ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে মাদ্রাসা শিক্ষকের হাতে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণের শিকার

dorহেলাল উদ্দিন সাগর ও এম ইফতেখার জুয়েল :

কক্সবাজার জেলার ঝিলংজা সদর ইউনিয়নের লিংকরোড় মুহুরী পাড়ার মাসরাফিয়া তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক রুহুল আমিনের(২৭) হাতে চার মাস যাবত উপর্যুপরি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন উম্মে হাবিবা (রঃ) বালিকা মাদ্রাসার নুরানী বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী (নাম গোপন রাখা হল) (১১)। ধর্ষিতা ঐ এলাকার মৃত আবুল কাসেম ও নুর জাহান বেগমের কন্যা। ধর্ষক রুহুল আমিন উখিয়া থানার মরিচ্যাপালং ইউনিয়নের হলদিয়া পালং এলাকার আব্দুল গণির পুত্র।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় দুই বৎসর চার মাস পূর্বে রুহুল আমিন ঐ মাদ্রাসায় নুরানি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এই সুবাদে মাদ্রাসায় প্রাইভেট পড়ানোর নামকরে ধর্ষক রুহুল আমিন রাতে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিয়ত মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। এমতাবস্থায় ধর্ষক রুহুল আমিনের কু-নজরে পড়েন শিশু (নাম গোপন রাখা হল)। বিভিন্ন প্রলোভন ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শপথের দোহাই দিয়ে শিশুটির সতীত্ব নষ্ট করে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করতে থাকেন রুহুল আমিন। ধর্ষণের এক পর্যায়ে শিশু (নাম গোপন রাখা হল) চার মাসের গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এই সংবাদ ধর্ষক রুহুল আমিন জানতে পারলে শিশুটিকে ফার্মেসী ডাক্তারের দেওয়া গর্ভপাতের ওষুধ সেবন করান। এতে কাজ না হলে ধর্ষক রুহুল আমিন শিশুটিকে বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে জোরপূর্বক গর্ভপাত (এম আর) করান। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সিএনজিতে করে মাদ্রাসার পাশে শিশুটির বাড়ির সামনে রেখে পালিয়ে যাই। শিশুটির রক্তক্ষরণ হতে দেখে তার মা নুরজাহান বেগম চিৎকার শুরু করেন। এর ফলে এলাকাবাসী মূল ঘটনা জানতে পারলে মাদ্রাসার পরিচালকের স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এলাকাবাসীর দাবী, বাচ্চা নষ্ট করার জন্য ধর্ষক রুহুল আমিনকে পাচঁ হাজার টাকা দিয়েছিল জোৎস্না বেগম। বর্তমানে জ্যোৎস্না বেগম ধর্ষিতার মাকে বিভিন্ন প্রলোভন ও হুমকি দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাতে মাদ্রাসায় প্রাইভেট পড়ানো মাদ্রাসা কমিটি ও সরকারীভাবে নিষিদ্ধ হলেও পরিচালকের বে-খেয়ালিপনার কারণে ধর্ষক রুহুল আমিন তা করতে পেরেছেন বলে জানা যায়।
ধর্ষক রুহুল আমিনকে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য পাচঁ হাজার টাকা দেওয়ার বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালকের স্ত্রী জোৎস্না বেগম বলেন, আমি বাচ্চা নষ্টের জন্য রুহুল আমিনকে কোন টাকা দিইনি। তার মা মেয়ের চিকিৎসার জন্য আমার কাছে বারবার টাকা চাওয়ায় প্রতিবেশী হিসেবে তাকে পাঁচ হাজার টাকা ধার দিই। তিনি আরোও বলেন এক শ্রেণীর মানুষ আমার মান ক্ষুন্ন ও দোষারোপ করার জন্য একান্তভাবে এসব গুজব রটাচ্ছেন।

 

ধর্ষক রুহুল আমিন বর্তমানে কোথায় আছেন জানতে চাইলে মাদ্রাসার পরিচালক ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী ঐক্যজোট কক্সবাজার জেলার সভাপতি হাফেজ সালামত উল্লাহ বলেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা ছিলাম বেশ কিছু দিন। এসে এই ঘটনা শুনার পর তার গ্রামের বাড়িতে নোটিশ পাঠিয়েছি। গত ৮/১১/২০১৬ইং তারিখে তার বাবা ও ভাইকে নিয়ে আসি। স্থানীয় সমাজের সভাপতি জাকের সিকদার ও সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আলমসহ সমাজের প্রায় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে সভা ডাকেন এবং সভায় রুহুল আমিনকে আগামী পাচঁ দিনের মধ্যে হাজির করতে তার বাবাকে নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানান মাদ্রাসার পরিচালক সালাম উল্লাহ। রাতে মাদ্রাসায় প্রাইভেট পড়ানো বিষয়ে পরিচালক বলেন, রাতে আমার মাদ্রাসায় কোন প্রাইভেট পড়ানো হয়না এবং তিনি (পরিচালক) ও মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
আজ পাচঁ দিন অতিবাহিত হলেও ধর্ষক রুহুল আমিনকে হাজির করাতে পারেননি সমাজ কমিটি।
মাদ্রাসায় রাতে প্রাইভেট পড়ানোর বিষয় পরিচালক অস্বীকার করলেও নির্যাতিত শিশুটি, সহপাঠী, তার মা ও এলাকাবাসী জানান রুহুল আমিন প্রতি রাতে মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলায় প্রাইভেট পড়াতেন।
এদিকে বাবা হারা শিশুটির কুড়ে ঘরে দু:খের ছায়া । শিশুটির মায়ের আর্তনাদ। মা নুর জাহান বেগম একটাই প্রশ্ন , এখন আমার মেয়ের কি হবেরে বাবা? খুব রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে মা’মনির। তিনি বলেন, যেখানে আমাদের থাকার মত পর্যন্ত কোন ভিটেমাটি নেই পরের জমিতে পলিথিন পেঁচিয়ে বাসা বেধে থাকি এবং মানুষের ঘরে ঘরে ঝি’য়ের কাজ করে সংসার চালাই সেখানে কি করে মেয়ের চিকিৎসা করব। তিনি বলেন জ্ঞান অর্জনের জন্য মেয়েকে মাদ্রাসায় দিয়েছিলাম কিন্তু এরকম সর্বনাশ হবে জানলে কখনওই মাদ্রাসায় মেয়েকে প্রাইভেট পড়তে দিতামনা। আমার মেয়ের যা হয়েছে তা যেন আর কোন মায়ের সন্তানের না হয়।
মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও গভীর সংকটে রয়েছেন নুর জাহান বেগম।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নারী সহায়তা কেন্দ্রের কক্সবাজার জেলার উপ- ব্যবস্থাপক এডভোকেট মিসেস রাফিয়া খাতুন বলেন, এরকম ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তিনি আরোও বলেন, এই বিষয়ে আমি তাৎক্ষণিক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যা যা প্রয়োজন তা তা করতে প্রস্তুত আছি।
ঝিলংজা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সোলতান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় যারা দোষী তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
এই বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বলেন, এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ধর্ষক রুহুল আমিনের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি জানান এবং সেই সাথে নির্যাতিত শিশুটির সুচিকিৎসা নিশ্চিতের ব্যবস্থার অনুরোধ জানান।

 

পাঠকের মতামত: