ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় বিরোধে জের পার্টনারকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা, বিক্ষুদ্ধ জনতার হামলা, অফিস ভাংচুর ও পুলিশসহ আহত-১৫জন

Chakaria Picture  19-08-2016এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সিন্ডিকেট ব্যবসার বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন রাতের আঁধারে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে রফিক উদ্দিন (৪৮) নামের এক ব্যবসায়ীকে। বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার উপকুলীয় বদরখালী ইউনিয়নে ঘটেছে এ হত্যার ঘটনা। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় জনগনের খবরের ভিত্তিতে স্বজনরা নিহতের লাশ ইউনিয়নের ৩নম্বর ব্লকের বদরখালী সমিতির মালিকানাধীন বড় মাঠ লবণ ও চিংড়ি প্রকল্প এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে।

এদিকে হত্যার ঘটনায় বদরখালী বাজারস্থ সিন্ডিকেট অফিসের লোকজন জড়িত থাকার অভিযোগে আজ শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে নিহতের স্বজন ও বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি হামলা চালিয়ে সিন্ডিকেট অফিসে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওইসময় বিক্ষুদ্ধ জনগনের সাথে পুলিশের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫জন কমবেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আহত চার পুলিশ সদস্যকে রাত ৯টার দিকে উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত রফিক উদ্দিন বদরখালী ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবু ছৈয়দের ছেলে।

নিহতের স্বজনরা জানান, রফিক উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে বদরখালী বাজারস্থ সিন্ডিকেট অফিসের মাধ্যমে লবণ ও চিংড়ি মাছের ব্যবসা করে আসছিলেন। নিজের টাকা বিনিয়োগ করার পাশাপাশি রফিক আরো একাধিক আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব থেকে টাকা নিয়ে সিন্ডিকেট অফিসে দেন। প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট অফিসটি নিয়ন্ত্রন করেন বদরখালী ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান খাইরুল বশর। অভিযোগ উঠেছে, বিগত ইউপি নির্বাচনে খাইরুল বশর সিন্ডিকেট অফিসের সদস্যদের গচ্ছিত বিপুল টাকা নিজে খরচ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ঘটনার দিন বুধবার (১৭আগষ্ট) রাতে সিন্ডিকেট অফিসের বেশির ভাগ সদস্য উপস্থিত থেকে হিসাব করছিলেন।

নিহতের ভাই আওয়ামীলীগ নেতা ওয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, বুধবার রাতে অফিসে বসে হিসাব করার সময় তার ভাই রফিক উদ্দিন সিন্ডিকেট অফিস থেকে পাওনা প্রায় এক কোটি ৭০লাখ টাকা ফেরত দাবি করেন। ওইসময় সিন্ডিকেট অফিসের প্রধান চেয়ারম্যান খাইরুল বশরসহ কয়েকজন মিলে তাকে (রফিক উদ্দিন) কথা আছে বলে অফিস থেকে বাইরে ঢেকে নেন। তিনি বলেন, এরপর রাতের আঁধারে তাকে (রফিক উদ্দিন) পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় ইউনিয়নের ৩নম্বর ব্লকের বদরখালী সমিতির মালিকানাধীন বড় মাঠ লবণ ও চিংড়ি প্রকল্প এলাকায়। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, সিন্ডিকেট অফিস থেকে পাওনা টাকা ফেরত চাইতে যাওয়ার কারনে তাঁরা রফিক উদ্দিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে ব্যবসায়ী রফিক উদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় সিন্ডিকেট অফিসের লোকজন জড়িত থাকার ঘটনাটি আঁচ করতে পেরে আজ শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে নিহতের স্বজন ও বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি হামলা করে বদরখালী বাজারস্থ সিন্ডিকেট অফিসে। ওইসময় তাঁরা অফিসে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। ঘটনার খবর পেয়ে পাশের বদরখালী নৌ-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে চেষ্টা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা চকরিয়া নিউজকে  জানান, ওইসময় ঘটনাস্থলে পুলিশের সাথে বিক্ষুদ্ধ জনগনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫জন কমবেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আহত চার পুলিশ সদস্য এসআই মো.ইসমাইল (৩৫), এএএসআই জয়নাল আবেদিন (৩০) কনস্টেবল আবদুল মতিন (৫৫) ও কনস্টেবল মিরাজ উদ্দিনকে (৩২) রাত ৯টার দিকে উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আবদুল মতিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।

স্থানীয় লোকজন চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন, ঘটনার পরপর সিন্ডিকেট অফিসের প্রধান চেয়ারম্যান খাইরুল বশরসহ তার সহযোগি অন্য ব্যবসায়ীরা অফিস ফেলে পালিয়ে গেছে। ঘটনার ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য সিন্ডিকেট অফিসের প্রধান বদরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল বশরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার মুঠোফোনের সংযোগ বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

আজ রাত সাড়ে ৯টার দিকে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.জহিরুল ইসলাম খাঁন চকরিয়া নিউজকে বলেন, বদরখালী বাজারে হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। তিনি বলেন, রফিক উদ্দিন নিহত হওয়ার ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোন তথ্য নেই। এব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগও করেনি।

পাঠকের মতামত: