ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, আইন-শৃক্সক্ষলা বাহিনীর নজরদারি শুরু চকরিয়ায় ৮০টি মণ্ডপে চলছে দুর্গোৎসবের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, ঝুঁকিপূর্ণ ১৩টি

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া  : chakaria-picture-01-10-16
চকরিয়ায় এবার শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে ৮০টি ম-পে। তন্মধ্যে ৪৩টি ম-পে প্রতিমা এবং ৩৭টি ম-পে হবে ঘটপূঁজা। এছাড়াও ৪৩টি প্রতিমা ম-পের মধ্যে একটি হবে পারিবারিক পূঁজা। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে উপজেলার ১৩টি প্রতিমা ম-পেকে ঝুঁকিপূর্ণ নয় অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তালিকায় রাখা হয়েছে। এজন্য বাড়তি সতর্কতামূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে অন্য ম-পের চাইতে এসব ম-পে।
জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও মহা ধুমধাম ও উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে স্ব স্ব ম-প কমিটির পক্ষ থেকে। কোন ধরণের বিশৃক্সক্ষলা ছাড়াই যাতে এবারের দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় উপজেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদ ও স্ব স্ব ম-প কমিটির সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বৈঠকও সম্পন্ন করা হয়েছে ইতোমধ্যে। এখন ম-পে ম-পে চলছে শেষ মুহূর্তের চুড়ান্ত প্রস্তুতি। বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে প্রতিটি ম-পকে। এ যেন এক প্রতিযোগীতার পাল্লা। একইভাবে পেকুয়া উপজেলার ৩টি ম-পে প্রতিমা পূঁজা এবং আরো তিনটি ম-পে ঘটপূঁজা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে এবারের দুর্গোৎসবও যাতে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা কোন দুষ্টচক্র ঘটাতে না পারে সেজন্য আগেভাবেই নজরদারী শুরু করা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আগামী ৬ অক্টোবর থেকে প্রতিমা ম-পগুলোর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেবে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ টহলদলও ম-পে ম-পে ঘুরে-ফিরবে। এমনটাই জানিয়েছেন উপজেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাহেদুল ইসলাম দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ইতোমধ্যে উপজেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ ও স্ব স্ব ম-প কমিটির সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে কোন ম-পের কি অবস্থা তা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য নেওয়া হয়। সেই আলোকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতিও চুড়ান্ত করা হয়েছে।’
এবার বিজিবি নামানোর সম্ভাবনা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাছাড়া ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো পর্যন্ত এনিয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। বিষয়টি পরিস্থিতির উপরই নির্ভর করবে।’
চকরিয়া উপজেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি তপন কান্তি দাশ ও সাধারণ সম্পাদক বাবলা দেবনাথ দৈনিক চকরিয়া নিউজকে জানান, পূঁজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। গত একমাস ধরে উপজেলার ম-পগুলোর সংশ্লি­ষ্ট কমিটির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে।’
তারা জানান, এবার উপজেলায় দুটি প্রতিমা ম-প বেড়েছে। সেই হিসেবে ৪৩টি ম-পে প্রতিমা পূঁজা এবং ৩৭টি ম-পে ঘটপূঁজা অনুষ্ঠিত হবে। তন্মধ্যে একটি প্রতিমা ম-পে পারিবারিকভাবে পূঁজা অনুষ্ঠিত হলেও যাতে কোন ধরণের বিশৃক্সক্ষল পরিস্থিতির সৃষ্টি কেউ করতে না পারে সেদিকে নজর থাকবে। পাশাপাশি উপজেলার ডুলাহাজারা, খুটাখালী, হারবাং, বরইতলী, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল ইউনিয়নের অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ১৩টি ম-পকে বিশেষ নজরদারিতে রাখার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে।
সরজমিন বিভিন্ন ম-প ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গোৎসবের প্রারম্ভিকতা শুরু হলেও আগামী ৭ অক্টোবর ষষ্ঠীপূঁজার মধ্য দিয়ে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তাই শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি চুড়ান্ত করা হচ্ছে ম-পে  ম-পে। বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে প্রতিটি ম-পকে।
চকরিয়া সার্বজনীন কেন্দ্রীয় হরিমন্দির দুর্গোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি মিলটন কিশোর দাশ, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল দেবনাথ, সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ মিত্র, অর্থ সম্পাদক রনজিত দাশ চকরিয়া নিউজকে জানান, ‘গত কয়েকবছর ধরে যেভাবে প্রতিমা পূঁজোর ব্যয় বেড়েছে তা অবিশ্বাস্য। সেই হিসেবে অনুদান প্রাপ্তিও একেবারে নগন্য। এবারও সেরা পূঁজো উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। এবারের পূজোর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। এজন্য উপজেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দসহ সকল শুভাকাক্সিক্ষর আন্তরিক সহায়তা কামনা করছি।’
চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজম চকরিয়া নিউজকে জানান, আগামী ৬ অক্টোবর থেকেই প্রতিটি প্রতিমা ম-পের নিয়ন্ত্রণে নেবে আইন-শৃক্সক্ষলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ ও আনসার সদস্যরা নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালন করবে ম-পে ম-পে। এছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ টহল দল থাকবে ম-পের আশপাশে। যাতে কোন দুষ্টচক্র আইন-শৃক্সক্ষলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে।’
চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘উপজেলায় যে কয়টি প্রতিমা ম-প রয়েছে সবগুলো ম-পকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। পূঁজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পূজাম-প পরিদর্শন করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে যাতে কেউ দুশ্চিন্তায় না ভোগেন সে ব্যাপারে অভয় দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এর পরেও কেউ যদি বিঘœ ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আইন-শৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।’

পাঠকের মতামত: