন এক ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি।
শুধু নাদিয়া না। এরকম অনেকের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা মোবাইলফোন ব্যবহারকারীদের লটারির পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরকম একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। নাইজেরিয়ার এই চার নাগরিক হচ্ছে- কেলেসি প্রিন্স জন, নিকেম সামুয়েল আযুবুইক, ডেনিস ওকুদিরি ও ইব্রাহিম। এই চক্রের কাছ থেকে ১৪টি মোবাইলফোন, ২৪টি দেশি বিদেশি সিম, তিনটি ল্যাপটপ, পাঁচটি মডেম, পাঁচটি ক্রেডিট কার্ড, একটি ডেবিট কার্ড, ১৫ হাজার ৪৯০ নাইজেরিয়ান নায়রা, ৭০ হাজার ৮৫০ টাকা ও ১২০ ইউএস জব্দ করা হয়।
এ বিষয়ে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মাসুদ জানান, এটি একটি বিশাল চক্র। তারা বিভিন্নভাবে এদেশের মানুষকে প্রতারণা করছিল। মোবাইলফোনের লটারির নামে প্রতারণা করার অনেকগুলো অভিযোগ আসে র‌্যাবের কাছে। সম্মানিত এক ব্যক্তিকে একই কায়দায় এসএমএস করা হয়। তার কাছে যখন কাস্টমসের নামে বিকাশে টাকা চাওয়া হয় তখন সন্দেহ হয়। তিনি সরাসরি টাকা দিতে চাইলে প্রতারক চক্রের একজন জানায়, ফোনটি রোমিও এবং সে বিদেশে অবস্থান করছে। তাই তার সঙ্গে দেখা করা এখন সম্ভব না। বিষয়টি তিনি র‌্যাবকে অবহিত করেন।
অধিনায়ক তুহিন মাসুদ বলেন, বিকাশ নম্বরের সূত্র ধরে ওই বিদেশিদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। প্রযুক্তি ব্যবহার ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করা হয়। নজরদারি বাড়ানো হয় উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাড়ির দিকে। সেখানে শরিয়তপুর ডিপার্টমেন্টাল সেন্টারের বিকাশ এজেন্ট থেকে প্রতারণার টাকা সংগ্রহ করতো এই চক্র। সেখানেই সাদা পোশাকে অবস্থান নেন র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাবের পরার্মশে প্রতারণার ফাঁদে পড়া ওই ব্যক্তি টাকা সেন্ট করলে তা সংগ্রহ করতে গত রোববার সন্ধ্যায় সেখানে যায় প্রতারক চক্রের সদস্য ইব্রাহিম। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটক করে র‌্যাব।
র‌্যাব জানায়ম ওই বিকাশ এজেন্ট নম্বর ব্যবহার করে গত ৩০শে অক্টোবর থেকে ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত মোবাইলফোন গ্রাহকদের ১১ লাখ ২ হাজার ৩৮০ টাকা লুটে নিয়েছে এই চক্র। চক্রের নাইজেরিয়ান নাগরিক কেলেসি প্রিন্স জন ও নিকেম সামুয়েল আযুবুইক গত ১২ই অক্টোবর বাংলাদেশে আসে। তারা এদেশে এসেই এ চক্রের অন্য সদস্যদের যোগসাজশে এই প্রতারণার কাজ শুরু করে দেয়। তাদের মধ্যে সামুয়েলের কোনো  পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা এদেশে গার্মেন্ট ব্যবসা এবং ফুটবল খেলতে এসেছিল। এ বিষয়ে তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে র‌্যাবের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক তুহিন মাসুদ।

পাঠকের মতামত: