ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে আরএসও জঙ্গীদের গোপন বৈঠক

cnএইচএম এরশাদ, কক্সবাজার :: 

টেকনাফে বিজিবির অভিযানে আটক সাবেক আরএসও নেতা ও জঙ্গী সংগঠন ইত্তেহাদুল জামিয়াতুল ইসলামের সভাপতি হাফেজ ছলাহুলসহ তিন জঙ্গীকে মুক্ত করতে ব্যাপক তদ্বিরে নেমেছে তাদের অনুসারীরা। তাদের মুক্ত করার লক্ষ্যে দেশে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গীরা বিদেশী জঙ্গী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে চলছে বলে জানা গেছে। এ জন্য হাফেজ ছলাহুলের লিংকরোডস্থ প্রতিষ্ঠানে তার অনুসারী কয়েক জঙ্গী দফায় দফায় গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্ব শেষ শনিবার রাতে জেএমবি ও আরএসও নেতাদের মধ্যে যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ছলাহুলের পরিচালনায় লিংকরোড মুহুরিপাড়ার ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টারে গোপন আস্তানায়। ওই বৈঠকে মৌলভী শামসু ওরফে বাইট্টা শামসু, হাফেজ খায়রুল আমিন, মৌলভী মো: হোছাইন, মৌলভী আব্দুল হামিদ, মৌলভী আজিজ উদ্দিন, মো: হাসেম, আমান উল্লাহ ও মৌলভী হোছন উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্রে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও পশাসনের লোকজন জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তৎপর দেখে লিংকরোড, বাসটার্মিনাল ও ছলাহুলের মাদ্রাসায় যাওয়ার রাস্তার মাথায় একাধিক স্থানে লোকজনকে পাহারা বসিয়ে জঙ্গীরা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছে বলে সূত্র দাবি করেছে। বিজিবি’র দায়েরকৃত মামলার পলাতক আসামি আরাকান বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের জঙ্গী নেতা মাস্টার আয়ুবের পরামর্শে জঙ্গীদের মধ্যে এ গোপন বৈঠক অনুষ্টিত হয়েছে বলে সূত্রটি আভাস দিয়েছে। ওই বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত জানা না গেলেও তবে আটক জঙ্গীদের মুক্তির দাবীতে রোহিঙ্গা এবং আরএসও’র অর্থায়নে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা মাদ্রাসা-এতিমখানার ছাত্র-ছাত্রীদের জড়ো করে মানববন্ধন ও প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেয়ার বিষয়টি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান এইচকে আনোয়ার সাংবাদিকদের কাছে অনেকটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, হ্নীলাতে দীর্ঘ বছর ধরে ধৃত হাফেজ ছলাহুলের নেতৃত্বে উন্মুক্তভাবে জঙ্গী সংগঠনের কার্য্যক্রম চলছে। আশঙ্কাজনক হারে এখনও জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। পানখালী ও সিকদারপাড়া এলাকায় জঙ্গীরা অনেকটা শেকড় গজিয়েছে। বার্মাইয়্যা মৌলভী শামসু, আবদুল হামিদ এবং হাফেজ খায়রুল আমিন আরএসও নেতা হাফেজ ছলাহুলের বিশ্বস্থ প্রতিনিধি। আওয়ামী লীগ নেতা এইচকে আনোয়ার আরও জানান, তাদের নেতৃত্বে সক্রিয় একটি সিন্ডিকেট এখান থেকে পুরো টেকনাফের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাদের গতিবিধি সন্দেহ জনক। তিনি ওসব চিহ্নিত ব্যক্তির উপর প্রশাসনিক নজরদারী বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। হাফেজ ছলাহুল, মৌলভী আজিজ ও রফিক সহ ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় আরএসও জঙ্গীদের স্পর্দা বেড়ে গেছে। বাহারছড়ায় গোপন বৈঠককালে যৌথ অভিযানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মৌলভী ছৈয়দ করিমের বাড়ি থেকে সৌদি নাগরিক, আরএসও’র সাবেক কমান্ডার জঙ্গী সংগঠন ইত্তেহাদুল জামিয়াতুল ইসলামের সভাপতি হাফেজ ছালাহুল ইসলাম, টাঙ্গাইলের মাওলানা মো: ইব্রাহীম ছৈয়দ করিমকে গ্রেফতার করায় অত্যন্ত খুশি হয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, জঙ্গী কার্যক্রম সহজে চালাতে এবং প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিতে কয়েকজন মৌলভী ক্ষমতাশীনদলের নেতা সেজেছে। আসলে তারা দেশ ও দশের মঙ্গল কামনা করে না। বিজিবি সূত্র জানায়, হাফেজ ছলাহুল ইসলামসহ ধৃত ৩জন, মৌলভী আজিজ তার সহোদর মৌলভী রফিকসহ ৮জনকে পলাতক আসামি করে মোট ১১জনের বিরুদ্ধে বিজিবি সদস্য বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় টেকনাফ থানা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাকিম আটক ৩জনের প্রত্যেকের ৭দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) মো: কবির হোসেন বলেন, অধিকতর তদন্তের জন্য আসামিদের রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একাধিক সূত্র জানায়, ধৃত আসামিদের রিমান্ডে নেয়ার আগেই নানা রকমের তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গীদের অনুসারিরা। পলাতক আসামি দুই সহোদর (আজিজ-রফিক) মামলার তালিকা থেকে বাদ যেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। তারা খরচ করে চলছে অঢেল টাকা। পলাতক আসামি ছাড়াও গ্রেফতার আতঙ্কে আরএসও-জেএমবি ক্যাডার অনেকে আবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও উখিয়ার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানা গেছে।

সচেতন মহল জানান, গত শনিবার আরএসও ক্যাডারদের সহযোগি টেকনাফের বাহারছড়ার মৌলভী ছৈয়দ করিমের বাড়িতে গোপন বৈঠক কালে জঙ্গী নেতা ছলাহুলসহ তিনজনকে গ্রেফতারের পর শরণার্থী ক্যাম্প এবং শহরে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জঙ্গীগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার আতঙ্কে আত্বগোপনে চলে গেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাফেজ ছলাহুল ইসলাম হচ্ছে-আরএসও’র প্রথম সারির নেতা মাস্টার আইয়ুবের অন্যতম প্রাণশক্তি। ওই জঙ্গী আত্মগোপনে থাকলেও তার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন এই ছলাহুল। মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে লোকজন এনে গোপন জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া, অর্থ তহবিল সংগ্রহ ও যোগান, ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানের সব কাজটুকুনই জঙ্গী ছলাহুল করে থাকেন। এদেশের নাগরিক বলে দাবী করে জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী করা পাসপোর্ট সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে আটকে থাকায় কয়েক বছর ছলাহুল দেশের বাইরে যেতে পারেন নি। জঙ্গী নেতা মাস্টার আয়ুবের মাধ্যমে তিনি তহবিল আনেন রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন পরিচালনা করার জন্য। মৌলবাদী গোষ্ঠী ও মাস্টার আয়ুবের পরামর্শে অতি গোপনে জঙ্গীপনার সব কাজ করে যাচ্ছিলেন জঙ্গী নেতা হাফেজ ছলাহুল ইসলাম। ইতোপূর্বে একবার গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে গেলেও অঢেল টাকা এবং তার পক্ষে তদ্বিরবাজদের কারণে বেশীদিন থাকতে হয়নি শ্রীঘরে। এবারও একই ধারাবাহিকতায় ছলাহলকে ছাড়িয়ে নিতে তার অনুসারিরা ব্যাপক তদ্বিরে নেমেছে।

সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত জঙ্গী সংগঠন আরএসও’র এই নেতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশী পরিচয় বহন করে বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গীদের সংগঠিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে রয়েছে আরব বিশ্বের অনেক জঙ্গী নেতার সম্পর্ক। বিশেষ করে সৌদি আরব কেন্দ্রিক বহু ধনাঢ্যশালী পুরনো রোহিঙ্গার সঙ্গে রয়েছে ছলাহুলের সুসম্পর্ক। যাদের কাছ থেকে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নামে প্রতি বছর কয়েক’শ কোটি টাকা অনুদান এনে জঙ্গী সংগঠন পরিচালনায় ব্যয় করছে। ছলাহুলের নির্দেশে তার অনুসারীরা অনেক সময় জামায়াত-বিএনপির নেতা কর্মীদের সঙ্গে ছদ্মবেশে সরকার বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে অর্থ ব্যয় এবং স্বক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে থাকে।

 সুত্র: দৈনিক জনকন্ঠ

পাঠকের মতামত: