ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মাতামুহুরীর তিন ইউনিয়নে যুবলীগের সম্মেলনে কাউন্সিলর তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ

চকরিয়া অফিস :
চকরিয়ায় মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলার তিন ইউনিয়নে যুবলীগের সম্মেলনের কাউন্সিলর তালিকা তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যুবলীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে কমিটির সংশ্লিষ্টরা কৌশলে ভিন্ন দলের একাধিক কর্মীকে যুবলীগের কাউন্সিলর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উপজেলার সাহারবিল, বিএমচর ও পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের যুবলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। আগামী ৫ আগষ্ট উপজেলার ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্টিতব্য সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তিন ইউনিয়নের বর্তমান আহবায়ক কমিটির সংশ্লিষ্টরা তাদের পছন্দের লোকজনকে কাউন্সিলর বানিয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা কমিটির কাছ থেকে কাউন্সিলর তালিকা অনুমোদন নিয়েছে। এ অভিযোগ যুবলীগ নেতাকর্মীদের।
অভিযোগে বিএমচর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি জুবাইরুল ইসলাম জানান, আগে ইউনিয়ন কমিটিতে থাকলেও তিনি বর্তমানে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য। আগামী ৫ আগষ্ট ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলনের দিনক্ষন নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই মোতাবেক ইউনিয়ন কমিটির সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যে প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে দশজন করে ৯০জন ও ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা এবং ইউনিয়ন কমিটিতে আগে এবং বর্তমানে রয়েছেন এমন ২৭জনসহ ১১৭ জনের একটি কাউন্সিলর তালিকা তৈরী করেছেন।
জুবাইরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামীলীগের আদর্শে রাজনীতির মাঠে থাকলেও রহস্যজনক কারনে ইউনিয়ন যুবলীগের সংশ্লিষ্টরা প্রস্তুতকৃত কাউন্সিলর তালিকায় তার নামটি অর্ন্তভুক্ত করেনি। তিনি উপজেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য পদে থাকার পরও কেন কাউন্সিলর তালিকা থেকে বাদ গেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। তিনি অভিযোগ করেছেন, বছর আগে বিএমচর ইউনিয়ন যুবলীগে মিজানুর রহমানকে আহবায়ক, মনুর আলম ও লিবিয়া প্রবাসী বেলাল উদ্দিনকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে বেলাল উদ্দিন জীবিকার তাগিদে লিবিয়া চলে গেলে সম্মেলনের আগে রাতারাতি তার স্থলে জয়নাল নামের একজনকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে। যা গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি।
জুবাইরুল ইসলামের দাবি, ইউনিয়ন কমিটির আহবায়ক মিজানুর রহমান সম্মেলনে নেতা হওয়ার জন্য কৌশলে তার ওয়ার্ড থেকে অন্তত ৭-৮জনকে কাউন্সিলর বানিয়েছেন। পক্ষান্তরে তাঁরা ইউনিয়ন যুবলীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত অন্তত ৩০জন নেতাকে কাউন্সিলর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এভাবে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাউন্সিলর তালিকা করে তো সংগঠন চালানো যাবেনা, এব্যাপারে তিনি জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
একই অভিযোগ করেছেন সাহারবিল ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সেলিমুল কাদের, সাবেক সাধারণ মামুনুল গনী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াবুল করিম ও যুবলীগ নেতা আরমান তালুকদার। তাঁরা বলেন, কোন ধরণের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ কিছুদিন আগে সাহারবিল ইউনিয়ন যুবলীগের একটি আহবায়ক কমিটি দেন অতি গোপনে। ওই কমিটির আহবায়ক করা হয় নজরুল ইসলামকে। আর যুগ্ম আহবায়ক হলেন মো.আরমান ও আবদুল গনী।
যুবলীগ নেতাদের অভিযোগ, সাংগঠনিক গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি ও বেআইনীভাবে দেয়া আহবায়ক কমিটির তিনজন মিলে সাহারবিল ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে তাদের পছন্দের ১১৭জনকে কাউন্সিলর করে তালিকা তৈরী করেছেন। গত ৩১জুলাই ওই তালিকা অতি গোপনে উপজেলা কমিটির কাছ থেকে অনুমোদনও নিয়েছেন।
অভিযোগকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিগত সময়ে তাঁরা বিভিন্ন মেয়াদে সাহারবিল ইউনিয়ন যুবলীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমান অবৈধ ইউনিয়ন কমিটির কতিপয় নেতারা কাউন্সিলর তালিকায় তাদের (অভিযোগকারীদের) নাম অর্ন্তভুক্ত করেনি। পক্ষান্তরে তাঁরা সাহারবিল ইউনিয়ন যুবলীগের কাউন্সিলর তালিকায় ছাত্রদল, যুবদল ও ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে কাউন্সিলর বানিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আহবায়ক নজরুল ইসলামের ছোটভাই চট্টগ্রাম কলেজের শিবিরকর্মী দেলোওয়ার হোসেন। একইভাবে আহকায়ক নজরুল সম্মেলনে নেতা হওয়ার জন্য তার পক্ষে ভোট ব্যাংক বাড়াতে নিকট আত্মীয় অন্তত ৮জনকে কাউন্সিলর করেছে। এভাবে ইউনিয়নের অন্তত ২০-২৫জন যুবলীগের নেতাকর্মীকে কাউন্সিলর তালিকা থেকে কৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সাহারবিল ইউনিয়ন যুবলীগের ত্যাগী এসব নেতা অভিযোগ করেছেন, আগামী ৫ আগষ্ট সম্মেলনের দিনক্ষন নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মাঝে দুইদিন সময় থাকলেও এখনো তাদেরকে অনুমোদন করা কাউন্সিলর তালিকা দেখতে দেওয়া হয়নি। আবার দেখতে চাইলে তাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করছে উপজেলা আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক।
জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাতামুহুরী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও সাহারবিল ইউনিয়ন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হোছানুজ্জামান বলেন, আমি উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক হলেও সাহারবিল ইউনিয়নে নতুন আহবায়ক কমিটি দেয়ার বিষয়টি তা আমার জানা নেই। তবে কয়েকদিন আগে কাউন্সিলর তালিকা জমা দেয়ার সময় জানতে পারি সাহারবিলে একটি আহবায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। দু:খের বিষয় আমি সাহারবিল ইউনিয়নের বাসিন্দা, দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু অনুমোদিত কাউন্সিলর তালিকায় আমাকেও রাখা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত হওয়া উচিত।
বিষয়টি প্রসঙ্গে অবহিত করা হলে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি মো.খোরশেদ আলম বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে তৈরী করা কাউন্সিলর তালিকা ইতোমধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেখানে যুবলীগের ত্যাগী কোন নেতাকর্মী বাদ গেলে তা সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র মোতাবেক জেলা ও উপজেলা কমিটিকে অভিযোগ করার নিয়ম রয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ২ আগষ্ট পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। কিন্তু অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাদ পড়াদের মধ্যে কেউ ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে আগে দায়িত্বে ছিলেন, তা তো উপজেলা কমিটিকে সনাক্ত করতে হবে।

পাঠকের মতামত: