ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

তামাকের জমিতে ইক্ষুর হাঁসি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃekku

বান্দরবানের লামায় পরিবেশ বিধ্বংসী মরণ চাষ তামাক বদলে ইক্ষু চাষের সম্ভাবনা ও চাষীদের মধ্যে ইক্ষু চাষের আগ্রহ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল ও চিনি শিল্পের প্রধান কাচাঁমাল ইক্ষুর চাষ করে এই এলাকার অনেকে আজ আত্মনির্ভরশীল।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা মতে একজন সুস্থ মানুষের জন্য বছরে ১৩ কেজি চিনি বা গুড় খাওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য চিনি বা গুড় প্রয়োজন প্রায় ২১ লক্ষ টন। বাংলাদেশে বর্তমানে ২.৫ লক্ষ টন চিনি এবং ৫ লক্ষ টন গুড় উৎপাদিত হয়। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের মোট চাহিদার তুলনায় চিনি ও গুড় উৎপাদন অত্যন্ত অপ্রতুল। খরাসহিষ্ণু ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় দীর্ঘ দিন টিকে থাকার পারায় পার্বত্য অঞ্চলে ইক্ষু চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৬ সাল থেকে পার্বত্য অঞ্চলে ইক্ষু গবেষণা ও ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

গত তিন দশকের ব্যবধানে এখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষি জমি দখল করে নিয়েছে সর্বগ্রাসী তামাক চাষ। যেন তামাকের চাদরে ঢাকা পড়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তামাক প্রক্রিয়াজাত করণের কাজে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে। বর্তমানে পাহাড় গুলো বৃক্ষশূণ্য মুরুভূমির দ্বার প্রান্তে।

কৃষি গবেষনা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পার্বত্য চট্রগাম এলাকায় ইক্ষু গবেষনা ও উন্নয়ন জোরদার করন প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সুগার ক্রপ গবেষনা ইনস্টিটিউট বান্দরবান পার্বত্য জেলার অধীনে উপজেলা সমূহে ইক্ষুর প্রদর্শনী প্লট সহ চারা উৎপাদন ও বানিজ্যিক ভিত্তিতে ইক্ষু উৎপাদন ইতিমোধ্যে সফলতার মুখ দেখেছে। তামাকের চাইতে কম খরচে উৎপাদন ও পরিশ্রম তুলনামুলক কম সহ অধিক লাভজনক হওয়ার কারণে তামাক চাষীরা ইক্ষু চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

লামা পৌরসভার ইক্ষু চাষী কামাল উদ্দিন জানায়, ৪০ শতাংশ জমিতে কঠোর পরিশ্রম করে অধিক উৎপাদন খরচ দিয়ে, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ গত ঝুঁকি নিয়ে তামাক চাষ করে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ৮০ হাজার টাকা। আর উৎপাদন খারাপ হলে মাথায় হাত। কিন্তু আমার ৩০ শতাংশ জমিতে বিএসআরআই আখ ৪২ রংবিলাশ ও সিও ২০৮ জাতের ৭ হাজার ইক্ষুর ফলন হয়েছে। প্রতিটি ইক্ষু ১৫ টাকা দরে বিক্রি করলেও আমি ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব।

বেশ কয়েকজন তামাক চাষী জানায়, কামালের ইক্ষু ক্ষেত দেখে আমার জানতে পেরেছি ইক্ষু চাষ তামাকের চাইতে অধিক লাভ জনক ও কম পরিশ্রমে করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে আমরাও ইক্ষু চাষ করব।

বাংলাদেশ সুগার ক্রপ গবেষনা ইনস্টিটিউট বান্দরবানের অর্ন্তগত লামা ইউনিটের বৈজ্ঞানিক সহকারী বসন্ত কুমার তঞ্চঙ্গা বলেন, ইতিমধ্যে ইক্ষু চাষে স্থানীয় চাষীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে যার ফলে আমরা প্রতি বছর প্লটের সংখ্যা বৃদ্ধি করছি।

পাঠকের মতামত: