ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বৃহত্তর ঈদগাঁওতে ৪ শতাধিক শিক্ষকের বেতন-ভাতা উত্তোলনে ভোগান্তি

addমোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও, কক্সবাজার ::

কক্সবাজার জনতা ব্যাংক থেকে বেতন-ভাতার সরকারী অংশ উত্তোলন করতে গিয়ে বৃহত্তর ঈদগাঁওর ৪ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বছরের পর বছর নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে এসব শিক্ষকদের মূল্যবান সময় ও অর্থের। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতার এ সরকারী অংশ স্থানীয় কোন ব্যাংক থেকে উত্তোলনের সুযোগ দানের দাবী দিন দিন জোরালো হচ্ছে ভূক্তভোগী শিক্ষকদের মধ্যে। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, দীর্ঘ কয়েক যুগ যাবৎ বৃহত্তর ঈদগাঁওর এমপিওভূক্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভূক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন-ভাতার সরকারী অংশ উত্তোলন করতে হচ্ছে সূদুর ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জনতা ব্যাংক, কক্সবাজার শাখা থেকে। এতদাঞ্চলে রয়েছে সরকারী সুবিধাভোগী ২৮-৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা, ডিগ্রি কলেজ, জুনিয়র হাইস্কুল, হাইস্কুল, দাখিল মাদ্রাসা ইত্যাদি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে এমপিওভূক্ত ৪ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক এসব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন-ভাতার সরকারী অংশ ছাড় করা হয় কক্সবাজারস্থ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকে। বাধ্য হয়ে কর্মরত শিক্ষকরা সূদুর কক্সবাজার শহরে গিয়ে নিজস্ব একাউন্ট থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। এতে তাদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। দূরবর্তী পথ হওয়ায় তাদের মূল্যবান কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। এছাড়া আসা-যাওয়া বাবদ বাস ভাড়া, রিক্সা ভাড়া, টমটম ভাড়া, খাওয়া-দাওয়াসহ তাদের প্রচুর নগদ টাকার অপচয় হয়। অনেক সময় জরুরী প্রয়োজনেও প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি না পাওয়ায় শিক্ষকরা তাদের বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারেন না। এতে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তাদেরকে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। আবার কোনমতে ব্যাংক পর্যন্ত গেলেও সীমাহীন ভিড়ের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে অপেক্ষা করতে হয় টাকা উঠাতে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের পর টাকা তোলার সুযোগ না দেয়ায় বিলম্বে পৌঁছা অনেক শিক্ষক টাকা উত্তোলন করতে না পেরে ফিরে আসতে বাধ্য হন। টাকা উত্তোলনের পূর্বে প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাগজপত্র চালাচালি করতেও কয়েকদিন সময় লেগে যায়। আবার অব্সর ও পেনশন ভাতা ভোগীদের ইতিপূর্বে তীব্র কষ্টের শিকার হতে হতো পেনশনের টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে। কক্সবাজারস্থ সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে উক্ত টাকা উত্তোলনের নিয়ম ছিল। শিক্ষকরা জানান, সূদুর কক্সবাজার গিয়ে বেতন-ভাতা উত্তোলনে শিক্ষকদের প্রায়শ হয়রানির শিকার হতে হয়। তাদের টাকা-পয়সা খরচের পাশাপাশি সময়ের যথেষ্ট অপচয় ঘটে। এমতাবস্থায় সময়, অর্থের সাশ্রয় এবং হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলছেন তারা। দীর্ঘদিন এ বিষয়টি নিয়ে এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বর্তমানে তারা দূর্ভোগ ও হয়রানি থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ খুঁজছেন। ভূক্তভোগী শিক্ষকদের বক্তব্য, তাদের বেতন-ভাতার সরকারী অংশটি ঈদগাঁওতে অবস্থিত কোন ব্যাংক থেকে উত্তোলনের সুযোগ দিলে তাদের প্রয়োজনীয় সময় ও অর্থের অপচয় হবে না। কক্সবাজার গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হবে না। পোহাতে হবে না কোন ধরণের ভোগান্তি। স্বল্প সময়ে পয়সা খরচ ছাড়াই নিজেদের সুবিধামত টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। ঈদগাঁও ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী, রূপালী বা কৃষি ব্যাংক থেকে এ টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেয়া হলে এখানকার শিক্ষক সমাজ যারপর নাই উপকৃত হবেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশির একটি অফিস আদেশই শিক্ষকদের সমস্ত হয়রানি দূর করতে পারে বলে মন্তব্য শিক্ষকদের। অন্যদিকে ঈদগাঁও বাজারে চালু হওয়া সোনালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে অবসর ও পেনশন ভাতা উত্তোলনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয় পেনশনভোগীরা স্বস্তির সাথে তাদের টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনছুর আলম জানান, আগে পেনশনের টাকা উত্তোলন করতে তাকে একটি পুরো দিন ব্যয় করে কক্সবাজার যেতে হতো। স্থানীয়ভাবে পেনশনের টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাওয়ায় এখন তার সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে না। অনুরূপ স্বস্তির কথা জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছলিম উল্লাহ। তার মতে, এলাকার শতাধিক পেনশনভোগী এখন স্থানীয় সোনালী ব্যাংক থেকে এ সুবিধা ভোগ করছেন। ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জান্নাত জানান, স্থানীয় কোন সরকারী ব্যাংকে এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ছাড় করা হলে শিক্ষক সমাজ দীর্ঘদিনের হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন। ঈদগাহ জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দীন জানান, কক্সবাজার শহরে গিয়ে এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা উত্তোলনের সীমাহীন যে যন্ত্রণা অন্যদের সাথে তিনি ও এর ভূক্তভোগী। ভারুয়াখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন জানান, মফস্বল এলাকার শিক্ষকদের পর্যটন নগরীতে গিয়ে সময় ও অর্থ ব্যয় করে বেতন-ভাতা উত্তোলনের ব্যাপারটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক। তিনি অতিসত্ত্বর এ থেকে শিক্ষক সমাজকে রেহাই দেয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন। চৌফলদন্ডী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামানের মতে, হিসাব করলে দেখা যাবে বৃহত্তর ঈদগাঁও থেকে কক্সবাজার গিয়ে বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে প্রতিবছর শিক্ষকদের হাজার হাজার টাকা ও শত শত ঘন্টার অপচয় হচ্ছে। বিষয়টির ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের ঈদগাঁও শাখা ব্যবস্থাপক মো. নোমান ফারুকীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, তার ব্যাংক শিক্ষকদের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে সদা প্রস্তুত। তিনি এলাকার সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও কল্যাণভাতা তার ব্যাংক থেকে যথাসময়ে পরিশোধ করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, তার ব্যাংকে অনলাইন সুবিধা থাকায় পেনশনভোগীরা যে কোন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সুযোগ পাচ্ছেন। এদিকে বৃহত্তর ঈদগাঁওর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত মাথা ঘামিয়ে আসছেন। এর অংশ হিসাবে সম্প্রতি তারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদন দেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন ঈদগাহ জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দীন। এসময় অন্য দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছ থেকেও অনুরূপ প্রক্রিয়ার কথা শোনা গেছে।

পাঠকের মতামত: