ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

শাহপরীর দ্বীপের ক্ষত-বিক্ষত সড়ক জোড়া লাগবে কবে

জসিম মাহমুদ : joshim-mahmud-news-pic-teknaf-1

২০১২ সালের ২২ জুলাই বেড়িবাঁধ ভেঙে সড়কের শাহপরীর দ্বীপের সঙ্গে টেকনাফ সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সড়কটি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে। এরপর থেকে ঝুঁকি নিয়ে বর্ষা মৌসুমে কোন রকমে নৌকা করে পার হয়ে সড়কের আরেক পাশে উঠতে হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় ওই এলাকার মানুষকে চরম দূভোর্গ পোহাতে হলেও এ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বললেন টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়ার গৃহবধূ আয়েশা বেগম (৩৬)।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। ভারী বর্ষণ উপেক্ষা করে সড়কের ভাঙা অংশ পাড়ি দিতে আয়েশা বেগম তখন অপেক্ষায় ছিলেন নৌকার জন্য। সঙ্গে ছিলেন এক বছর বয়সের এক ছেলে নুরু জাম্মান। নুরু কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ে যেতে তিনি এখানে আসেন। আয়েশার মতো এই কষ্ট এখন শাহপরীর দ্বীপের ১৬ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের।

সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কটির প্রায় ১৩ দশমিক সাত কিলোমিটার মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার অংশ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়েছে। ফলে এলাকার লোকজনকে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান তাহেরা আক্তার মিলি বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে শাহপরীর দ্বীপের অধিকাংশ বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভাড়া বাসায় থাকছেন। নানা চেষ্টা তদবির করে ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামত করার জন্য ১০৬কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও এখনও কোন ধরনের ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখা মিলেনি। তার উপর ক্ষত-বিক্ষত সড়ক মেরামতের কোন ধরনের গরজ নেই সড়ক বিভাগের। ক্ষত-বিক্ষত সড়ক জোড়া লাগবে কবে তা বলা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাবরাং ইউনিয়নের তিনটি ওযার্ডের (শাহপরীর দ্বীপ) অংশের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়ে আসছে। ওই সময় যোগাযোগে একমাত্র বাহন টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ প্রধান সড়কটিও পানিতে নিমজ্জিত। স্থানীয় লোকজন নৌকা নিয়ে চলাচল করছেন। তাই শাহপরীর দ্বীপের ঘোলাপাড়া, হাজিপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, দক্ষিণপাড়া, বাজারপাড়া, কোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, ক্যাম্পপাড়া, উত্তরপাড়া, বিলপাড়া, পশ্চিমপাড়া, ডাঙ্গারপাড়া, মাঝেরপাড়া, মগপুরা, হারিয়াখালী গ্রামের ৪০ হাজার মানুষকে দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে।

টেকনাফ ডিগ্রি কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, চার বছর ধরে টেকনাফের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে উৎপাদিত ফসল ও আহরিত মাছের ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পেরে স্থানীয় চাষি ও জেলেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়–য়া বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধ নির্মিত না হওয়ায় টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের ওই পাঁচ কিলোমিটার ক্ষত-বিক্ষত ভাঙা অংশ ও কালভার্ট নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আগে বেড়িবাধ নিমার্ণ এরপর সড়ক মেরামত। কবে নাগাদ, ক্ষত-বিক্ষত সড়ক জোড়া লাগবে সেটা বলা মুশকিল।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, গত আগস্ট মাসের ১৬ তারিখে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১০৬ কোটি ১৬লাখ টাকা ব্যয়ে শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ পুনর্র্নিমাণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অতিশীঘ্রই টেন্ডার আহবান করা হবে।

 

পাঠকের মতামত: