ঢাকা,রোববার, ১৯ মে ২০২৪

জেলা শিল্পকলা একাডেমী ‘অসংস্কৃতিমানদের’ দখলে

shilpakala-ekademi.jpegকক্সবাজারে শিল্পকলার কোন ক্ষেত্রে জড়িত না থাকার পরও ‘সংস্কৃতিমান সাজিয়ে’ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্যভূক্তির ঘটনা নতুন নয়; গত ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে সদস্যভূক্ত হওয়া অর্ধেকেরই বেশী কারসাজির মাধ্যমে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলেন।

এদের মধ্যে কাজের বুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশায়যুক্ত কারও কারও স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন ও নিকট স্বজনরাও রয়েছেন। যাদের জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্যভূক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের ধারা-২ এর উপ-ধারা ক ও খ এর নিয়ম-নীতি লংঘন করা হয়েছে। ফলে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত সংস্কৃতিসেবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

এছাড়া সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে কারসাজির মাধ্যমে ‘সংস্কৃতিমান’ স্বপক্ষে যুক্তি দেখাতে তারা বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। অথচ তারা কোন কালেই এসব সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না।

গত ২০১৩ সালে গঠিত কমিটির ৩ বছর মেয়াদপূর্ণ হলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমির আহবায়ক কমিটি সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যভূক্তির জন্য স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে।

এ নিয়ে অন্যান্যবারের মতো এবারও শিল্পকলার কোন ক্ষেত্রে জড়িত এমন ব্যক্তিদের ‘সংস্কৃতিমান সাজিয়ে’ সদস্যভূক্ত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন প্রকৃত সংস্কৃতি সেবীরা।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির গঠনতন্ত্রের ধারা-২ এ সদস্যভূক্ত হওয়ার যোগ্যতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এতে “ধারা-২ এর ক-তে বলা হয়েছে, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে এমন ‘সংস্কৃতিমান’ ব্যক্তি জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য হইতে পারিবেন”।

ধারা-২ এর খ-তে বলা হয়েছে, “সংস্কৃতিমান বলিতে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন : সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক, চারুকলা, আবৃত্তি, যন্ত্রসঙ্গীত, যাত্রাশিল্প, চলচ্চিত্র, সাহিত্য ও শিল্পসমালোচনার ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে এমন ব্যক্তিবর্গকে বুঝাইবে। সেই সাথে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে তার স্বপক্ষে প্রমানাদিসহ সদস্য প্রার্থীকে আবেদন করতে হবে। যা কার্যনির্বাহী কমিটি বা আহবায়ক কমিটি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেবেন।”

জেলা শিল্পকলা একাডেমির গত ২০১৩ সালের নির্বাচনের প্রচারিত ভোটার তালিকার ১১ নম্বর ভোটার ডা: রেজাউল করিম ও ১২ নম্বর ভোটার ডা: রেহনুমা ঊর্মি। তারা দুজনেই স্বামী-স্ত্রী। কোন দিন কোন কালে তারা শিল্পকলার কোন ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

তাদের মতো দম্পতি ভোটার হয়েছেন, ঝিনুকমালা খেলাঘরের সংগঠক বিশ্বজিত বড়–য়ার স্ত্রী নমিতা বড়ুয়া। তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে কর্মরত থাকলেও সম্প্রতি চট্টগ্রামে বদলী হয়েছেন।

ঝিনুকমালার আরেক সংগঠক শহরের পাহাড়তলী এলাকার শৈবাল কান্তি শর্মা। তার স্ত্রী তালিকার ১৪৮ নম্বর ভোটার সূর্বণা রাণী শর্মা শিল্প-সংস্কৃতির কোন ক্ষেত্রে জড়িত না থাকার পরও জেলা একাডেমির সদস্য।

তালিকার ৭১ নম্বর ভোটার কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়ার মো. আজিজ উদ্দিন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। শিল্পকলার কোন ক্ষেত্রে জড়িত না থাকার পরও তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য।

গত ২০১৩-২০১৫ ইং মেয়াদের কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হুদা সিদ্দিকী জামশেদ জেলা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার স্ত্রী তালিকার ১১০ নম্বর ভোটার রোজিনা পারভীন। তিনি সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের ধারা-২ এর নিয়ম-নীতি লংঘন করেছেন।

এছাড়া শিল্প-সংস্কৃতির কোন ক্ষেত্রে জড়িত না থাকার পরও সদস্য হয়েছেন ছাত্রদল নেতা নেজাম উদ্দিন, মো. সরওয়ার রোমন, কানন বড়–য়া, সাইফুর রহমান নয়ন, মোহাম্মদ রাশেদ আবেদীন, অলি আহমদ অলি, বলরাম দাশ অনুপম।

আওয়ামী যুব মহিলা লীগের নেত্রী দীপ্তি শর্মা তালিকার ১০০ নম্বর ভোটার। তিনিও গঠনতন্ত্র লংঘন করে সদস্যভূক্ত হয়েছেন।

এছাড়া ২১৫ জনের মধ্যে ৫০ জনের কাছাকাছি সদস্যের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিষয়টি জানা গেলেও অন্যান্যদের জানা যায়নি।

এব্যাপারে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আহবায়ক কমিটির সদস্য জাহেদ সরওয়ার সোহেল বলেন, আগের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত এপ্রিলে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহবায়ক কমিটি নতুন সদস্যভূক্তি ও সদস্য পদ নবায়নের জন্য ইতিমধ্যে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে।

শিল্প-সংস্কৃতির সাথে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের ‘সংস্কৃতিমান’ সাজিয়ে সদস্যভূক্ত করার অভিযোগের ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, জেলা শিল্প একাডেমীর সদস্যভূক্তি ও নবায়নের জন্য আবেদন জমাদানের সময়সীমা শেষ হলে গঠনতন্ত্রের ধারা-২ অনসুরণ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রার্থিত ব্যক্তি প্রকৃত সংস্কৃতিসেবী কিনা তার স্বপক্ষে যথাযথ প্রমানাদিসহ তা গঠনতন্ত্র মতে যাচাই-বাছাই করা হবে। একই সঙ্গে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে তা নিয়েও আলোচনা হবে।

জেলা কালচার অফিসার মো. আয়াছ মাবুদ বলেন, বিগত সময়ে যারা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য হয়েছেন; সেই সময়ে আমি কক্সবাজারে কর্মরত ছিলাম না। তবে নতুন করে সদস্যভূক্তি ও নবায়নের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের ধারা-উপ-ধারা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে।

 

পাঠকের মতামত: