ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

মাতামুহুরি নদী থেকে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন; ঝুঁকিতে রাবার ড্যাম

1475053744219ইমরান হোসাইন :

চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ৫৫কি.মি এলাকা দিয়ে প্রবাহিত মাতামুহুরি নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টে ২০১৩ সালের ১১ মে আনুষ্টানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ২৩৩ দশমিক ৫০ মিটার দীর্ঘ দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যামের (ব্যারেজ)। এতে দুই উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমি সেচ-সুবিধার আওতায় আসে।

কিন্তু সম্প্রতি এর পাদদেশ থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় চরম ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে জন গুরুত্বপূর্ণ রাবার ড্যামটি । দুটি ড্রেজার (খননযন্ত্র) দিয়ে রাতদিন এক করে বালু ওঠানোর কারণে রাবার ড্যামের অবকাঠামো, ব্রীজ ও দুই উপজেলার বেড়িবাঁধ  এমনকি আশেপাশের বসতবাড়ি হুমকীর মুখে পড়েছে। রাবার ড্যামের আশপাশে মাঝারি আকারের ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে প্রায় মাসাধিকাল ধরে বালু উত্তোলন চললেও তারা কিছুই জানে না।

স্থানীয় লোকজন জানান, মাতামুহুরি নদীর উপর নির্মিত রাবার ড্যামের খুব কাছ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পাইপের মাধ্যমে বালু তোলে জমা করা হচ্ছে পাশ্ববর্তী চর অবৈধ দখল করে । সেখান থেকে মাঝারি সাইজের ট্রাক দিয়ে এসব বালু দুই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বাসিন্দারা আরো জানান, অবৈধভাবে এসব বালু উত্তোলন করছে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা এলাকার খলিলুর রহমানের পুত্র বিএনপি নেতা নুরুল আমিন ও ফয়েজ আহমদের পুত্র পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী লোকমানের নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেট।

পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম জানান, এভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ওঠানোর কারণে রাবার ড্যাম ছাড়াও আশপাশের বসতঘর এবং জমি হুমকীর মুখে পড়বে। যে কোনো সময় ধসে বড় ধরণের অঘটন ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে খননযন্ত্র দিয়ে বালু ওঠানোর দৃশ্য দেখা যায়। রাবার ড্যাম থেকে ২০-৩০ গজ দূরে খননযন্ত্র বসানো হয়েছে। এছাড়াও ৫০-৬০ গজ দূরে পেকুয়া উপজেলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের অবস্থান। বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনপ্রবণ এই অংশ ভেঙ্গে গত বর্ষা মৌসুমে পেকুয়ার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ব্যাপক প্লাবিত হয়। যা বন্যা আকারে দেখা দেয়। খননযন্ত্রের পাশেই ধ্বসের সৃষ্টি হওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক জানান, পেকুয়া থানা পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দেওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোনো বাধা আসেনি।

এবিষয়ে নুরুল আমিনের কাছে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ওঠালে রাবার ড্যামের ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, সামান্য কিছু বালি তুলছি, তা ড্রেজার দিয়ে না ওঠালে লাভ হবে না।

তবে বালু উত্তোলনের কাজে জড়িত থাকা অপর ব্যক্তি লোকমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। তবে রাবার ড্যামের নিচ থেকে বালু তোলার কারণে তা হুমকীর মুখে থাকবে। বালু ওঠানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: