ঢাকা,বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

পেঁপে চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন লামার কৃষক ।। প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা

da7120cb2e5c7af6b6063a6e82acf1bfলামা প্রতিনিধি ।।

পেঁপে চাষে স্বাবলম্বি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন লামার কৃষকরা। ক্ষতিকর তামাকের করালগ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে অনেকে এখন পেঁপে চাষে ঝুকেছেন। পেঁপে চাষে একজনের লাভ দেখে অন্যজন উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। পাহাড়ে উৎপাদিত পেঁপে গুণাগুণ ও স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলাউপজেলায় এর চাহিদা বেশি। যার ফলে পুরো উপজেলার পাহাড়ি ঢালু জমি ও সমতলে অসংখ্য কৃষক এখন পেঁপে চাষ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।

সূত্র জানায়, পাহাড়ি জনপদ পার্বত্য লামা উপজেলায় ৩ যুগের বেশি সময় ধরে আবাদি জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ হয়ে আসছে। তামাক চাষে গুটি কয়েক কৃষক লাভবান হলেও অসংখ্য কৃষক ক্ষতিকর এ তামাক চাষে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তামাক চাষে শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করে অনেক কৃষক বিকল্প চাষাবাদ শুরু করে। এসকল কৃষকের মধ্যে অনেকে পাহাড়ি ঢালু জমিতে পেঁপে চাষ শুরু করেছে। এ চাষের মাধ্যমে তারা আশানুরুপ লাভবান হওয়ায়, এখন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। পাকা পেঁপের ফল হিসেবে যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এতে আছে প্রচুর ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। পাহাড়ি পাথুরেবেলে মাটিতে পেঁপের চাষ ভালো হয়। সে হিসেবে ৪০ শতক জমিতে বছরে প্রায় ৫ হাজার থেকে ১০ হাজারটি পেঁপে উৎপাদন হয়। ফলে লামা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার হাটবাজারে বারো মাসই পেঁপে পাওয়া যায়। পেঁপে চাষ করে চাষিরা নিজের পরিবারে পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করছেন। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবেও এটির ব্যাপক চাষ শুরু হয়েছে।

লামা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নুরে আলম চকরিয়া নিউজকে জানান, পেঁপের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে এই এলাকায় স্থানীয় পেঁপে বেশি চাষ হয়। এছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উচ্চ ফলনশীল শাহী, রেড লেডি, থাইল্যান্ডিসহ আরও কয়েক প্রজাতির পেঁপে চাষ করছেন অনেকে। উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর দোআঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এছাড়া পরিচর্যা করলে সব ধরনের মাটিতেই চাষ সম্ভব।

উপজেলার রুপসী পাড়া ইউনিয়নের শিলেরতুয়া এলাকার পেঁপে চাষি উপহ্লা মার্মা চকরিয়া নিউজকে জানান, তিনি ৪শ’ পেঁপে গাছ লাগিয়ে প্রায় ১ লক্ষ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন। আরো ৭০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন। বহিরাগত ব্যবসায়ীদের কাছে কেজি হিসেবে তিনি পেঁপে বিক্রি করে থাকেন। প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হারে বিক্রি করেন। তিনি জানান, তার পেঁপে বাগানে একটি পেঁপের ওজন ৬ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। এর থেকে বুঝা যাচ্ছে অত্র অঞ্চলের মাটি ও বায়ু পেঁপে চাষের উপযোগি। তিনি আরো বলেন, ইতোপূর্বে ক্ষতিকর তামাক চাষ করলেও বর্তমানে পেঁপে চাষ করে তিনি লাভবান হচ্ছেন। তিনি বলেন, এই এলাকায় অর্থকরি অনেক ফসল ফলানো সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু সরকারি সহযোগিতা। আগাম অর্থ বিনিয়োগ, উৎপাদিত কৃষি পণ্য সংরক্ষণ, বাজার নিশ্চয়তা পেলে কৃষকরা তামাকের বিকল্প অন্য ফসল চাষ করবে। কৃষক আহছান উল্লাহ সামান্য জমিতে পেঁপে চাষ করে লাভবান হয়ে আগামীতে ব্যাপক হারে চাষ করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। পেপে চাষি মংচাথুই মার্মা জানান, ইতোপূর্বে তামাক চাষ করতাম। বছর শেষে হিসেব নিকেষ করে কোন কিছুই সঞ্চয় থাকত না। বেসরকারি সংস্থা কারিতাসের খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের মিশ্র ফল বাগান চাষ প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাহাড়ি ঢালু জমিতে পেঁপে চাষ করে আশানুরূপ লাভবান হই। এর পর আমি সমতলে ৪০ শতক জমিতে রেড লেডি জাতের পেঁপে চাষ করি। এ জমি থেকে ইতোমধ্যে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছি। আরো ৭০/৮০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করা যাবে। এছাড়া তিনি নার্সারী করে ৩২ হাজার পেঁপের চারা উৎপাদন করেন। যা বিক্রি করে তাঁর আয় হয় ৬ লক্ষ টাকা। মংচাথুই মার্মা জানান, তার এ পেঁপে চাষ দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার নার্সারী থেকে চারা ক্রয় করে নিয়ে গিয়ে এখন পেঁপে বাগান সৃজন করছে। উপজেলার মিরিঞ্জা এলাকায় কারিতাস খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের অধীনে এরকম আরো প্রায় ২৫/৩০ জন কৃষক তাদের বাগানে প্রচুর পেঁপে উৎপাদন করছেন। যা বহিরাগত ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করছে। এছাড়া উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন এবং ১ টি পৌরসভার সমতল ভূমি ও পাহাড়ি ঢালু জমিতে মংচাথুই ও উপহ্লা মার্মার মত অসংখ্য কৃষক এখন পেঁপে চাষ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছেন।

বেসরকারি সংস্থা কারিতাস’র খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা মোঃ মামুন শিকদার চকরিয়া নিউজকে জানান, আমরা মূলত স্থানীয় কৃষকদেরকে মিশ্র ফল বাগানের বিষয়ে উৎসাহিত করে থাকি। এ প্রকল্পের আওতায় তাদেরকে বিভিন্ন ফলের চারা বিতরণ করি। যার মধ্যে অল্প সংখ্যক পেঁেপে চারা ও রয়েছে। আমরা এ সকল চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফলন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে নগদ আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকি। তিনি বলেন, কৃষকরা পেঁপে চাষে ভালো ফলন পাওয়ায় পরবর্তীতে নিজেরাই পেঁপের চারা সংগ্রহ করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেঁপে চাষ করছে। এক্ষেত্রে অনেকেই ঈর্ষণীয় সফলতা পেয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র পেঁপে চাষের মাধ্যমে তার পুরো পরিবার স্বাবলম্বি হয়েছে।

এদিকে পেঁপে চাষিরা অভিযোগ করে চকরিয়া নিউজকে বলেন, রোগবালাইসহ পেঁপে চাষের বিভিন্ন সমস্যাই কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কোনো সহযোগিতাই তারা পাচ্ছেননা। এ ব্যাপারে লামা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নুরে আলম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের জনবল কম থাকায় কৃষকদের যথাযথ সাপোর্ট দিতে পারছি না, আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি।

উন্নত প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে সরকারি ঋণ সুবিধা প্রদান এবং বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা সম্ভব হলে ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে মুক্তি লাভ করে পার্বত্য এ জনপদে পেঁপ চাষের যে স্বপ্ন দেখছেন তা সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

 

পাঠকের মতামত: