ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাগরতীরে শামুক-ঝিনুকে সচ্ছল প্রতিবন্ধী ফজল

jinukঅনলাইন ডেস্ক :::

কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের পূর্ব কলাতলী গ্রামে শারীরিক প্রতিবন্ধী ফজল করিমের বাড়ি। সৈকতের নোনা জলের প্রবাহ আর উত্তাল সাগর তরঙ্গের মুর্ছনায় ভোরে ঘুম ভাঙে ওই এলাকার বাসিন্দাদের। প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম প্রাচুর্যে বেড়ে ওঠা ফজল করিমের। জোবেদা খাতুন ও রশিদ আহমদের ছেলেমেয়ের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ফজল। পরিবারে বাবা-মা তিন মেয়ে ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সুন্দর সংসার রশিদ আহমদের। সংসারের জীবিকা নির্বাহ করতে নিজেই বিভিন্ন কাজ করতেন দৈনিক ভিত্তিতে।
এরই মধ্যে বড় দু’মেয়ের বিয়েও দেন রশিদ আহমদ। কিন্তুু আকস্মিকভাবে ২০১০ সালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মারা যান রশিদ আহমদ। এ নিয়ে ফজল করিমের সংসারে নেমে আসে টানাপোড়ন। সংসারের প্রয়োজন মেটাতে আর্থিক জোগানের আশায় ফজল করিম ৮ম শ্রেণীর পাঠ চুকিয়ে শহরের আলীরজাহান এলাকায় ফিশফিড মিলে চাকুরি নেন। মিলে চাকুরিরত অবস্থায় একদিন কাজ করতে গেলে অসাবধানতাবশতঃ মেশিনে তার বাম হাত হারান। সেই থেকে ফজল করিম শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে দিনাতিপাত শুরু করেন। এমনিভাবে মিলের সুপারভাইজারদের নানা কটূক্তি ও বিরক্তি সহ্য করে ইচ্ছা না থাকলেও পরিবারের ভরণপোষণের কথা মাথায় নিয়ে কোনো রকম পার করেন আরও দুটি বছর। এরই মধ্যে ফজল করিমের বিয়ে ঠিক করেন মা জোবেদা খাতুন। ২০১৩ সালে রামু জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের নন্দাখালী গ্রামের সাকো’র সাথে বিয়ে হয় ফজলের। এক সময় তার এই চাকুরি আর ভালো লাগে না। সিদ্ধান্ত নেন সমুদ্র সৈকতে ঝুড়িতে করে শামুক-ঝিনুকের পণ্য নিয়ে ফেরি ব্যবসা করবেন। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। ঝুড়ি আর শামুক-ঝিনুকের পণ্য নিয়ে শুরু করেন ফেরি ব্যবসা। ইতিমধ্যে তার সংসারে স্ত্রীর কোলজুড়ে জন্ম নেয় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একমাত্র মেয়ে মাহিয়া সোলতানা মাহি। ব্যবসায় তার ভালো লাভ হওয়ায় সে স্বপ্ন দেখে কীভাবে ব্যবসা বড় করা যায়। লক্ষ্যকে সামনে রেখে খুঁজতে থাকেন একটি দোকান। অবশেষে কক্সবাজার সী-বীচের সুগন্ধা পয়েন্টে পেয়ে যান একটি দোকানের পজেশন। ফজল করিম বলেন, প্রাথমিক পুঁজি ৮ হাজার টাকা জোগাড় করে কোনোরকমে দোকান সাজিয়ে ব্যবসা শুরু করি। দোকানে শামুক-ঝিনুকের তৈরি বিভিন্ন রকম পণ্য বিক্রি করা হয়। বর্তমানে দেশি-বিদেশীিনতুন নতুন পণ্য মজুদ রয়েছে। দোকানের পুঁজি এখন লাখ টাকার উপরে। লাভও হচ্ছে ভালো। সহযোগিতাও রয়েছে সর্বস্তরের। অর্থের কষ্টও নেই এখন। সুন্দরভাবে চলছে সংসার। এছাড়া দোকানের পাশাপাশি তিনি ৩০ হাজার টাকা খরচ করে একটি উন্নতমানের সেকেন্ড-হ্যান্ড ক্যামেরা কিনে সমুদ্র সৈকতে দৈনিক ভিত্তিতে ছবি তোলার কাজে ভাড়া দেন। এ প্রসঙ্গে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কর্মরত সংস্থা এসএআরপিভি’র মাঠ কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহ্ আলম বলেন, ২০১৩ সালে এসএআরপিভি কক্সবাজার সদর উপজেলায় ‘প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও মর্যাদা উন্নয়ন সাধন (পিআরডিপিডি) প্রকল্প’ শুরু করলে ফজল করিমকে পূর্ব কলাতলী গ্রামে ইনানী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সদস্য এবং পরবর্তীতে সকলের মতামতের ভিত্তিতে ওই দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এর পর প্রকল্পের সুদবিহীন ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল (আরএলএফ) থেকে ২০ হাজার টাকা পুঁজি দেয়া হয়। প্রকল্প কর্মকর্তা আবিদুর রহমান বলেন, ফজল করিম শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তার আকাক্সক্ষা অনেক বড়। ব্যবসার ফাঁকে অনেক সময় দোকানে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকের শিক্ষনীয় ও গঠনমূলক কথা শোনে, ব্যবসায়ী ও সমবয়সীদের নিয়ে আড্ডায় যোগ দেয়। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা নয়। সঠিক সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধীরাও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।

পাঠকের মতামত: