ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঈদগাঁও ডিসি সড়ক অকেজো দেড় কিলোমিটার সড়কে পাঁচ শতাধিক খানাখন্দক

Exif_JPEG_420সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও প্রতিনিধি:::

কক্সবাজার সদরের বৃহত্তম বাণিজ্যিক উপশহরখ্যাত ঈদগাঁও বাজারের ডিসি সড়কটি অকেজো হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ স্থানে ওঠে গেছে ইট-কংকর। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টির পানিতে ভেসে ওঠেছে লোহার রড়। সড়কের ময়লাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে দুই পাশের দোকানের সৌন্দর্য। অনেক স্থানে ড্রেন ও সড়কের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদাররা। এ কারণে শত বছরের এই ডিসি সড়কটি আজ যেন ‘মরণফাঁদ’। বাসস্টেশন থেকে বঙ্কিমবাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে অন্তত পাঁচশতাধিক খানাখন্দক রয়েছে। যেগুলোতে পড়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

ডিসি তথা জেলা প্রশাসকের নামে সড়কটির নামকরণ হলেও কার্যতঃ জেলা প্রশাসকের নজরের বাইরেই থেকে যায় জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। বাজারের মধ্যখানে সকড়ের কিছু অংশ সংস্কার কাজ করা হলেও তা এখন ‘মরণ ঘা’ তৈরী করেছে। অসমাপ্ত কাজে জলাবদ্ধতা আরো দ্বি-গুন বাড়িয়েছে।

শুধু ডিসি সড়ক নয়, ঈদগাঁও বাজারের উপ-সড়কসমূহেরও বেহালদশা। গ্রামীন জনপদগুলো সামান্য বৃষ্টিতে জলকাদায় একাকার হয়ে যায়। ঈদগাঁও বাসস্টেশন থেকে নেমে বাজারে ঢুকার পথে জলকাদার ভেতর দিয়ে পা ফেলে চলতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতে আলমাছিয়া মাদরাসা সড়ক, জাগিরপাড়া সড়ক, ঈদগাঁও-চৌফলদন্ডী সড়ক, কবি নুরুল হুদা সড়ক, ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়ক বেহাল হয়ে ওঠে। স্টেশন থেকে বঙ্কিমবাজার, কালিবাড়ি রোড় থেকে বাঁশঘাটা ব্রীজ পর্যন্ত সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি।

এ প্রসঙ্গে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ ঐতিহ্যবাহী ‘ডিসি সড়কের’ বিষয়ে সর্বদলীয় ঐক্যমত গড়ে তুলার আহবান জানিয়ে বলেন, বৃহত্তর ঈদগাঁও বাজার থেকে সরকার প্রতি বছর কোটি টাকা রাজস্ব পায়। তার সিকি পরিমাণও উন্নয়ন হয়না। বরাবরই ঈদগাঁও বাজার অবহেলিত।

তিনি বলেন, বাজারের নাজুক অবস্থার উত্তরণের জন্য সর্বস্থরের মানুষকে সমন্বয় ও সম্পৃক্ত করে বৃহত্তর কর্মসুচির ডাক দেয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তি জনপ্রতিনিধিদের সাথে তিনি কার্যকর কর্মপরিকল্পনার কথাও ব্যক্ত করেন। যা শীঘ্রই শুরু করবেন বলে জানান ইমরুল রাশেদ।

ঈদগাঁও বাজারকেন্দ্রীক সম্পর্ক রয়েছে পার্শ্ববর্তী ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, পোকখালী, ইসলামপুর, ঈদগড়, রশিদনগর, চৌফলদন্ডির জনগণ। এই ৮ ইউনিয়নের অন্তত ৪ লাখ মানুষ ডিসি সড়ক হয়ে চলাচল করে। ঈদগাঁও বাজার এলাকায় রয়েছে তিনটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি ফাজিল (ডিগ্রি মাদরাসা), একটি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি হেফজখানা। রয়েছে বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল।

রাস্তার দুইপাশে রয়েছে পুলিশ তদন্তকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ডাক বিভাগ, প্রাণী সম্পদ বিভাগ, কৃষি বিভাগ, সরকারী স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক, ভূমি অফিস, টিএন্ডটি অফিস, কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতাল, পাবলিক লাইব্রেরী, কেন্দ্রীয় মসজিদ, মন্দিরসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয়, সামাজিক, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। রয়েছে সরকারী-বেসরকারী অন্তত দশটি ব্যাংকের শাখা।

৮ ইউনিয়নের বাসিন্দারা এছাড়াও ডিসি সড়ক হয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলার মানুষ তাদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক কাজ সারতে সোজা গাড়ী নিয়ে ঈদগাঁও-জালালাবাদ-চৌফলদন্ডি-খুরুশকুল হয়ে সোজা কক্সবাজার পৌঁছায়। আর কক্সবাজারের অনেক মানুষ সময় বাঁচাতে এ সড়ক পথে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে। এসব কারণে ডিসি সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতবিক্ষত ডিসি সড়কের কারণে অবর্ণনীয় দূর্ভোগের শিকার হতে হয় এখানকার মানুষদের। অথচ ভাগ্যবিড়ম্বিত ঈদগাঁওবাসীর দুঃখের কথা শুনারও যেন কোন লোক নেই।

সুত্র জানিয়েছে, বর্তমানের ‘ডিসি সড়ক’ এক সময় চট্টগ্রাম জেলা কাউন্সিলের অধীনে ছিল। পরে জেলা বিভক্ত হলে এটি ‘ডিসি সড়ক’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ডিসি সড়কের যে করুণ অবস্থা, তা ভাবতে অবাক লাগে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঈদগাঁও স্টেশন থেকে বাজারের শেষ মথা পর্যন্ত পুরো সড়কটিই ক্ষতবিক্ষত। ৫ মিনিটের পথটি যেতে অধাঘন্টা লেগে যায়। বিকল্প সড়ক না থাকায় লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। দীর্ঘদিন ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার না হওয়ায় বাজারের ড্রেনগুলো ‘ময়লার ডিপো’তে পরিণত হয়েছে। কাদা-ময়লায় ভরপুর ড্রেনের পানি সোজাসুজি সকড়ে গিয়ে পড়েছে। বাজারের ময়লাক্ত পানি আশপাশে বসাবাড়ী বসবাসের অনুপযুক্ত করে তুলছে। অভিভাবকহীন বাজারের অবস্থা যেন ‘ছড়ে দে মা কাঁন্দি বাঁচি।

অন্যদিকে প্রতাপশালী ভুমিখেকো জমিদাররা অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত মার্কেটগুলোর সামনের ফুটপাত দখল করে ঝুলন্ত দোকান করায় পথ বিপাকে পড়তে হয় পথচারীদের। বিকল্প পথ না থাকাতে একবার যানজট লাগলে তা দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী থাকে।

স্থানীয়রা জানায়, সড়কজুড়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় এমন অন্তত পাঁচশতাধিক খানাখন্দক রয়েছে। রিক্সা-সিএনজিতে চড়ে বাজারে ওপারে যেতে হলে গাড়ীর ঝাকুনি আর আছাড়ে ক্লান্ত হয়ে যায় যাত্রী। খালি পায়ে চলতেও ঘটে বিপত্তি। বর্ষা মৌসুম আসলে তো কথায় নাই। হাঁটুজলে ডুবে থাকে পুরো সড়ক। এ সময় খালি পায়ে চলাও দায় হয়ে পড়ে। কোথাও পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই। সড়কগুলি খানাখন্দকে ভরা। নামেমাত্র যে ড্রেনগুলো রয়েছে সেগুলোও বর্জ্য-আবর্জনায় ভরে গিয়ে পানি নিষ্কাশনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বলতে গেলে পুরো সড়ক যেন ‘বিষ্ফোরনোম্মুখ’ হয়ে আছে।

অভিযোগ রয়েছে, ঈদগাঁও বাজারে পরিচালনা কমিটি থাকলেও তাদের কর্মকান্ড কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। লোক দেখানো কিছু কর্মকা- ছাড়া কমিটির দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। বাজার কমিটির কাজের তদারকি-দেখভালের কোন কর্তৃপক্ষও নেই। তাদের ইচ্ছে মতো কাজের কারণে বাজারের আজকের এই অবস্থা বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারটি দুইটি ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন হওয়ায় মন:স্তাত্ত্বিক দ্বন্দের কারনে ইতিপূর্বে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছিল। দেখার কেউ না থাকায় বাজারের প্রতিটি অলিগলির সড়কের উভয় পাশে বেইজ লেভেল ৩-৫ ফুঁট উঁচুতে অপরিকল্পিত ভবন, শপিংমল, দোকানপাট নির্মিত হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই মুলসড়কটি নালায় পরিণত হয়ে যায়।

ডিসি সড়কের এমন অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বিষয়টি খোঁজ নিয়ে করনীয় ঠিক করবেন বলে জানান।

এদিকে ঈদগাঁও বাজারে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, যানজট সমস্যা, ড্রেনেজ, পয়ঃনিষ্কাশন, অসমাপ্ত ডিসি সড়ক সংস্কারসহ নানাবিদ সমস্যা সমাধান ও অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে তালিকার নির্দেশ দিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ। বিশেষ করে ঈদগাঁও বাজারের ডিসি সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, মরিচের দোকান, স্বর্ণের গলি, তরকারির গলি, মাছ বাজারসহ বিভিন্ন সড়ক-উপসড়ক পরিদর্শন করে ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে তালিকা করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বাজার পরিদর্শন শেষে তিনি এ নির্দেশ দেন। এ সময় সড়কের উপর যত্রতত্র মালামাল বসানোর ফলে চলাচলে বিঘœ ঘটার অভিযোগে আগামী ৫ দিনের মধ্যে বাজার ইজারাদারকে সড়ক থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ারও নির্দেশ প্রদান করেন কর্ণেল ফোরকান। এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলামসহ বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও মান্যগন্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
#####################
ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ অফিস অনিয়ম ও দূর্নীতির আখড়া

সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি::

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ অফিস যেন অনিয়ম ও দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পিয়ন থেকে শুরু করে কথিত পরিচালক পর্যন্ত এ অনিয়মের মহোৎসবে মেতেছে। প্রতিনিয়ত হয়রানি হচ্ছে গ্রাহক সাধারণ।

ভূক্তভোগী বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নতুন সংযোগের জন্য মিটারের আবেদন, মিটার পরিবর্তন, হস্তান্তর, ট্রান্সফর্মার প্রতিস্থাপন, খুঁটি স্থাপনসহ বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকারের জন্য গেলে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না। মাসের পর মাস আবেদন পড়ে থাকলেও ওয়্যারিং ইন্সপেক্টরসহ সংশ্লিষ্টরা হাতে টাকা না পৌছলে কোন কূল কিনারা হয় না। এতসব অভিযোগ নিয়ে অফিসের ইনচার্জের শরণাপন্ন হলে ভূক্তভোগীরা প্রতিকারের পরিবর্তে উল্টো ব্যবস্থাপক কথিত পরিচালকের সুপারিশ ছাড়া কাজ হবে না বলে নতুন ফন্দির পথ তৈরি করে দেয়। উৎকোচের টাকা হাতে পেলেই নির্ঘুম গ্রাহক সেবা দিতে মরিয়া হয়ে উঠে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা। অন্যথায় দিনের পর দিন নাজেহাল হতে হয় এসব ভূক্তভোগীদের। প্রতিবাদ করলে হয়রানির মাত্রা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। এমনকি পরবর্তীতে বিল তৈরি করতে গেলে আকাশী রিডিং সংখ্যা বসিয়ে যেন তেন মোটা অংকের বিলের কাগজ ধরিয়ে দেয় গ্রাহকদের। এ অনৈতিক বিলের প্রতিবাদ করলে আগে ঐ বিল পরিশোধ করে অভিযোগ করার পরামর্শ দেয়। এভাবেই হাতিয়ে নিচ্ছে দিনের পর দিন অবৈধ টাকা। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের চিহ্নিত দালালের মাধ্যমে আবেদন ও অভিযোগ প্রসেসিং না করলে তা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না বলে ফাইল ফেলে দেয়। বর্ণিত বিষয়ে ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ইনচার্জের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

পাঠকের মতামত: