ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পরীর মা (শিশুতোষ গল্প)

ুুুুু:::: ইরফানা তুষি ::::

কুলসুম বেগম ১-২দিন যাবত মাঝ রাতে ছোট মেয়ে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনছেন। আর কান্নার আওয়াজটা মনে হচ্ছে এ বাড়ির শিউলী গাছের কোনা হতে আসছে। এমন কান্নার আওয়াজ উনি আগে কখনও শুনেননি। এই কান্নার মধ্যে কি যেন একটা আছে।মিজান সাহেবকে তা বলা হচ্ছে কিন্তু উনি তা কিছুতেই শুনতেই চাচ্ছেন না। মিজান সাহেবের ধারনা বারো বছরের বিবাহিতা জীবনে এখনো সন্তানের মুখ দেখতে পারেননি বলে কুলসুম বেগম এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলেন।

বাজার থেকে বাসায় ফিরছিলেন মিজান সাহেব। বাসায় ঢুকতে গিয়েই থমকে গেলেন তিনি। একটি ছোট মেয়ে তার বাড়ির গেটের পাশে বসে কাঁদছে। মেয়েটার বয়স আর কতো হবে,সাত কি আট। তার গায়ের রঙ বেশ ফর্সা,বেশ ফর্সা না বলে দুধের মত সাদা বলাই ভালো। চোখ দুটো হরিণের চোখের মত মায়াবী। মিজান সাহেবের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে মেয়েটা । আগে কখনও এই মেয়েকে উনি দেখেননি। কার না কার জানি মেয়ে।

এই মেয়ে তোর নাম কি ?

আমার কোন নাম নাই বলে আবার কাঁদা শুরু করল।

কোথায় থাকিস তুই ?

জানিনা।

এখানে এলি কি করে ?

জানিনা।

তোর বাবা-মা কোথায় ?

জানিনা।

আজব মেয়ে’ত! সবকিছুতেই বলে জানিনা।

অতটুকুন একটা মেয়েকে বাইরে ফেলে যেতেও ইচ্ছে করছেনা। প্রায় রাত হয়ে যাচ্ছে।

আমার সাথে যাবি ? মেয়েটি মাথা নাড়াল।মিজান সাহেব বাসার ভিতরে নিয়ে গেলেন।

পরদিন অনেক খোঁজা-খুঁজি করে থানায় ডায়েরী করেও মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেলনা। মিজান সাহেব মেয়েটিকে নিজের বাসায় রাখতে রাজি ছিলেন না কিন্তু স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে না করতে পারলেন না।

মেয়েটির চেহারা পরীর সুন্দর মত বলেই কুলসুম বেগম নাম রাখলেন পরী।

পরী এসে ওদের শুণ্য ঘরটা ভরিয়ে দিল। কুলসুম বেগম ও মিজান সাহেবের আনন্দের কোন সীমা রইলনা।

পরীর পড়ার প্রতি খুব আগ্রহ দেখে ওকে স্কুলেই ভর্তি করে দেওয়া হল।মাঝে মাঝে মেয়েটা একা একাই কি কি জানি বলতে থাকে । কিছু অদ্ভুত আচরন ও লক্ষ্য করা যায়। আশে-পাশের মানুষ সেটাই বলে। কিন্তু এগুলো নিয়ে কুলসুম বেগম কোন মাথা ঘামান না।

পরীর মত সুন্দর হওয়াতে স্কুলের সবাই পরীকে খুব আদর করে। স্কুলে যা ঘটে বাসায় সে তাই বলে। এমন কি ঘুমের মধ্যে একদিন সে বলছে এখন কি লিখব সুমি মেম। পরীর বাবা-মা’ত অবাক!

পরী ঘরে আসার পর থেকে সবকিছুতেই কেমন যেন উন্নতি হচ্ছে। মিজান সাহেবের ব্যবসার উন্নতি হচ্ছে, ঘরের রান্না বান্না অনেক সুস্বাদু হচ্ছে।

বাগানে বেশি বেশি ফুল ফুটছে, প্রজাপতিরা আসছে, মৌমাছিরা ফুলে ফুলে মধু খাচ্ছে, পাখিরা গান গাইছে। আর পরীও ওদের সাথে কি যেন কথা বলে ফিসফিস করে। ছেলে মানুষ ভেবে কুলসুম বেগম কিছু বলেন না।

পরীকে যেদিন পাওয়া গেল সেদিনটাকেই পরীর জন্মদিন হিসেবে নির্বাচন করা হল।

জন্মদিন উপলক্ষে অনেক মেহমান এলো বাড়িতে। কিন্তু পরী কে দেখে সবাই অবাক হয় এত সুন্দর মেয়ে আগে কেউ কখনো দেখেনি। পরীর মা অনেক অনেক রান্না-বান্না করলেন। সবাই মিলে অনেক মজা করে কেক কাটল।  মেহমানদের টেবিলে বসিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখেন সব খাবার বিড়াল খেয়ে ফেলেছে। কুলসুম বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসলেন।

মিজান সাহেব ডাকছেন কই গো পরীর মা খাবার নিয়ে এসো। কুলসুম বেগম বসে বসে কাঁদছে কি করবে বুঝতে পাচ্ছেন না। দেরি দেখে মিজান সাহেব পরীকে রান্না ঘরে পাঠালেন। পরী রান্না ঘরে গিয়ে দেখে কুলসুম বেগম মাথায় হাত দিয়ে কাঁদছেন। মায়ের কান্না দেখে পরীর সহ্য হলনা, সে মায়ের মাথায় হাত রেখে বলল কেঁদোনা মা আমি সব রান্না করে দিচ্ছি। এই বলে পরী চোখ বন্ধ করতেই হাতে একটা স্টার চলে এলো। এই স্টার এর সাহায্যে জাদু দিয়ে এক নিমিষেই সব রান্না-বান্না করে ফেলল।

পরীর মা অবাক হয়ে বলল কে রে তুই ?

আমি পরী।

সেটা ত আমার দেওয়া নাম।

আমি মানুষ নই আমি পরী।

পরী কেঁদে কেঁদে বলা শুরু করল,আমার সৎমা আমাকে খুব মারত,আমি পড়তে ভালোবাসতাম বলে সব বই ছিড়ে ফেলতো তাই আমি তোমাদের কাছে এসে ছিলাম পড়াশোনা করার জন্য।

কুলসুম বেগম পরীকে জরিয়ে ধরে আদর করে বললেন তোকে আর কোথাও যেতে হবেনা,তুই সারাজীবন আমার মেয়ে হয়েই থাকবি।

পাঠকের মতামত: