ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া সনাক-টিআইবির উদ্যোগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবাগ্রহীতাদের মতবিনিময় সভা

mail-google-comমিজবাউল হক, চকরিয়া:

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেবাগ্রহীতাদের অংশগ্রহনে গতকাল বুধবার দুপুর ১২.৩০ টায় হাসপাতালের হলরুমে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ওই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ ও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াছ। এতে বক্তব্য দেন, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম খান, চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী মোঃ বশিরুল আলম, সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ জহিরুল ইসলাম ও আইসিডিডিআরবি’র ব্যবস্থাপক মোঃ শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক মিজবাউল হক। সনাক সদস্য জিয়া উদ্দিন এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন চকরিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহ-সভাপতি হুরে জন্নাত মিলি এবং কর্মসূচীর উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন টিআইবির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন।

এরআগে হাসপাতালের সেবাগ্রহীতারা সেবার মান নিয়ে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। সেবাগ্রহীতা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালের সেবার মান পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি রয়েছে। সেবা গ্রহীতা মোঃ রেজোয়ান বলেন, একশ টাকার বিনিময়ে একজন নার্স সিট থেকে একজন রোগীকে নামিয়ে অন্যজনকে দিয়ে দেয়। তাই নার্স/কর্মচারীদের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের মনোভাব বন্ধ করতে হবে। সেবা গ্রহীতা মোহাম্মদ আবির বলেন, হাসপাতালে দুপুর ১২টার সময় ডাক্তার দেখানোর জন্য গেলেও তিনি দেখেননি। সাংবাদিক মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, সেবা গ্রহীতারা যেসব বিষয়ে অভিযোগ করেছেন তার অবশ্যই সত্যতা রয়েছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এসমস্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি আহবান জানান। তাছাড়া হাসপাতালে সিজার সম্পর্কিত কার্যক্রম অচিরেই চালু করার জন্য তিনি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষন করেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী মোঃ বশিরুল আলম বলেন, হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা আগের তুলনায় ভালো হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো উন্নতি প্রয়োজন। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম খান বলেন, জনবহুল চকরিয়া উপজেলার একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে অত্র হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপ রয়েছে। সীমিত বরাদ্দ দিয়ে অতিরিক্ত রোগীর সঠিক চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে হিমসিম খেতে হয়। তাই তিনি সেবা গ্রহীতাদেরকে ছোট-খাট রোগের চিকিৎসা নেওয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাছাড়া হাসপাতালে দালালদের উৎপাত বন্ধে আগামী কাল থেকে পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবদুস সালাম ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন অভিযোগের যথাযথ উত্তর দেন। তিনি বলেন, ৫ লক্ষাধিক জনসংখ্যার একমাত্র স্বাস্থ্য কেন্দ্র চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ বেডের এই হাসপাতালে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ থেকে ১২০ জন রোগি থাকে। সীমিত সংখ্যক নার্স, সার্ভিস স্টাফ ও সরঞ্জাম দিয়ে সকলকে খুশি করা কঠিন। তবে হাসপাতালের সকলেই অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সেবা প্রদানের চেষ্টা করে বলেই রোগীদের সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, সেবাগ্রহীতাদের কেউ কেউ অনেক সময় সন্তুষ্ট হয়ে নার্সদের ২০-৫০ টাকা দিয়ে যায়। কিন্তু বাইরে গিয়ে আবার অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, হাসপাতালের আগের অবস্থা অনেক নাজুক ছিল। সার্বক্ষনিক নজরদারি করে হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আজকে যে সব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, এগুলো শিগগরই যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য বান্ধব সরকার। সরকারের ভিশন ২০২১ এর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ তথা মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন। সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে যারা স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসে তাদের একটি বড় অংশ হতদরিদ্র শ্রেণীর মানুষ। তাদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে টাকা আদায় করা কখনোই কাম্য হতে পারেনা। তিনি বলেন, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে, আশা করা যায় কিছুদিনের মধ্যেই এসব সমস্যা সমাধান হবে। তিনি সনাক-টিআইবি’র প্রতি বিশেষভাবে আহবান জানান প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর সেবা গ্রহীতাদের নিয়ে এরকম মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য।

পাঠকের মতামত: