ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

হযরত শাহ ওমর (রাঃ) মাজারে সিদ্ধিবাবারা এসব কি করছে?

এম.আর মাহমুদ, চকরিয়া ::: :
চকরিয়া উপজেলাস্থ ঐতিহ্যবাহী কাকারা ইউনিয়নের ঐতিহ্যেরই একটি অংশ হযরত শাহওমর (রাঃ) মাজার। সম্প্রতি মাজারে এক শ্রেণির উৎশৃঙ্খল সিদ্ধিসেবকের অত্যাচারে মাজারে আগত শত শত ভক্ত অনুরক্ত নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহে মাজারের আসা সিদ্ধিসেবিদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে শিকার হয়েছে এক গৃহবধুসহ অপর এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। দুজনই কাকারার নাগরিক। তাদের মৃত্যু কোনমতেই মেনে নিতে পারছে না মাজারে ভক্ত, অনুরক্ত ও কাকারাবাসী। শত বছর ধরে অসংখ্য ভক্ত অনুরক্ত পুণ্যের আসায় জিয়ারত, মানত ও সিন্নি নিয়ে আসে মাজারে। তাদের উদ্দেশ্য কি আল্লাহই ভালো জানে।
এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে বসে মজমা। কেউ কেউ জিকির-ফিকির নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও অন্যদিকে খারাপ প্রকৃতির কিছু লোক সিদ্ধিসেবনে ব্যস্ত থাকে। কিছু সংখ্যক সিদ্ধিসেবনকারীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে ধার্মিক শ্রেণির মাজার ভক্তরা। সিদ্ধিসেবকদের মাজার এলাকা থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা না করলে পূর্ণার্থীরা মাজারে যাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।
গত ৫ আগস্ট সকালে সিদ্ধিসেবনকারী কাকারার মাইজ পাড়া গ্রামের আশরাফ আলীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছে তার স্ত্রী ৪ সন্তানের জননী নূর নাহার বেগম (৪০)। এ কারণে এলাকাবাসী স্বামী আশরাফ আলীকে পুলিশের সোপর্দ করেছে। বর্তমানে আশরাফ আলীর শ্রী ঘরে নিহত নূরুন্নাহার কবরে, আর ৪ সন্তান এতিম অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। এর আগের দিন একই গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে ২ শিশু পানিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
এ শোকের রেস কাটতে না কাটতেই গত ১২ আগস্ট রাত সাড়ে ৯ টায় মাজারের উত্তরাংশের পুকুর পাড় থেকে কাকারা কসাই পাড়ার রুহুল কাদের নামক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এলাকাবাসীর মতে একদল বহিরাগত সিদ্ধিসেবনকারী দলের সভ্যদের অসভ্য আচরণের বলী হয়েছে ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমির হোসেনের পুত্র রুহুল কাদের। পবিত্র মাজারে এসব কি হচ্ছে কারও মাথায় আসছে না। এলাকাবাসীর অভিমত, হযরত শাহওমর (রাঃ) মাজার পবিত্র স্থান। এখানে রয়েছে কাকারার কেন্দ্রীয় কবরস্থান। যেখানে শায়িত আছে অসংখ্য নর-নারী। কিছু কথিত বিড়াল তপশী মাজারে মজমা নামে গাজার নেশায় বিভোর হয়ে পরিবেশ বিষাক্তকর করছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকেই নাজেহাল হয়েছে এসব সিদ্ধিসেবনকারীদের হাতে।
এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী কাকারা ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা মাজার কেন্দ্রিক সিদ্ধিসেবনকারীদের কারণে ভেঙ্গে পড়বে তা হতে দেয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মাজারের গদিনশিন খাদেমদের বসে থাকার কোন সুযোগ নেয়। অবিভক্ত কাকারার ঐতিহ্যেরই একটি অংশ হাজারো স্মৃতি বিজড়িত হযরত শাহওমর (রাঃ) মাজার। শত বছরের ঘোড়ার দৌঁড় মেলা। মানিকপুরের মসজিদ, রাখাইনদের কিয়াং, বীর কমলার দীঘি সহ অসংখ্য বড় বড় পুকুর, ১৮২৮ সালের প্রতিষ্ঠিত মানিকপুরের বার্মিজ প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনও বিদ্যমান। বর্তমানে কাকারাকে বিভক্ত করে বমুবিল ছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর নামক দু’টি পৃথক ইউনিয়ন।
এছাড়া হালকাকারাকে চকরিয়া পৌরসভায় অন্তর্ভূক্ত করেও কাকারা ইউনিয়ন সমহিমায় বিদ্যমান রয়েছে। কিছু কিছু ঠোঁট কাটা মানুষের অভিমত, থানা থাকলে দালাল থাকবে, মাজার থাকলে ফকির, দরবেশ ও গাজাসেবি থাকাটাই স্বাভাবিক। একটার সাথে আরেকটার মিল রয়েছে। শীতকালে খেজুর গাছে যেমন কলসি মানায়, তেমনই। পবিত্র স্থানে অপবিত্রকারীদের স্থান হতে পারে না। দুধের সাথে গোলের যেমন সংমিশ্রণ হয় না, তেমনই হওয়ার কথা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে হযরত শাহওমর (রাঃ) মাজারের ঐতিহ্য বলতে কিছুই থাকবে না। একদিন কাকারার জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি করতে হবে জনতার আদালতে।
কাকারায় জন্ম নিয়েছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সাংবাদিক মরহুম আব্দুর রশিদ ছিদ্দিকী, চকরিয়া সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, চকরিয়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম সদস্য কাকারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, বিশিষ্ট আলেমেদীন মরহুম আশরাফ আলী, মাওলানা আবুল কাসেম, মুক্তিযোদ্ধাকালীন সময়ের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের ছাত্রনেতা শহীদ আবদুল হামিদের জন্মস্থান কাকারা। তাই প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে কাকারাবাসীর আবেদন হযরত শাহওমর (রাঃ) পবিত্র মাজার অপবিত্রকারী সিদ্ধিসেবনকারীদের দখল থেকে মুক্ত করা না হলে এ মাজারের গুরুত্ব একদিন হারিয়ে যাবে। বিজ্ঞজনদের অভিমত ফুল বাগানের সৌন্দর্য নষ্ট করতে হুতোম পেঁচাই যথেষ্ট। অপরদিকে হিন্দু পণ্ডিতদের অভিমত, হিন্দু সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তির বাড়িতে পেঁচা প্রবেশ করলে অলক্ষণ শুরু হয়। এ অলক্ষণ কাটাতে গোয়াই পুঁজার আয়োজন করতে হয়। অন্যথায় বিপদ সারে না। কাকারাবাসীকে শাহওমর (রাঃ) মাজারাঙ্গন পবিত্র করতে কি করতে হয়, তা আল্লাহই জানে। যেখানে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলের সৌরভ ছড়ানোর কথা, সে ফুলের টবে গাজার চাষ করার অপরাধে দু’জন ছাত্রলীগ নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করেছে। যে দেশে মাতবরের পায়ে কাদা, সেখানে মাছ চুরির বিচার দেব কারে? আমজনতা তা খুঁজে পাচ্ছে না।

পাঠকের মতামত: