ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

সর্বত্র মেয়াদোত্তীর্ণ পুরাতন গ্যাস সিলিন্ডার

cilindarকক্সবাজার প্রতিনিধি ::

পুরাতন মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে জেলা সর্বত্র। বাসাবাড়ি এবং কলকারখানায় ব্যবহার হওয়া গ্যাস সিলিন্ডার  নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং সেটার মান যাচাই করা বাধ্যতামূলক হলেও সে বিষয়ে কোন ধারনাই নেই ক্রেতা-বিক্রেতা কারো। এর ফলে প্রায় ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা, এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার বিষয়ে বিক্রেতাদের এক কথা তারা ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে সিলিন্ডার কিনে এনে ব্যবসা করছে। অন্যদিকে ক্রেতাদের দাবী বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার তুলে ফেলে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। কক্সাবাজার ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ বলছে বেশিরভাগ অগ্নিকান্ড পুরাতন গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই হয়।
কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, গত সপ্তাহে আমার বাড়িতে নিয়মিত গ্যাস দেয়ার দোকান রুপসা গ্যাস দোকান থেকে আনা সিলিন্ডার দিয়ে গেলে আমি রাতে এসে দেখি বাসা থেকে গ্যাসের গন্ধ উঠছে পরে দেখি সিলিন্ডারের নীচে থেকে কিছুটা গ্যাস লিগ করছে। আর সিলিন্ডারটি এতই পুরাতন যা বলার বাইরে, তাই দ্রুত সিলিন্ডারটি বদল করে এনেছি। তিনি বলেন কিছুদিন আগে আমার প্রতিবেশি এক মহিলা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনের কারণে অগ্নিকান্ডে মারা গেছে। এছাড়া গত মাসে জনতা সড়কে একইভাবে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকান্ড ঘটেছে তবে ভাগ্য ভাল বড় ধরনের দূর্ঘটান ঘটেনি।
কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার বাসিন্দা শাহ আলম বলেন ৫/৬ মাস আগে আমার এক প্রতিবেশির বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটেছে, এতে তাদের বাড়ির ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে সবাই জানে অগ্নিকান্ডের প্রধান কারণ ছিল গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিগ হয়ে আগুন লেগেছে। তারা কালুর দোকার এলাকার আছিয়া এন্টাপ্রাইজ থেকে গ্যাস এনেছিল, সে বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগও করেছিল।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যাপক আকতার আলম বলেন বাসাবাড়িতে ব্যবহার হওয়া গ্যাস সিলিন্ডার গুলোর অবস্থা খুবই করুন, মাঝে মাঝে এতই পুরাতন সিলিন্ডার পড়ে যা ব্যবহার করতে আসলেই ভয় লাগে। এ বিষয়ে আমরা দোকানদারদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে এ গুলো আমরা কিনি না, সরকার দেয় তাই আমাদের কিছু করারা নেই।
রামু উপজেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাস্টার মোহাম্মদ আলম বলেন, আসলেই গ্যাস সিলিন্ডার যে গুলো বাজারে ব্যবহার হচ্ছে সেটা খুবই বিপদজনক। বিশেষ করে এলপি গ্যাস গ্রামের মহিলারা গ্যাস ব্যবহারে আরো অনভিজ্ঞ সেক্ষেত্রে ঝুকি আরো বেশি, আমার জানা মতে গ্রামেই সব থেকে পুরাতন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহান হচ্ছে। গ্যাস সিলিন্ডার যে পরীক্ষা করাতে হয় সেটা ক্রেতা হিসাবে আমি যেমন জানি না তেমন বিক্রেতা হিসাবে তারাও জানে না। এতে করে প্রায় ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটছে। আমার মতে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ন সিলিন্ডার তুলে ফেলা খুবই জরুরী।
এ ব্যাপারে খুরুশকুল এলাকার গ্যাস ব্যবসায়ি আবদুল আলিম বলেন, আমরা এলপি গ্যাস সিলিন্ডার চট্টগ্রাম বা ঢাকা থেকে আনি এ সব গ্যাস সরকারি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ছাড়া এ গ্যাস কেউ দিতে পারে না। সুতরাং সরকার চাইলেই বাজার থেকে পুরাতন গ্যাস সিলিন্ডার বাজার থেকে তুলে নিতে পারে। আর নিজেদের দোকানে গ্যাসের সিলিন্ডার পরীক্ষা করানো বিষয়ে তেমন ধারনা নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে শহরের গোলদিঘির পাড় , বিকেপাল সড়কের কয়েকটি গ্যাস বিক্রেতার দোকানে গিয়ে দেখা গেছে মুলত কিছু আনাড়ি প্রশিক্ষণ ছাড়া কিশোর ছেলেদের দিয়ে বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহের কাজ করা হচ্ছে এসব দোকানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নেই। বেশিরভাগ সিলিন্ডারেই পরাতন এবং মেয়াদোত্তীর্ন তাছাড়া গ্যাসের সিলিন্ডার পরীক্ষার বিষয়ে কোন ধারনাই নেই তাদের। তাদেরও এক কথা তারা ডিলার থেকে কিনে এনে বিক্রি করছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মোঃ আবদুল মালেক বলেন, প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক, মূলত এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবে মানুষ বড় ধরনের বিপদে পড়ছে। তিনি বেলন সম্প্রতি বেশিরভাগ অগ্নিকান্ডের প্রধান কারণ হচ্ছে রান্নার চুলা আগুন। আর রান্নার চুলার আগুনের প্রধান কারন হচ্ছে পুরাতন মেয়াদোত্তীর্ন গ্যাস সিলিন্ডার। আমার মতে এ বিষয়ে সবার সচেতন থাকা দরকার।

পাঠকের মতামত: