ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চসিক’র এসেসরদের দায়িত্ব বন্টনে লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ

ovijogবশির আলমামুন, চট্রগ্রাম :::

সিটি কর্পোরেশন (চসিক)’র এসেসরদের দায়িত্ব বন্টনে লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। চসিক’র একটি চক্র এসেসরদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের পছন্দের এলাকায় দায়িত্ব বন্টনের প্রক্রিয়া উর্ধোতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ইতোমধ্যে সম্পন্ন করার অন্যকর্মচারীরা ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে ফুসে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক, অনাবাসিক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর নির্ধারণে এসেসরদের দায়িত্ব দেয়া হয়। আর এ ক্ষেত্রে নামী দামী এলাকাগুলোতে প্রতিষ্ঠান ও হোল্ডিং মালিক থেকে ঘুষ নিয়ে কম টাকার কর নির্ধারণ করে থাকে এসেসররা এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাই এসেসররা টাকা রোজগারে ঘুষ দিয়ে এসব নিজেদের পছন্দের নামী দামী এলাকা বেছে নিয়েছে।

অন্যদিকে যারা ঘুষ দিতে পারেনি তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জরাজীর্ণ এলাকাগুলোতে এমনটি অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এদিকে গত সোমবার এসেসরদের নিয়ে এক সভায় কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মনজুরু ইসলাম বলেন, এলাকা বন্টনের জন্য কাউকে টাকা দিয়ে থাকলে বলেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী এসময় ঘুষ দিয়ে থাকলেও ভয়ে ঘুষের কথা সভায় বলতে পারেনি বলে এই প্রতিবেদকে জানালেন। তারা বলেন, ঘুষের টাকার কথা সভায় বলা যায়না। বললে আমাদেরকে পরে বিভিন্নভাবে শায়েস্তা করা হবে। তবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এসব এলাকা বন্টনে মেয়েরের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এদিকে তিনজন কর্মকর্তার সই জালিয়াতির ঘটনায় ধরা পড়ে শাস্তি হিসেবে রাজস্ব বিভাগে বদলি হওয়া চসিক’র কর্মচারী মো. শাহাদাত হোসেনকে আবারও নেজারত শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে শাহাদাত হোসেনকে দুর্নীতির অভিযোগে কোনরূপ শাস্তি না দিয়ে নেজারত শাখা থেকে রাজস্ব সার্কেল-২ এ অফিস সহকারী হিসেবে বদলি করা হয়েছিল। গত ২৯ সেপ্টেম্বর শাহাদাত হোসেনকে প্রশাসনিক অনুমোদনের মাধ্যমে আবারও নেজারত শাখার অফিস সহকারী পদে বদলি করা হয়েছে। নাজিরের পদটি শূন্য থাকাতে বর্তমানে শাহাদাত হোসেনই নাজিরের দায়িত্বসহ নেজারত শাখার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এতে করে মেয়রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকার আবাসিক, অনাবাসিক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল স্থাপনায় কর নির্ধারণে পাঁচ বছর পর পর এসেসর নিয়োগ দেয়া হয়।প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় এবারও এ নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠে একটি চক্র। এক্ষেত্রে উর্ধোতন কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে বলে একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে এই নিয়োগ দায়িত্বে থাকা দুই কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে এলাকা বন্টনে নিজের নামসহ তালিকা দেয়ার নির্দেশ

দেন। পরে ওই নির্দেশনা অনুসারে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নির্দেশ পালনকারীরা একটি চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে স্বাক্ষর নেয়ার লক্ষ্যে উর্ধোতন কর্তৃপক্ষকে উপস্থাপন করে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এবার ৯৪ জনকে এসেসর নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে কর কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, সালাউদ্দিন, শাহ আলম, জানে আলম, উপ-কর কর্মকর্তা নাছির উদ্দিনসহ কয়েকজন নামী দামী এলাকায় এসেসম্যান করার জন্য বরাদ্দ দিয়ে জনপ্রতি ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পযন্ত বাণিজ্য করছেন। ইতিমধ্যে ভাংগুটুনা এলাকা উপ-করকর্মকর্তা নাছির উদ্দিন, বাগমনিরাম এলাকায় কামরুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন, পূর্ব পাহাড়তলী এলাকায় সালাউদ্দিন ও শাহ আলম, দক্ষিণ আগ্রাবাদ এলাকায় জানে আলমরা এসেসরদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে নামী দামী এলাকায় বন্টন করে। এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল বলেন, বিষয়টা আমার জানা নেই। কেউ যদি এহেন কাজ করে থাকে তদন্ত করে তার বিরুদ্বে শাস্তি র্মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এদিকে তিনজন কর্মকর্তার সই জালিয়াতির ঘটনায় ধরা পড়ে শাস্তি হিসেবে রাজস্ব বিভাগে বদলি হওয়া চসিক’র কর্মচারী মো. শাহাদাত হোসেনকে আবারও বদলী করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনিয়মের কারণে শাহাদাত হোসেনকে নেজারত শাখা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অফিস সহাকারী হিসেবে তাকে আবার নেজারত শাখায় বদলি করা হয়েছে। লোক না থাকাতেই সে-ই নেজারত শাখার নাজিরের দায়িত্ব পালন করছেন। পদোন্নতি না হলেও তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। আগে যেহেতু তিনি নেজারত শাখায় দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতি করেছিলেন, আবারও অনিয়মের মাধ্যমে তিনি টাকা আয় করবেন। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বিষয়টা আমার জানা ছিল না। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়। তখন আমি হজে ছিলাম। আমি আসার আগেই প্রশাসন শাহাদাতে হোসেনকে নীতিগতভাবে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে কাজটা করা হয়েছে। ফাইল না দেখে কিছু বলতে পারব না।

পাঠকের মতামত: