ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজারের রামুতে সরকারি রাবার বাগান হুমকির মুখে

coxsbazar-pict-19-10-2016-shahin-10শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ১৯ অক্টোবর ॥
কক্সবাজারের রামু এলাকায় গড়ে তোলা দেশের প্রথম সরকারি রাবার বাগান হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতি বছর উৎপাদন বাড়লেও রাবারের দাম দিনদিন নিম্নমুখী হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাবার বাগানটি যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এছাড়া রাবার আমদানিতে নামমাত্র শুল্ক বসানো এবং বিক্রিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেশের রাবার শিল্পের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
জানা গেছে, দেশে কাঁচা রাবারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৯৬০-৬১ সালে অনাবাদি জমি জরিপ করে গবেষণার মাধ্যমে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলাধীন জোয়ারিয়ানালা এলাকায় গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম মাদার রাবার বাগান। মালয়েশিয়া থেকে বীজ এনে শুরুতে মাত্র ৩০ একর জমিতে বাগানটি গড়ে তোলা হলেও বর্তমানে এর আয়তন ২ হাজার ৬৮২ একওে দাড়িয়েছে। এই বাগানে রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৬১৬টি রাবার গাছ। এর মধ্যে উৎপাদনশীল গাছের সংখ্যা রয়েছে ৯৪ হাজার ৫৬৮টি।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাগানের গাছগুলোতে ঝুলছে মাটির কিংবা প্লাষ্টিকের ছোট ছোট মাটির পাত্র। গাছের কাটা অংশ দিয়ে সেই পাত্রে চুইয়ে পড়ছে ধবধবে সাদা রাবার কষ। জমা হওয়া কষ প্রতিদিন সকালে সংগ্রহ করে শ্রমিকরা গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কারখানায়।
রাবার বাগানের মাঠ তত্ত্বাবধায়ক আবুল হুদা জানান, মূলত সারা বছরই রাবার উৎপাদন হয়। তবে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাস রাবার উৎপাদনের ভর মৌসুম। বর্তমানে রাবার উৎপাদন মৌসুম চলছে। প্রতিদিন রামু রাবার বাগান থেকে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কেজি কষ আহরণ করা হয়। শীতে কষ আহরণ বেশি হয়, বর্ষায় উৎপাদন কমে আসে। এসব কষ আহরণে নিয়মিত-অনিয়মিত প্রায় ২২০ জন শ্রমিক প্রতিদিন এখানে নিয়োজিত রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাগানের কারখানা তত্ত্বাবধায়ক নুরুল আনোয়ার জানান, সাদা কষ সংগ্রহের পর সাতদিনের মধ্যে তা প্রক্রিয়াজাত করে শুকনা রাবারে পরিণত করা হয়।
তিনি আরো জানান, বাগান থেকে কষ এনে শুকনা রাবার শিটে পরিণত করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ সাতদিন। এভাবে মৌসুমে প্রতিদিনই বাগান থেকে ৩০ থেকে ৩৫ টন শুকনা রাবার উৎপাদন হচ্ছে।
রামু রাবার বাগান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ বাগানে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২১৭ কেজি রাবার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫১ কেজি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৪ কেজি এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মাত্র ছয় মাসেই উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার কেজি রাবার।
উৎপাদন বাড়লেও হতাশার কথা জানিয়েছেন রামু রাবার বাগানের উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি কেজি রাবার উৎপাদনে খরচ হয় ১৮৮ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারদর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরের পর শুধু রামু রাবার বাগানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। দাম নি¤œমুখি হওয়ার পাশাপাশি চাহিদা কম থাকায় গত কয়েক বছর গুদামেই পড়ে ছিল বিপুল পরিমাণ রাবার। তবে সম্প্রতি ভারতে রাবার রপ্তানির সুযোগ তৈরি হওয়ায় এ সংকট অনেকটা কেটেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শুধু রামু রাবার বাগান থেকে ২৯৭ টন রাবার ভারতে পাঠানো হয়েছে।
————

পাঠকের মতামত: