ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আন্তর্জাতিক ভাবে নিষিদ্ধ ক্ষতিকর জাহাজ কাটা হচ্ছে সীতাকুন্ডের একটি ইর্য়াডে

jahazkataবশির আলমামুন, চট্রগ্রাম ঃ

আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক নিষিদ্ধ একটি জাহাজ সীতাকুন্ডের মাদাম বিবির হাট এলাকার সমুদ্র উপকূলে কাটা হচ্ছে।

ক্ষতিকর বর্জ্য ও অতিরিক্ত মাত্রায় বিষাক্ত তেজকস্ক্রিয়তায় পরিপূর্ণ পরিত্যক্ত ‘নর্থ সি প্রডিউসার’ নামের একটি জাহাজ (অয়েল ট্যাংকার) নিয়ে বিপাকে পড়েছে জনতা শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ড চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের একটি জাহাজ ভাঙ্গার প্রতিষ্ঠান।

গত ১৪ আগষ্ট আর্ন্তজাতিক ভাবে নিষিদ্ধ লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নর্থ সি প্রোডাকশন কোম্পানির মালিকানাধীন এ জাহাজটি বাংলাদেশে আসে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্বে বর্তমানে যেসব পুরোনো বিষাক্ত জাহাজ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ‘নর্থ সি প্রডিউসার’ নামের এ জাহাজটি। প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো এ জাহাজে বিপুল পরিমাণ ন্যাচারাল অকারিং রেডিও একটিভ ম্যাটেরিয়াল, সালফারসহ উচ্চ তেজস্ক্রিয় বিভিন্ন পদার্থ রয়েছে বলে এটিকে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।

জাহাজটির মালিক ডেনমার্কের মার্কস লাইন এ জাহাজটি বিক্রির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু জাহাজে উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর বর্জ্য থাকার কারণে এ জাহাজটি কেউ নিতে আগ্রহ দেখায়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে এ জাহাজটি বিক্রি করতে তারা সফল হয়। জাহাজটি কিনে নেয় চট্টগ্রামের শিল্পপতি ইয়াসিন আলী। তার জাহাজভাঙা শিল্পের ব্যবসা রয়েছে। জাহাজটি আন্তর্জাতিক শিপিং নীতিমালা অনুসারে বিক্রি করা যাবে না।

এ শর্ত ভঙ্গ করে বাংলাদেশে জাহাজটি বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে নেয় মার্কস লাইন কর্তৃপক্ষ। বিক্রির পর পরই এ জাহাজটি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থাগুলো এ জাহাজে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা সম্পন্ন বিপুল ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে বলে প্রচার করে।

তারা উল্লেখ করে, জাহাজটি কাটলে এখান থেকে ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় পদার্থ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে, যা জনজীবন ও পরিবেশের ক্ষতি করবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের সব সতর্কবার্তা আমলে না নিয়ে গত ১৪ আগস্ট ‘নর্থ সি প্রডিউসার’ বাংলাদেশে পৌঁছে। লন্ডনভিত্তিক নর্থ সি প্রোডাকশন নিষিদ্ধ এ জাহাজ বাংলাদেশের কাছে বিক্রির ব্যাপারে প্রথমে অস্বীকার করলে গত আগষ্ট সেপ্টেম্বর মাসে দুই দফা ডেনমার্কের স্বাধীন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও গবেষণা কেন্দ্র ‘ডেনওয়াচ’ কর্মীরা বাংলাদেশে এসে সীতাকুন্ডের জনতা শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ঐ জাহাজটি ভাঙ্গার দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করেন এবং নিশ্চিত হন। এরপর ক্ষতিকারক ঐ জাহাজ নিয়ে ডেনমার্কের টিভি চ্যানেল এবং সংবাদ পত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশে বিষাক্ত জাহাজ আমদানির বিষয়ে জানতে চাইলে বিষাক্ত এ জাহাজটির আমদানিকারক ইয়াসিন আলি বলেন, ‘এগুলো এনজিওদের কারসাজি। সঠিক নিয়ম মেনে জাহাজটি আমরা এনেছি। এখানে কোনো ক্ষতিকর জিনিস নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিপব্রেকিং বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এসব তৎপরতা চলছে।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার আবদুল্লাহ খান বলেন, ‘জাহাজটির কাগজপত্র ঠিক দেখেই ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি, পরিবেশ সার্টিফিকেট সব কাগজপত্র ছিল। আমদানি নীতিমালা অনুসারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সবকিছু করেছে।’

এদিকে, ‘নর্থ সি প্রডিউসার’ ভাঙা ঠেকাতে তৎপর রয়েছে এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফরম। তারা গত ২৬ অক্টোবর ব্রিটিশ পরিবেশমন্ত্রীর বরাবরে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, অবৈধভাবে জাহাজটি ভাঙার জন্য বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশে রফতানির বিষয়টি ব্রিটিশ সরকারের নজরে এনে এর জন্য মার্কসের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নর্থ সি প্রোডাকশন কোম্পানিকে দায়ী করেন তারা। ডেনমার্কের মার্কস এবং ব্রাজিলের তেল ও গ্যাস কোম্পানি ওডেব্রেকটের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এটা। অভিযোগে এনজিওটি জানায়, মার্কস এভাবে শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডেও বিষাক্ত বর্জ্যরে জাহাজ পাঠিয়েছে। এ কারণে মার্কস লাইনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।

পাঠকের মতামত: