ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বৈঠকের ফাঁকে একান্ত বৈঠক করবেন কেরি-খালেদা

jone-karry-khaleda-ziaআমাদের সময়  :::  মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ঢাকা সফরে আসছেন সোমবার। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিরেধী দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক হওয়া ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে। অন্যান্য বৈঠকগুলোর সময় ও স্থানের ব্যাপারে নিশ্চিত হলেও খালেদা জিয়ার বৈঠকের সময় ও স্থান এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট একজন নেতা বলেছেন, ম্যাডামের সঙ্গে বৈঠক হবে এটা জেনেছি। তবে সময় ও স্থান এখনও বলা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, জন কেরি ও খালেদা জিয়ার বৈঠকের একটি সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে ধরে রেখেই বিএনপি চেয়ারপারসনের তরফ থেকে জন কেরির সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও বিএনপির দুইজন স্থায়ী কমিটির সদস্য উপস্থিত থাকতে পারেন।
সূত্র জানায়, বৈঠক হলে সেখানে বেগম খালেদা জিয়া কেরির কাছে বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব তুলে ধরবেন। দেশের জনগণ এখন কেমন আছে তারা কি চায় তাও জানাবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে তিনি, তার দল যে কাজ করে যাচ্ছে, সেই কথাগুলোও তুলে ধরবেন।
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছিলেন, প্রধান জঙ্গিদের বিচার করে শাস্তি কার্যকর করেছেন সেটাও স্মরণ করিয়ে দিবেন। জঙ্গিদের বিচারের পর তার সময়ে এখনকার মতো জঙ্গিবাদ ছিলো না তাও জানাতে পারেন। এই সরকারের আমলে তা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, নতুন নতুন করে জঙ্গি তৈরি হচ্ছে সেই সব কথাও তুলে ধরবেন। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় নেই বলে এই সব জঙ্গিরা আশ্রয় প্রশয় পাচ্ছেন বলেও মতামত দিবেন।
বিএনপির নীতি নির্ধারণী একটি সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন ও জন কেরির বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে ওই বৈঠকে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। সেই সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরালো করার ব্যাপারেও আলোচনা করবেন। এছাড়াও বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কথা বলতে পারেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় গেলে কি কি সহযোগিতা করবেন সেই আশ্বাসও দিবেন। তাদের শাসনামলে কখনোই কোন জঙ্গিবাদীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না সেটাও নিশ্চিত করতে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারেও ঐক্যমত হতে পারেন। এছাড়াও সম্ভাবনা রয়েছে জন কেরি ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের ফাঁকে কয়েক মিনিটের একান্ত বৈঠক হওয়ার। সেটা হলে আরো অনেক বিষয় দুই জনের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
জিএসপি সুবিধা যাতে বাংলাদেশকে দেওয়া হয় সেই বিষয়টিও নমনীয়ভাবে দেখার অনুরোধ করবেন খালেদা জিয়া। এছাড়াও বাংলাদেশ যাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরো বাণিজ্য সুবিধা পায় সেই ব্যাপারেও অনুরোধ জানাবেন। এছাড়াও খালেদা জিয়া নিউইয়র্কে বিমানের ফ্লাইট চালুর বিষয়টিও দেখার অনুরোধ করবেন।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ দমনের জন্য সরাসরি সহযোগিতা করতে চায়। এই জন্য সরকারের কাছে কয়েকবার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সরকারকে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব দেওয়ার পরও সরকার সেই সহযোগিতা নিতে রাজি হয়নি। বার বারই বলেছে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য দিতে। এছাড়াও আরো বলেছে যখন প্রয়োজন ঠিক তখনই দিবে। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট নয়।
সূত্র জানায়, জন কেরির এবারের সফর অর্ধ দিনের হলেও এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের পারষ্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের বিষয়টি আলোচনায় অত্যন্ত গুরুত্ব পেতে পারে। জন কেরি এই ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে থেকে সরাসরি সহযোগিতা করার প্রস্তাব আবারও দিবেন।
সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমাদের যতখানি যতসহযোগিতা প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের আসলে সুনির্দিষ্ট তথ্য বেশি দরকার। এটা হলে আমাদের জন্য ভালো হবে।
বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বৈঠকের ব্যাপারটি অনেকটা নিশ্চিত। ওই বৈঠকের ব্যাপারে সময় এবং স্থান নির্ধারণ নিয়ে যোগাযোগ চলছে। বিএনপির দলীয় ‍সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে জন করির বৈঠক হবে। তবে এখনও কখন, কোথায় এ বৈঠক হবে তা নিশ্চিত করা হয়নি। বৈঠক হলে তা জন কেরি যে হোটেলে উঠবেন সেখানে হতে পারে। সূত্র জানায়, এবারের ঢাকায় তার সফরের সময়ে নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে তার সফরের জন্য সব ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের তরফ থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার নিরাপত্তা টিমের অগ্রগতি টিম আগেই বাংলাদেশে এসেছে। তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরই জন কেরি আসছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে আগে ভাগে পুরো বৈঠকের সিডিউলও আগে ভাগে বলা হচ্ছে না।

পাঠকের মতামত: