ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কর্মকর্তা সংকটে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম স্থবির

তুষার তুহিন, কক্সবাজার :::
কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ২৮। এর বিপরীতে কাগজে কলমে ১৯ জন  কর্মরত থাকলেও কর্মস্থলে রয়েছেন ১৭ জন। এছাড়া শূন্য রয়েছে আরডিসি, এনডিসি, এলও, জেসিওসহ আরো ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের পদ। ফলে কর্মকর্তা সংকটে পড়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম হয়ে পড়েছে স্থবির।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক সহ ১ জন ডিডিএলজি, ৪ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ২ সিনিয়র সহকারী কমিশনার, ৩ জন সহকারী কমিশনার ও শিক্ষানবীশ ৯ জন সহকারী কমিশনার কর্মরত রয়েছে।
কর্মরত দুই জন সিনিয়র সহকারী কমিশনারের মধ্যে শহিদুল ইসলাম আরআরসি অফিসে সংযুক্ত রয়েছে। এছাড়া অপরজন আল মামুন ভুইয়া চট্টগ্রামে বদলি হয়েছেন সম্প্রতি। তাছাড়া ৩ জন সহকারী কমিশনারের মধ্যে অভিষেক দাশ যোগদানের পর থেকেই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিসে সংযুক্ত রয়েছে। এছাড়া ৯ জন শিক্ষানবীশ সহকারী কমিশনারের মধ্যে চলতি মাসের শুরুতে বদলীর আদেশ হয়েছে দুই জনের। এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু বক্কর ছিদ্দিক রংপুর বিভাগে ও রাফিউল আলম রাজশাহী বিভাগে বদলী হয়েছেন।  পাশাপাশি নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট ফাহমিদা বেগম, ইমরুল কায়েস ও শাহরিন ফৈরদৌস সম্প্রতি ৬ মাসের আইন ও প্রশাসন বিষয়ক ৬ মাসের ট্রেনিং গ্রহন করেছেন। তাদেরও শ্রীঘই বদলির আদেশ আসবে।  অন্য ৪ জন নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট প্রশিক্ষনসহ বিভিন্ন কারণে জেলার বাইরে অবস্থান করেন। এর পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে রয়েছে আরডিসি, এনডিসি, এলও, জেসিওসহ আরো ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের পদ। ফলে কর্মকর্তা ও নির্বাহি সংকটে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কার্যক্রম, বাজার মনিটরিং সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযান, জেলার আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন এবং অফিসের দৈনিন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়ে দূ:রহ হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার জেলায় প্রায় প্রতি সপ্তাহে দু চারজন ভিআইপির আগমন ঘটে। কর্মকর্তা সংকটের কারণে তাদের প্রটৌকল দিতেও হিমশিম খাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া সরকারের ১৫ টি উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে এ জেলায়। যার ভুমি অধিগ্রহন করা সহ কার্যক্রম পরিদর্শন করা দু:রহ হয়ে উঠেছে জেলা প্রশাসনের।
খোজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের ভুমি অধিগ্রহন শাখায় দুই হাজারের উর্ধ্বে লোকজনের আবেদন জমা রয়েছে। কিন্তু ভুমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা না থাকায় সেই সব জমি অধিগ্রহন করওতে পারছে না জেলা প্রশাসন। ফলে সরকারের উন্নয়ন কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার না থাকায় প্রায় তিন হাজার  লোন মামলার কোন অগগ্রতি হচ্ছে না। এছাড়া আরডিসি পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত।  পাশাপাশি কর্মরতদের উপর অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকায় কোন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে অপর এক সহকারি কমিশনার ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, তাদের প্রত্যেক ম্যাজিস্ট্রেটের মাথায় ৪/৫টি করে শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে কোন কাজই সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ারুল নাসের জানান,কর্মকর্তা সংকটের কারণে ভিআইপি প্রটৌকশন, বীচ ম্যানেজমেন্ট, উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন, ভ’মি অধিগ্রহন সহ লোন মামলা নিস্পত্তি করতে হিমশিম খাচ্ছে জেলা প্রশাসন । মূলত শিক্ষানবীশ সহকারী কমিশনার দিয়ে এসব কাজ চালানো হলেও অভিজ্ঞতার অভাবে তারা এসব কাজ সূচারূরুপে সম্পন্ন করতে পারছে না। এছাড়া শিক্ষানবীশরা বেশীরভাগ প্রশিগ্রহনের জন্য জেলার বাইরে অবস্থান করেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, ম্যাজিস্ট্রেট বা সহকারি কমিশনারা না থাকার কারণে চলমান কাজ চালানো দুরহ হয়ে পড়েছে। একজনকেই অনেক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
মূলত কক্সবাজারে কর্মরত ৪ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককেই করতে হচ্ছে জেলার যাবতীয় কাজ। যা একেবারেই অসম্ভব ।
তিনি আরো জানান, কক্সবাজার পর্যটন শহর। এই জেলায় অন্যান্য জেলার চেয়ে অনেক দায়িত্ব বেশী পালন করতে হয়। এছাড়া একসাথে এ জেলার উন্নয়নে সরকার ১৫ টি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর নির্মান, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, সাবরাং এক্সক্লুসিভ জোন, দোহাজারী- কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। এসব প্রকল্পও  কর্মকর্তার অভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছেনা। বিষয়টি বিভাগীর কমিশনার সহ সংশ্লিষ্ঠ উর্ধত্বন মহলে কয়েকদফা অবিহিত করা হয়েছে। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। এমন চলতে থাকলে কক্সবাজারের উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে।

পাঠকের মতামত: