ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে এমপির উপস্থিতিতে সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ! টাকার বিনিময়ে নার্সরা সিট বদলে দেন, দুপুর ১২টার পর হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায়না

chakaria-picture-tib-21-09-2016এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) উদ্যোগে উপজেলা সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেবাগ্রহীতাদের অংশগ্রহনে বুধবার দুপুরে হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম খান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী আবু মো. বশিরুল আলম, হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা.মোহাম্মদ ছাবের, চকরিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম ও আইসিডিডিআরবি’র ব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম।

সনাক সদস্য জিয়া উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন চকরিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহ-সভাপতি হুরে জন্নাত মিলি এবং কর্মসূচীর উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন টিআইবির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন।

এর আগে হাসপাতালের সেবাগ্রহীতারা সেবার মান নিয়ে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। সেবাগ্রহীতা মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালের সেবার মান পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি রয়েছে। সেবা গ্রহীতা রেজোয়ান বলেন, একশ টাকার বিনিময়ে নার্সরা সিট থেকে একজন রোগীকে নামিয়ে অন্যজনকে সিট দেন। তাই নার্স-কর্মচারীদের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের মনোভাব বন্ধ করতে হবে। সেবা গ্রহীতা মোহাম্মদ আবির বলেন, হাসপাতালে দুপুর ১২টার সময় ডাক্তার দেখানোর জন্য গেলেও ওইসময় কোন ডাক্তারকে হাসপাতালে পাওয়া যায়না।

সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম বলেন, সেবা গ্রহীতারা যেসব বিষয়ে অভিযোগ করেছেন তার অবশ্যই সত্যতা রয়েছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এসমস্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। তাছাড়া হাসপাতালে সিজার সম্পর্কিত কার্যক্রম অচিরেই চালু করার জন্য তিনি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী আবু মো. বশিরুল আলম বলেন, হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা আগের তুলনায় ভালো হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো উন্নতি করা প্রয়োজন। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম খান বলেন, জনবহুল চকরিয়া উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে অত্র হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপ রয়েছে। সীমিত বরাদ্দ দিয়ে অতিরিক্ত রোগীর সঠিক চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে হিমসিম খেতে হয়। তাই তিনি সেবা গ্রহীতাদেরকে ছোট-খাট রোগের চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাছাড়া হাসপাতালে দালালদের উৎপাত বন্ধে পুলিশি তৎপরতার বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আবদুস সালাম ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন অভিযোগের যথাযথ উত্তর দেন। তিনি বলেন, ৫ লক্ষাধিক জনসংখ্যার একমাত্র সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্টান চকরিয়া উপজেলা হাসপাতাল। ৫০ বেডের এই হাসপাতালে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ থেকে ১২০ জন রোগি থাকে। সীমিত সংখ্যক নার্স, সার্ভিস স্টাফ ও সরঞ্জাম দিয়ে সকলকে খুশি করা কঠিন। তবে হাসপাতালের সকলেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সেবা প্রদানের চেষ্টা করে বলেই রোগীদের সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, সেবাগ্রহীতাদের কেউ কেউ অনেক সময় সন্তোষ্ট হয়ে নার্সদের ২০-৫০ টাকা দিয়ে যায়। কিন্তু বাইরে গিয়ে আবার অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করে।

সভায় প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, হাসপাতালের আগের অবস্থা অনেক নাজুক ছিল। বর্তমানে সার্বক্ষনিক নজরদারি করে সেবার মান বাড়ানো হচ্ছে। তবে সেবার ব্যাপারে যে সব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, এগুলোর ব্যাপারে শিগগরই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য বান্ধব সরকার। সরকারের ভিশন ২০২১ এর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জনগনের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ তথা মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে যারা সেবা নিতে আসেন তাদের বড় অংশ হতদরিদ্র শ্রেণীর মানুষ। তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা কখনোই কাম্য হতে পারেনা। তিনি বলেন, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই এসব সমস্যা সমাধান হবে। #

পাঠকের মতামত: