ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

‘ঘরর সিন্নি পরে খায়, ওছনি কদ্দা লই বেরায়’

অবশেষে বঙ্গ বাহাদুরকে বাঁচানো গেল না!

-এম.আর মাহমুদ :bangabahadur elephent hati

বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। ভারতের বনের হাতি বানের পানিতে ভেসে এসে আশ্রয় পেয়েছিল বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের মাটিতে। আশ্রয় পেলেও সেই বিশাল হাতিটি শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না। ভারত ও বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞরা হাতিটি উদ্ধার করার জন্য অনেক মেহনত করলেও শেষমেষ ভারতের বিশেষজ্ঞ দল তাদের বন থেকে ভেসে আসা হাতিটি উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়ে স্বদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু দেশীয় বিশেষজ্ঞ দল ‘একবার না পারিলে, দেখ শতবার’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বার বার চেষ্টা করে চেতনাশক ইনজেকশন দিয়ে বশে এনে হাতিটি ছিকল ও রশি দিয়ে বেঁধে আটকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করেও সফল হয়নি। পুনরায় চেতনাশক ইনজেকশন প্রয়োগের BANGABAHADUR-HATI-ELEPHENTমাধ্যমে আটকিয়ে চার পা খুঁটিতে বেঁধে রাখতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বঙ্গ বাহাদুর প্রাণ হারায়। আঞ্চলিক একটি প্রবাদ রয়েছে ‘ভিক্ষুককে হাতি উপহার দিয়ে লাভ নাই’ কারণ, ভিক্ষুক যেখানে নিজে বাঁচতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে বনের হাতি পুষবে কিভাবে? বানের পানিতে হাতি ভেসে আসার মত ঘটনা অতীতে ঘটেছে কিনা জানা নেই। এই প্রথম ভারতের বন্যার পানির সাথে জীবিত হাতি ভেসে আসা দেশের জন্য নজিরহীন ঘটনা। প্রতি বছর ভারতের বিভিন্ন নদীর পানিতে বাংলাদেশের বিশাল অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিশাল অংশের মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বেশিরভাগ মানুষ সরকারি বেসরকারি ত্রাণের অপেক্ষায় তীর্থের কাকের মত দিন কাটায়। বানের পানি কমে গেলেও কমে মানুষের দুর্ভোগ। প্রতি বছর ভারতের বন্যার পানিতে কোন কিছু ভেসে না আসলেও এবার বিলুপ্ত প্রায় বন্যহাতি হাতিটি ভেসে এসে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জানি না আগামীতে কি আসে? সামনে ঈদুল আযহা, সে কারণে বানের পানির সাথে কয়েকটি গরু ভেসে আসলে দেশের মানুষ খুশি হতো। কিন্তু তা হয়নি। ভারত সীমান্ত হয়ে গরু ক্রয় করতে গিয়ে এদেশের বেশুমার মানুষ ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর গুলিতে প্রাণ হারানোর জ্বলন্ত প্রমাণ ভুরি ভুরি। এছাড়া ফেলানির করুণ মৃত্যু এখনও দেশের মানুষের হৃদয়ে এখনও নাড়া দেয়। যাক এসব কথা বলে লাভ নাই। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ভূমিকা উল্লেখ করার মতই। হয়তো সেইদিন ভারতের নিজ ভূখন্ডে এ দেশের দামাল ছেলেদের আশ্রয় দিয়ে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা না করলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশ স্বাধীন করতে বাঙ্গালী জাতিকে আরো অনেক খেশারত দিতে হতো। এ কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করলে আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে চিহ্নিত হবো। ভারতীয় বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ দল বঙ্গ বাহাদুরকে উদ্ধার করতে এসে তারা আশাহত হয়ে স্বদেশে ফিরে গেলেও দেশের বিশেষজ্ঞরা বিশাল আকৃতির বঙ্গ বাহাদুরকে নিয়ে অনেক টানা হেঁচড়া করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অপরদিকে বঙ্গ বাহাদুরের পদাঘাতে এক মাহুতের অবস্থা ত্রাহি মধুসূদন। বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ এক সময়ের উপ-বনসংরক্ষক ড. তপন বাবু বড় শখ করে হাতিটির নাম দিয়েছিল বঙ্গ বাহাদুর। তিনি বন্যপ্রাণিদের সংরক্ষণের জন্য ডুলাহাজারা ও গাজীপুরে পৃথক পৃথকভাবে দুটি সাফারী পার্কের সফল জনক। প্রাণিকূলের প্রতি তার মায়া মমতা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন ভেটেরিনারী সার্জেন্ট নিয়ে হাতিটি বশে আনার জন্য ২ বার চেতনাশক ইনজেকশন দিয়েছে ট্যাংকুলেজার গানের মাধ্যমে। বানের পানিতে ভেসে আসা হাতিটি প্রায় দেড়মাস পানিতে আটকা ছিল। যথাযথ খাবার সামগ্রী ও উপযুক্ত পরিবেশ পায় নাই। হয়তো স্থানীয় মানুষের ভিড়ে অতিষ্ট ও বিরক্তও ছিল হাতিটি। যাক ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে টেকনাফের বিজিবি কর্তৃক উদ্ধার করা একটু অসুস্থ দুগ্ধপোষ্য হাতির বাচ্চা (আইরিন) কে ১৬ লিটার লেকট্রোজেন-২’র কৃত্রিম দুধ পান করাতে করাতে এখন ৩২ লিটার দুধ পান করাচ্ছে সাথে শতাধিক কলাও সাবাড় করছে। ফলে আইরিন এখন একটি পরিপূর্ণ হাতিতে পরিণত হয়েছে। এ হাতির বাচ্চা এখন যে কোন পর্যটককে দেখলে শুঁট উঁচু করে অভিবাদন জানান। হয়তো হাতির বাচ্চাটি ছোট ছিল বলে যথাযথভাবে পার্ক হাসপাতালের কর্মচারী দিদার কর্তৃক লালন পালন হওয়ায় এখন পুষ মেনেছে। ছোট ময়না পাখি লালন পালন করলে পুষ মানে, মানুষের ভাসায় কথা বলে। কিন্তু বয়স্ক ময়না খাঁচাবদ্ধ করে রাখলেও পুষ মানা সম্ভব হয় না। এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশে যেসব বন্যপ্রাণি রয়েছে তা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে বাইরের হাতি বানের পানিতে ভেসে আসলেও তা নিয়ে এত টানা হেঁচড়া করার প্রয়োজন হবে না। এছাড়া গত এক যুগে কক্সবাজার জেলার বনাঞ্চলে বন্যহাতির তান্ডবে ২ শতাধিক নারী-পুরুষ প্রাণ হারিয়েছে। শুধুমাত্র একটি ভারত থেকে ভেসে আসা বন্যহাতি উদ্ধারের জন্য ভারতীয় বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ দল হাতি উদ্ধারের আশা ছেড়ে স্বদেশে চলে গেলেও। দেশীয় বিশেষজ্ঞরা হাল ছাড়েনি। এ খাতে যে পরিমাণ পরিশ্রম ও ব্যয় হয়েছে তা দিয়ে সাফারী অথবা চিড়িয়াখানায় কয়েকটি বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণি যোগাড় করা যেত। বঙ্গ বাহাদুরের উদ্ধার অভিযান দেখে প্রবীণ এক ব্যক্তি রসিকতা করে মন্তব্য করতে শোনা গেছে, ‘ঘরর সিন্নি পরে খায়, ওছনি কদ্দা লই বেরায়’।

 

পাঠকের মতামত: