ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

নাইটগার্ড থেকে কোটিপতি আবু বক্কর

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::: dddds1
কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের নাইট গার্ড আবু বক্কর এখন কোটিপতি। কিছুদিন আগেও সামান্য বেতনে আনসার সদস্য হিসাবে কর্মরত থাকার পর পাসপোর্ট অফিসেই চাকরি নেয় আবু বক্কর। এরপর থেকে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মত অবস্থা। মাত্র ২/৩ বছরের মধ্যেই পাল্টে যায় তার জীবন। এখন নিজ এলাকা মহেশখালীর কুতুবজোমে বিলাস বহুল বাড়ি তৈরি করার কাজ শুরু করেছেন, সাথে কক্সবাজারেও চলা ফেরা করে ভিআইপি স্টাইলে। সকালের নাস্তাতেও এখন তার খরচ ৫ শত টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টদের দাবি নাইটগার্ড হলেও সে মূলত পাসপোর্ট অফিসের প্রধান কর্মকর্তার সহকারী। তাছাড়া পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা লিংক দেওয়ার কাজ করে সেখানে প্রতিটি পাসপোর্টে সর্বনি¤œ ৫০০ টাকা ছাড়া কাজ করেনা। তাই এত তাড়াতাড়ি তার উত্থান।
কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের  দায়িত্বরত বেশ কয়েকজন আনসার ও কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নাইটগার্ড আবু বক্কর এখন পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজদের তালিকায় প্রথম স্থানে আছে। ২ বছর আগে সে আমাদের মত আনসার সদস্য ছিল। মূলত ভাগ্য ভাল সে প্রধান কর্মকর্তার সাথে দায়িত্বে ছিল অর্থাৎ পুলিশ প্রতিবেদন আসার পর তা লিংক বা ঢাকা অফিসে প্রতিবেদন জানানোর কাজটি করতো। সে সময় সাধারণ মানুষ জন তদবির করতে আসলে তাদের কাজ থেকে টাকা পেলে সেটাই প্রধান কর্মকর্তাকে দিত। আর যারা টাকা দিত না তাদের পুলিশ প্রতিবেদন আসেনি বলে তাড়িয়ে দিত। এমন কি এক মাস পরেও তাদের পাসপোর্ট পেত না। পরে জানিনা কিভাবে সে আনসারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নাইটগার্ড হিসাবে চাকরি নিয়েছে। বর্তমানে দৈনিক তার আয় কম করে হলেও ২০ হাজার টাকা।  কারন প্রতিটি প্রতিবেদনে তাকে টাকা না দিলে সেটা পাওয়া যায় নাই বলে সে ফেলে রাখে। পরে মানুষ বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দিয়ে কাজ করে, আর যাদের জরুরিভাবে পাসপোর্ট দরকার তাদের কাছ থেকে ২/৩ হাজার টাকা নেয়। তাছাড়া আগে কক্সবাজার অফিস থেকে পাসপোর্ট করেছে মেয়াদ শেষ হয়েছে বা অন্যকোন কারনে আবার পাসপোর্ট করতে হচ্ছে সেক্ষেত্রে পুরাতন পুলিশ প্রতিবেদন বের করে দেওয়া তার কাজ। যার ফলে তাকে ২ হাজার টাকা না দিলে সে প্রতিবেদন বের করে না, টাকা না দিলে আবার পাওয়া যাচ্ছে না বলে আবার পুলিশ প্রতিবেদন করতে দিবে বলে। এতে সাধারণ মানুষ ঝামেলা এড়াতে তাকে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে কাজ করে। বর্তমানে সে নিজ এলাকায় নাকি বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছে। চলাফেরা এখন ভিআইপি স্টাইলে আমাদেরকে চিনেই না।
এ ব্যাপারে আবু বক্করের নিজ গ্রাম মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বটতলী গ্রামে খোঁজ নিলে তার প্রতিবেশি খোরশেদ আলম বলেন, এসএসসি পাস করে আবু বক্কর আনসারের চাকরি নিয়েছিল। এখন শুনেছি সে পাসপোর্ট অফিসে চাকরি করে। তবে তার কথা এলাকায় এখন আলোচনা বেশি হয় কারণ সে তার ভিটাতে ৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ৮ রুমের বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছে। আর মাঝে মধ্যে এলাকায় আসলেও হাবভাব অনেক বড় লোকের মত থাকে। সাধারণ মানুষ জানতে চায় এত টাকা কিভাবে আয় করে তার বেতন কত ? তিনি বলেন তার পিতা আবদু শুক্কর একজন দিন মজুরের কাজ করতো তাদের অবস্থা কখনো এত ভাল ছিল না। হঠাৎ তার এত উত্থান দেখে আমরা বিস্মিত। আমরা খবর পেয়েছি আবু বক্করের আরেক ভাই লেদু যে এলাকায় মানবপাচারকারী হিসাবে চিহ্নিত তবে এখন আবু বক্করই মূখ্য আলোচনার বিষয়।
বটতলী গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি নুরুল হক বলেন, আবু বক্করের অস্বাভাবিক টাকা পয়সার কারনে এখন অনেক ছেলেরা বলছে যত টাকাই লাগুক পাসপোর্ট অফিসেই চাকরি করতে হবে। সে এখন কোটি টাকার মালিক বলে সবাই জানে।
এব্যাপারে কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন আগে বর্তমান সহকারী পরিচালক আবু বক্করকে মানুষজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে কানে ধরে উঠবস করিয়েছিল।
এব্যাপারে কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের নাইটগার্ড আবু বক্ক্র বলেন, আমি কোন অপরাধ করলে আমার কর্তৃপক্ষ আছে আমার বিচার করার জন্য বাইরের কারো সাথে কথা বলতে রাজি না। আর আমি কোন বাড়ি তৈরি করছি না।
এব্যাপারে কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম বলেন, কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দৈ.কক্সবাজার

পাঠকের মতামত: