ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘হজবাবা’ পালিয়েছে

09-10-16-f-09অনলাইন ডেস্ক : হজ পালন করতে লাখ টাকা খরচ করে মক্কা-মদিনায় যেতে হবে না, ঢাকার দোহারেই সেরে নিতে পারেন হজব্রত! এমন মিথ্যা প্রচারণা আর ভণ্ডামি চলছে দিনের পর দিন। যার নেতৃত্বে এই কাজটি হচ্ছে, তার নাম ডা. মতিউর রহমান ওরফে মতি ওরফে হজবাবা। এই ভণ্ডপীরের কর্মকাণ্ড নিয়ে গতকাল শনিবারই প্রতিবেদন দেখানো হয় নিউজ টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনমূলক অনুষ্ঠান টিম আন্ডারকাভারে। প্রতিবেদনটি প্রচারের কয়েক মিনিটের মধ্যেই দোহারের লটাখোলা এলাকায় সেই হজবাবার আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। অভিযানে সেই আস্তানা সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত জনতা সেখানে ভাঙচুরও চালায়। তবে টেলিভিশনে অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের খবর পেয়েই পালিয়েছে মতিউর রহমান মতি ওরফে হজবাবা।

এদিকে প্রতারক হজবাবাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের জন্য নিউজ টোয়েন্টিফোর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দোহারের বাসিন্দারা। ঘটনা জানাজানি হওয়ায় তোলপাড় চলছে উপজেলাজুড়েই।

জানা গেছে, গতকাল রাত ৯টায় প্রচারিত হয় অনুসন্ধানী প্রতিবেদনমূলক অনুষ্ঠান নিউজ টোয়েন্টিফোরের টিম আন্ডারকাভার। অনুষ্ঠানটি শেষ হয় রাত ১০টায়। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আল-আমীন ও দোহার থানার ওসিhajj-baba-astana সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল লটাখোলা এলাকায় ভণ্ডপীর মতিউর রহমানের আস্তানায় অভিযান শুরু করে। এ সময় তাকে পাননি অভিযান পরিচালনাকারীরা। তাঁরা আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে কথিত ওই পীরের প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের বই, সিডি ও ছবি জব্দ করে। এ সময় এলাকাবাসী জড়ো হয়ে আস্তানায় ভাঙচুরও চালায়। ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে আর এখানে করতে দেওয়া হবে না’ বলে পুলিশ এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তখন এলাকাবাসী ভণ্ডপীর মতির গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। পরে উপজেলা প্রশাসন আস্তানাটি সিলগালা করে দেয়।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আল-আমীন বলেন, ‘এ ধরনের ভণ্ডামি জঘন্যতম অপরাধ। কথিত ওই পীরের আস্তানা সিলগালা করে দিয়েছি। ভবিষ্যতেও যাতে এ ধরনের ভণ্ডামি কেউ করতে না পারে দৃষ্টি রাখবে প্রশাসন।’

দোহার থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবেদনটি প্রচারের পরপরই আমরা ভণ্ডপীরের আস্তানায় অভিযান চালানো হয় এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র জব্দ করেছি।’

এদিকে ভণ্ডপীরকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের জন্য নিউজ টোয়েন্টিফোরকে ধন্যবাদ জানায় এলাকাবাসী। তারা অভিযোগ করে, ভণ্ডপীর সাধারণ মানুষকে হজের ব্যাপারে ভুল বুঝিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন নিউজ টোয়েন্টিফোরের আন্ডারকাভার প্রতিবেদন প্রচার করলেও এলাকার অনেকেই দেখতে পারেনি। কারণ প্রতারকচক্রটিও প্রতিবেদন প্রচারের খবর পেয়ে যায় এবং তারা প্রতিবেদনটি শুরু হওয়ার পরপরই এলাকার ডিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

দোহারের পালামগঞ্জ এলাকার সাখাওয়াত হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘খুব সুন্দর একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। এটি প্রচারের বিষয় আমরা বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে আগে থেকেই জানতে পারি। পরিবারের সবাই ৯টা থেকেই টেলিভিশন সেটের সামনে অপেক্ষা করি। যথাসময়ে প্রতিবেদনটি শুরু হয়। কিন্তু এর ১০ মিনিট পরই আমাদের ডিস সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। জানতে পারি এলাকার অনেক বাড়িতে ডিস সংযোগ নেই।’

দোহারের লটাখোলা এলাকার আরমান আলী বলেন, ‘পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে আগেই জানতে পারি হজবাবা’র প্রতিবেদনের বিষয়ে। কিন্তু শনিবার রাত ৯টায় প্রতিবেদনটি শুরুর ১০ মিনিট পরই ডিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি পাশের জয়পাড়া এলাকাতে সংযোগ রয়েছে। তখন বুঝতে পারি এটা ওই ভণ্ডপীর মতির লোকজনের কারসাজি।’

– কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত: