ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় মেনগ্রোভ ফরেষ্টের গাছ কেটে চিংড়িঘের তৈরি

pic-05বিশেষ প্রতিবেদক:
চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড় ভেওলার ইলিশিয়া ডেবডেবি এলাকায় মেনগ্রোভ ফরেষ্টের হাজার হাজার গাছ কেটে চিংড়িঘের তৈরির অভিযোগ পাওয়াগেছে। জাপানী এনজিও ‘ওয়াইসকা’ কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও এটি এখন বনদস্যুদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে বনদস্যুদের থাবায় এখন ক্ষতবিক্ষত ইলিশিয়ার সেই বিশাল ম্যাগ্রোভ ফরেষ্ট। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে এই ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট। এতে করে একদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ প্রতিবেশ ও অন্যদিকে হুমকির সম্মূখীন হচ্ছে উপকূল রক্ষা ও ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

জানাগেছে, ১৯৯১ সালের পর ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে উপকূল রক্ষার জন্য সরকারের উপকূলীয় বনবিভাগের অধিনে জাপানী এনজিও ‘ওয়াইসকা’ এখানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। চকরিয়া পশ্চিম বড় ভেওলার আর এস খতিয়ান নং ১৭০ ও দাগ নং ২৭৩১ এবং বিএস খতিয়ান ০১ এবং দাগ নং ৩৯৮৬ এর চরভরাট ৪০ একর ভূমি নির্ধারণ করে। এতে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ হাজার মত বাইন, কেউড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সৃষ্টি করে। এখনো ৮জন কর্মচারী ‘ওয়াইসকা’র অর্থায়নে বাগান দেখোশুনার কাজ করে থাকেন। স্থানীয়দের অভিযোগ বর্তমানে ‘ওয়াইসকা’র ম্যানেজার হামিদুল হক মানিক ‘রক্ষক’ হয়ে ‘ভক্ষকের’ ভূমিকায় নেমেছে। তার সহযোগিতায় বনদস্যুরা একদিকে বনভূমি বনশুন্য করছে, অন্যদিকে প্রতারণা করে ওই ভূমি চিংড়ি ঘের বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এভাবে গত বছরও তারা গাছ কেটে ১২ একর ভূমি চিংড়িঘের লীজ দিয়েছে বলে জানাগেছে।

আরো জানাগেছে, ওই বনদস্যু চক্রের সাথে স্থানীয় আব্দু শুক্কুর পিতা আব্দুল জব্বার, আবু তৈয়ব পিতা আব্দুল মতলব, মোকাদ্দেস পিতা আব্দুল মতলব, অনোয়ার পিতা কালামিয়া, শাহজাহান প্রকাশক রূহুল আমিন পিতা ইসলাম, হামিদুল হক মানিক পিতা নূরুল হুদা, শাহজাহান পিতা নূরুল ইসলাম, শামসুল ইসলাম পিতা মোহাম্মদ হোছন ও ঢাকার আবু তাহের তারু পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ‘ওয়াইসকা’র সাবেক সহকারী ম্যানেজার নূরুল বশর বাচ্চু প্রধান বন সংরক্ষক, বন সংরক্ষক চট্টগ্রাম অঞ্চল, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানাগেছে।

উল্লেখ্য ১৯৯৬ সালের ২৬ আগষ্ট ইলিশিয়া থেকে নৌপথে ট্রলারযোগে কক্সবাজার আসার সময় একটি জাপানী প্রতিনিধি দলের উপর গুলি চালিয়েছিল বনদস্যুরা। ওই সময় ‘ওয়াইসকা’র কান্ট্রি ডাইরেক্টর ড. ওকাসুরাসহ ট্রলারে ২৬জন জাপানী প্রতিনিধি ও স্থানীয় কর্মকর্তারা ছিলেন। তখন দস্যুদের গুলিতে তখনকার ‘ওয়াইসকা’র ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ঘটনাস্থনে নিহত হয়েছিলেন এবং আহত হয়েছিলেন আরো ৮/১০ জন। ওই ঘটনায় এখনো মামলা চলছে আদালতে। সম্প্রতি ওই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় ৮ডাকাতের ফাঁসির রায় ঘোষণা করে আদালত। তবে মামলার বাদী বর্তমান ‘ওয়াইসকা’র ম্যানেজার বনদস্যুদের সহযোগী বলে খ্যাত হামিদুল হক মানিকের অসহযোগিতায় ফাঁিসর রায় কার্যকর হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ উঠেছে। সেই থেকে এই পর্যন্ত ওই ম্যানগ্রোভ ফরেষ্টের উপর থেকে বনদস্যুদের কুনজর নাকি যাচ্ছে না। এখনো প্রতিদিন কেটে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকার গাছ, আর ক্ষতি করছে পরিবেশ-প্রতিবেশের।

এ প্রসঙ্গে ‘ওয়াইসকা’র কোঅর্ডিনেটর মি. রহিম উল্লাহ ‘বলেন, ‘৯১’র পর থেকে কক্সবাজারের চকরিয়ার ইলিশিয়াতে ‘ওয়াইসকা’ বনায়নের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। সেখানে এপর্যন্ত ৩০/৩৫ কিমি এলাকা বনায়ন করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধে এই বনায়ন খুবই সহায়ক। এবছরও সেখানে দুই লাখ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। ইলিশিয়াতে তাদের একটি অফিস আছে। কিছু প্রভাবশালী লোক সেখান থেকে গাছ কেটে চিংড়ি ঘের তৈরি করার অভিযোগ তিনিও পেয়েছেন বলে জানান মি. রহিম উল্লাহ। ১৯৯৬ সালে সেখানে জাপানী প্রতিনিধি দলের উপর ডাকাতদের গুলিবর্ষণ এবং ম্যানেজার নিহত হওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এখনো ওই ঘটনায় মামলা চলছে। তবে জাপানীরা খুবই শান্তিপ্রিয়, তারা কোন ঝগড়া বিবাদে জড়াতে চায়না। তিনি এবিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। তিনি আরো বলেন, ওই প্রজেক্ট দেখার জন্য মাঝেমধ্যে জাপানী প্রতিনিধিরা আসতো। তবে সম্প্রতি ঢাকার গুলশানের ঘটনার পর থেকে তারা আসছেনা, বাংলাদেশ সফরে তারা ভীত বলেও তিনি জানান।’

উপকূলীয় সহকারী বন সংরক্ষক জি এম মুহাম্মদ কবির এর সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, এধরণের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। তবে রিমোট এরিয়ায় জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ওই সুযোগে বনদস্যুরা এই ধরণের অপকর্ম করছেনা তা নয়

পাঠকের মতামত: