ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘বিষধর সাপ আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি তা জনগণই টের পাচ্ছে’

samsuzzaman-dudu_1নিজস্ব প্রতিবেদক :::
বিষধর সাপ আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি তা জনগণ হাড়েহাড়েই টের পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গণমাধ্যমকে পাঠানো এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পাঠকদের জন্য সেই ব্রিফিংটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমাদের আমন্ত্রণে প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। রাজনৈতিক এবং কয়েকটি জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয় নিয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা জানেন সরকারের প্ররোচনায় গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জননন্দিত নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নান এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সকল মিথ্যা মামলায় জামিন লাভ সত্ত্বেও তাঁকে শ্যোন এ্যারেষ্ট করা হয়েছে। আপনারা এও জানেন যে, জনাব মান্নান গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের ভাষায় বলা হয়-‘গাজীপুরের মাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি’, কিন্তু আওয়ামী লীগের সেই ঘাঁটি থেকে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর সিটি মেয়র পদে অধ্যাপক এম এ মান্নান এর ঐতিহাসিক বিজয় আওয়ামী লীগ সরকার মেনে নিতে পারেনি বলেই তিনি আজ হাস্যকর ও উদ্ভট মামলার আসামী হয়ে কারাভোগ করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলায় তিনি জামিন লাভ করলেও ভৌতিকভাবে ভিন্ন মামলায় তাঁকে শ্যোন এ্যারেষ্টের ঘটনায় নিন্দা জানানোার ভাষা আমাদের জানা নেই। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে অধ্যাপক এম এ মান্নানকে শ্যোন এ্যারেষ্টের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের মামলা প্রত্যাহার করে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবী জানাচ্ছি। পাশাপাশি বিএনপি’র অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী যারা বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় কারান্তরীণ আছেন তাদের মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বিএনপিকে একটি ‘বিষধর সাপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ভবিষ্যৎবাণী দিয়ে বলেছেন-সুযোগ পেলেই এ সাপ জাতিকে ছোবল মারবে। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে খুশী রাখতে আওয়ামী লীগের কতিপয় মন্ত্রী-নেতাদের লাগাতার মিথ্যা, জঘন্য, কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল ও কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব্যের জন্য দল থেকে তাদেরকে মনি-মুক্তোর মালা পরানো উচিৎ কি না জানিনা, তবে বিষধর সাপ হিসেবে সুযোগ পেলেই বিএনপি জাতিকে ছোবল মারবে বলে যে মন্তব্য করেছেন সেটি কিন্তু ফিউচার টেনস, আর অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের দংশনে গোটা জাতি বিষে জর্জরিত, এটি কিন্তু প্রেজেন্ট কন্টিনিউয়াস টেনস। বিষধর সাপ আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি তা জনগণ হাড়েহাড়েই টের পাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল, গণতন্ত্রকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে দলীয় চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন ভূমিকার কথা দেশবাসী ভাল করেই জানেন। এই দল সম্পর্কে কতিপয় আওয়ামী হাইব্রিড নেতাদের তিরস্কার ও ভবিষ্যৎবাণী সত্যিই জনগণের নিকট হাস্যকর ও পাগলামী ছাড়া কিছু নয়। আমি বিএনপি’র পক্ষ থেকে হাছান মাহমুদের এধরণের ঘৃণ্য ভবিষ্যৎবাণীর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।

বন্ধুরা,
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন-‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না’। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচন চাই না, কেননা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর তামাশার নির্বাচনে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীদের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনই শুধু নয় বরং জাতীয় নির্বাচনও আমরা চাই না। আমরা চাই-সরকার দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি নয়, বরং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে সবার নিকট গ্রহণযোগ্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
এবারে আমি রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যূৎ প্রকল্প বিষয়ে একটু আলোকপাত করতে চাই। সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যূৎ প্রকল্প বাতিল করার জন্য বাংলাদেশের কাছে সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনেসকো। এই বিদ্যূৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে তাতে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে উল্লেখ করে প্রকল্পটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ গায়ের জোরে এবং জনস্বার্থ ও সুন্দরবনের ঝুঁকিকে পাত্তা না দিয়ে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যূৎ প্রকল্প নির্মানে সরকারের অনড় অবস্থান গোটা জাতিকে হতবাক ও বিস্মিত করেছে। রামপালের জন্য যে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা করা হয়েছে তা সঠিকভাবে হয়নি মন্তব্য করে ইউনেসকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-সুন্দরবনের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় বিদ্যূৎ প্রকল্পটিতে বাজারে সহজলভ্য ও সবচেয়ে ভালো প্রযুক্তি আনা হচ্ছে না। সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানও বজায় রাখা হচ্ছে না। রামপালে নির্মিতব্য ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যূৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা থেকে ৬৫ কিলোমিটার ও মূল সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিদ্যূৎ প্রকল্পের কয়লার ছাই বাতাসে মিশে সুন্দরবনে দূষণ ঘটাবে। বিদ্যূৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ছাইসহ দূষিত পানি বনের নদীতে পড়েও দূষণ ঘটাবে। রামপাল প্রকল্প বাতিল করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ইউনেসকো চারটি ঝুঁকির কথা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। ঝুঁকিগুলো হচ্ছে-বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, জাহাজ চলাচল বেড়ে যাওয়া এবং প্রকল্প এলাকায় শিল্পকারখানা ও অবকাঠামো নির্মিত হলে পূঞ্জীভূত দূষণ। জনগণ মনে করে-রামপাল প্রকল্পের ইআইএ (পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা) প্রতিবেদনে সুন্দরবনের যেসব ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে, তা উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে মোকাবেলার কথা বলা হলেও এসব প্রযুক্তি সুন্দরবনের ক্ষতি আদৌ কমাতে পারবে কি না, আর এসব প্রযুক্তি দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর থাকবে কি না তা নিয়েও সংশয় ও প্রশ্ন আছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো-ইউনেসকো রামপাল বিদ্যূৎ প্রকল্পের সব নথি ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করার সুযোগ পেলেও প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড (বিএইচইএল) ইউনেসকো-কে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করেনি। অর্থাৎ বাস্তবে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনের ক্ষেত্রে কোন ধরণের যন্ত্র স্থাপন করা হবে এবং কিভাবে করা হবে সেটির পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। তবে ইউনেসকো বলছে-তাদের কাছে যতটুকু তথ্য ও প্রতিবেদন এসেছে তার ভিত্তিতেই তারা নিশ্চিত যে, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যূৎ প্রকল্পের কারনে সুন্দরবনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে সুন্দরবন রক্ষার্থে এবং রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যূৎ প্রকল্প স্থাপনে সরকারের একগুঁয়েমি মনোভাবের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

পাঠকের মতামত: