মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা :::
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলাধীন ছিটমহল খ্যাত ৪নং বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন। মাতামুহুরী নদী ও বমু খালের খরস্রোতে মাতামুহুরী নদীর কুলে গড়ে ওঠা বিলছড়ি এলাকাটি একটি প্রাচীন জনপদ। উক্ত এলাকাটি চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে দূরবর্তী হওয়ায় বরাবরই স্বাভাবিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। নেই কোন সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক। আর এই সুযোগে চড়া সুদের ব্যবসা খুলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করেছে এলাকার কিছু সুদি মহাজনরা।
এমনি এক সুদখোর মহাজনের খপ্পরে পড়ে ধার করা ঋণের সুদাসলে ফেরত দিতে না পারায় জীবন দিতে হল বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পাইন্ন্যাসা বিল হাজাম পাড়া এলাকার মঞ্জুর আলম(৫০) কে। সে হাজাম পাড়া এলাকার মৃত জাকের হোসেনের ছেলে। সুদি মহাজন সাইফুল ইসলাম প্রকাশ সায়েম মিয়া সুদের টাকার জন্য গালিগালাজ, হুমকী ধমকি, মারধর, বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদের হুমকী, পরিবারের লোকজনকে রাস্তাঘাটে অপমান করার কারণে অধিক চাপাচাপি করায় স্টোক করে মারা গেছে বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেছে মঞ্জুর আলমের স্ত্রী ও সন্তানরা।
মঞ্জুর আলমের স্ত্রী রাবেয়া বেগম(৪৫) বলেন, গত ৪বছর আগে আমার স্বামী মঞ্জুর আলম পার্শ্ববর্তী ৪নং ওয়ার্ড নয়াপাড়া এলাকার পল্লী চিকিৎসক নুর আহাম্মদ এর ছেলে সাইফুল ইসলাম প্রকাশ সায়েম মিয়ার কাছ থেকে ১লাখ টাকা সুদে গ্রহণ করে। ১লাখ টাকা বিপরীতে সায়েম মিয়া মোট ২লাখ ৪৭ হাজার টাকা দাবি করে। ইতিমধ্যে ২ দফায় ৪০ হাজার টাকা করে ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে আমার স্বামী। সুদি মহাজন সায়েম মিয়ার ভয়ে উক্ত টাকা দিতে না পেরে প্রায় ৪বছর আগে আমার স্বামী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
নিহতের বড় ছেলে নাছির উদ্দিন এই প্রতিবেদককে জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আমার বাবা মঞ্জুর আলম ৪০ হাজার টাকা পাঠালে আমার মা রাবেয়া বেগম টাকা দিতে গেলে সায়েম মিয়া তাকে প্রচন্ড গালিগালাজ করে। অপমানে আমার মা বাড়িতে এসে তার শরীরে প্রেসার বেড়ে গেলে অজ্ঞান হয়ে যায়। মায়ের গুরুতর অবস্থার কথা ফোনে শুনে আমার বাবা স্টোক করে। উক্ত স্টোক করার পর ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় সে চট্টগ্রামে মারা যায়। আমার বাবার মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী সেই সুদখোর মহাজন সাইফুল ইসলাম প্রকাশ সায়েম মিয়া। এদিকে বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমার মা প্রায় উম্মাদ হয়ে গেছে। তাছাড়া ঋণের টাকার জন্য খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে সায়েম মিয়া সেই কাগজে আমাদের বাড়ির ভিটা তার নামে লিখে নিয়েছে। সুদের টাকার পাওয়ার কারণে সে আমাকে আজ ৩বছর যাবৎ তার বাড়িতে নাম মাত্র বেতনে কাজের লোক থাকতে বাধ্য করেছে। তারা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা বয়ে কিছু বলতে পারিনা।
এছাড়া সুদখোর মহাজন সায়েম মিয়ার খপ্পরে পড়ে ইতিমধ্যে আরো অনেকে এলাকার ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে জানা যায়। তারমধ্যে হল, মো. হোসেন(৩৫) পিতা- মৃত ঠান্ডা মিয়া, নুরুল আমিন(৩৬) পিতা- মৃত আলী আকবর উভয়ের ঠিকানা বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পাইন্ন্যাসা বিল এলাকা। এছাড়া তার সুদের টাকার চাপে পড়ে পার্শ্ববর্তী ৪নং ওয়ার্ড মৌলভী পাড়া এলাকার কবির হোসেন(৪০) পিতা- মৃত মো. আলী গত ৪বছর আগে বিষপান করে মারা যায়।
এবিষয়ে সায়েম মিয়া বলেন, এলাকার মানুষ অভাবে পড়লে আমি টাকা ধার দি। কেউ খুশি হয়ে কিছু লাভ দিলে আমি নেই। কাউকে চাপাচাপি করিনা। উক্ত বিচারটি স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল মতলব ভেঙ্গে দিয়েছে।
৪নং বমু বিলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতলব এর কাছে একাধিকবার তার মুঠোফোনে(০১৮১৬-২৫৭৭৩০) কল করলেও সে ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে প্রভাবশালী মহাজন সাইফুল ইসলাম প্রকাশ সায়েম মিয়ার পক্ষ অবলম্বন করেছে বলে মঞ্জুর আলমের পরিবারের লোকজনরা দাবি করেছে।
পাঠকের মতামত: