মোজাম্মেল হক বাবু কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার সন্তান। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের নির্মম আঘাতে একই পরিবারের ২২জন প্রাণ হারানো সেই পরিবারের এক জন মোজাম্মেল। তার বাবা হাজী এমদাদ উল্লাহ, মা মাজেদা বেগম, ভাই বোন সবাইকে হারান সে রাতে। ওই সময় ঝড়ের রাতে গাছের উপর আটকা পড়ায় কোন মতে প্রাণে বেঁচে ছিলেন তিনি। হতভাগা এই মোজাম্মেলের সেই দিন ভাগ্য বদলে যায় জাতির জনকের কন্যার হাতে পড়ে। কারণ তিনিই বুঝতেন সবহারানোর কত যন্ত্রণা। তাহার এমন অসংখ্য প্রমাণের নিরব স্বাক্ষী একজন মোজাম্মেল।
গণমানুষের নেত্রী বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা তৎকালিন সময়ে কক্সবজার বন্যাদূগত এলাকা দেখতে আসেন। পাশে দঁড়িয়ে ছিলেন দূঃখী মানুষের। ফিরে যাওয়ার পথে সবহারানো মোজাম্মেলকে নিয়ে যান ঢাকায়। তিনি তাকে তার বাস ভবনে আশ্রয় দেন। তিলে তিলে প্রাধানমন্ত্রীর আস্থা অর্জন করেন মোজাম্মেল হক। সেই ভয়াল রাতের প্রাণ ফিরে পাওয়া ছেলে আজ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে মোজাম্মেল নেত্রীর বাস ভবনের টেলিফোন রিসিভ, গাইডার, কেয়ারটেকারেরও দায়িত্ব পালন করছেন। এর ফাকে ফাকে সাংবাদিকতাও করেছেন তিনি। কাজ করেছেন দৈনিক নয়াবাংলা, দৈনিক সূর্যউদয়, দৈনিক মানবকন্ঠ পত্রিকায় । তাকে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী তৎকালিন সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সে রাতের নিরব স্বাক্ষী মোজাম্মেল বাবু শিরোনামে একটি রির্পোট করেছিলেন। ১৯৯১ সালে মোজাম্মেল কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগীরের সভাপতি ছিলেন। পারিবারিক জীবনে তিনি কক্সবাজরের রামু উপজেলার মুক্তিযুদ্ধা পরিবারের মেয়ে সুমিকে বিয়ে করেন। তাদের এক মাত্র মেয়ে মালিহা ইবনে নোহাকে নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ধানমন্ডি এলাকায় বসবাস করছেন।
এই দিকে গত কয়েক দিন ধরে তিনি কক্সবাজারের জেলা সদর হাসপাতালের বিছানায় কাতারাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক কুতুবী। তবে পাশে কেউ নেই। গত কিছু দিন আগে রামুতে শাইশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে হঠাৎ অসুস্থ পড়লে গত ৪ অক্টোম্বর ভোরে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ভর্তি হওয়ার পর থেকে তেমন ভাল চিকিৎসা পায়নি বলে অভিযোগ তুললেন মোজাম্মেল হক। ভালভাবে দেখতে আসেনি হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসকরা। খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে এসেও হাসপাতালের চিকিৎসার এমন বেহাল অবস্থায় বিমস্ময় প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা। তাকে দেখতে আসেনি হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক, আবাসিক মেডিকেল অফিসারও। এই হাসপাতালের রোগী সেবাসহ চিকিৎকসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিদেকের কাছে নানা প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
অপর দিকে তিনি আরো বেশি ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগসহ অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীর উপর। তিনি বলেন সেইদিন আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে ঢাকায় কক্সবাজারের আওয়ামীলীগ পরিবারের সদস্যদেরকে কম বেশি সহযোগিতা করেছেন। তৎসময়ে বিএনপির নির্যাতনে জেলার হুলিয়াপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা পালিয়ে ঢাকায় আশ্রয় নিলে অনেক জনকেই সহযোগিতা করেছেন মোজাম্মেল হক কুতুবী। তার অসুস্থতার খবরে কোন নেতাকর্মীদের পাশে না পাওয়ায় খুব বেশি দুঃখ পেয়েছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
পাঠকের মতামত: