ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

টেরিবাজারে ভগ্নিপতিকে খুন করে শ্যালক থানায় ।। বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

3598f9b7d35966a2c3dfd22fe341fa6dচট্রগ্রাম প্রতিনিধি ::

নগরীর টেরিবাজার এলাকায় এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে খুন করেছে তারই শ্যালক। নিহত ব্যক্তির নাম অঞ্জন ধর। গতকাল সকালে তার শ্যালক বাবুল থানায় হাজির হয়ে অঞ্জনকে হত্যা করার কথা জানায়। এরপর পুলিশ বাবুলকে নিয়ে টেরিবাজার আফিম গলির পূজার মাঠের পাশের বাসায় এসে ভেতর থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। অঞ্জনকে গলায় ও পেটে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

অঞ্জনের সাত বছর বয়সী একটি মেয়ে ও তিন বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। দরজা ভাঙার সময় তারা কেউই বাসায় ছিল না। খবর পেয়ে বেলা ১২টার দিকে স্ত্রী প্রিয়াংকা ধর ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাসায় আসেন। পুলিশ শ্যালক বাবুলের পাশাপাশি অঞ্জনের স্ত্রীকেও প্রথমে আটক করে। দাম্পত্য কলহের জন্য অঞ্জনকে খুন করা হয়েছে বলে প্রথমদিকে ধারণা করেছিল পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এরপর অঞ্জনের স্ত্রী প্রিয়াংকা বাদী হয়ে তার ভাই বাবুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

অঞ্জন নগরীর হাজারী লেইনে একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী ছিল। বাবুলও একই দোকানে কাজ করত। অঞ্জনের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলার জলদি গ্রামে। এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তথ্য প্রমাণাদির ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে বাবুল একাই তার ভগ্নিপতিকে খুন করেছে।’ শ্যালক বাবুলও পুলিশকে জানিয়েছে, বোনের স্বামীকে রোববার সে নিজেই খুন করেছে। খুন করার কারণ হিসাবে সে বলেছে, দাম্পত্য কলহের জের ধরে অঞ্জন তার বোনের ওপর নির্যাতন চালাতো। পাশাপাশি তাকেও নানা অজুহাতে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো। শনিবার রাতেও তাকে তিরস্কার করে অঞ্জন। তখনই বাবুল সিদ্ধান্ত নেয় রোববার সকালে বোন ছেলেমেয়ে নিয়ে স্কুলে গেলে সে ভগ্নিপতিকে খুন করবে।

এদিকে স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার ভাষ্য, স্বামীর সঙ্গে তার দাম্পত্য কলহ ছিল ঠিকই। কিন্তু এর জন্য তার ভাই তার স্বামীকে এভাবে খুন করবে তা তিনি ভাবতেই পারেন নি।

বাবলু পুলিশকে জানিয়েছে, রোববার সকালে তার বোন ছেলে মেয়েকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশে বের হয়ে গেলে বাসায় সে ও তার ভগ্নীপতি ছাড়া আর কেউ ছিল না। তখনই সে শোবার ঘরে ঢুকে ভগ্নিপতিকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে। পরে লাশটি বস্তাবন্দী করে রাখে। এরপর বাসার বাইরে তালা দিয়ে রক্তমাখা কাপড়চোপড় একটি খালে ফেলে দিয়ে আসে। বোনকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, তাঁর ভগ্নিপতি একটি কাজে মানিকছড়ি গেছেন। স্কুল ছুটির পর যাতে সন্তানদের নিয়ে তিনি (বোন) যেন বাবার বাসায় চলে যান। এদিকে রাতে বাসায় ফিরে অঞ্জনের স্ত্রী দরজায় তালা দেখে সন্তানদের নিয়ে আবার পাথরঘাটায় বাবার বাসায় চলে যান। বাসায় তালা লাগিয়ে বাবুল চাবিটি নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিল। সকালে পুলিশের সঙ্গে গিয়ে সে নিজেই তালা খুলে দেয়।

পুলিশ জানায়, বাবুল তাদের বলেছে যে লাশটি বাসার বাইরে কোথাও ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সে করতে পারেনি। অগত্যা সোমবার সকালে সে থানায় হাজির হয়ে পুলিশের কাছে খুন করার কথা স্বীকার করে।

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূর মোহাম্মদ বলেন, বাবুল ধরের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আফিম গলির নেপালবাবুর ভবনের পঞ্চম তলায় গিয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় মরদেহটি পায়। বাবুল রোববার এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কথা বললেও মরদেহের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তাকে ২৩দিন আগেও খুন করা হতে পারে। স্ত্রী ও শ্যালককে জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছু পরিষ্কার হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘রোববার রাতে অঞ্জনের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে কেউই বাসায় ছিল না। তারা কোথায় গিয়েছিল সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

গতকাল সকালে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, দুই কক্ষের বাসাটির শোবার ঘরে অঞ্জনকে খুন করে লাশ বস্তায় ভরে রাখা হয়। ঘরের মেঝেতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক এ এম ফারুক বলেন, নিহত ব্যক্তির গলা, বুকসহ শরীরের একাধিক স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশটি ফুলে গন্ধ বের হচ্ছিল। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও কেরোসিন তেল পাওয়া গেছে বাসা থেকে।

ভবনের মালিক পরিমল দত্ত জানান, হাজারি গলির স্বর্ণকার অঞ্জন দুই বছর আগে তার পাঁচতলা ভবনের উপরের তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। বাসায় স্ত্রী, দুই সন্তান, মা ও শ্যালককে নিয়ে থাকতেন অঞ্জন। কিন্তু পূজার সময় তার মা গ্রামের বাড়ি যান। তিনি এখনো বাঁশখালী থেকে ফেরেননি। বাসায় কোনো প্রহরী নেই। সব ভাড়াটের কাছে গেটের চাবি আছে। বাসায় পুলিশ আসার পর তিনি জানতে পারেন, অঞ্জনকে বাসার ভেতর খুন করা হয়েছে।

 

পাঠকের মতামত: