ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বান্দরবান-রুমা সড়ক যেন মরণফাঁদ ।। যেকোনো সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের আশংকা

bbanএনামুল হক কাশেমী, রুমা থেকে ফিরে ।।

অপরিকল্পিত, অদক্ষ প্রকৌশলগত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় প্রায় ১৫কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩টি আরসিসি সেতু কার্যত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে গত ৪দিন ধরে রুমাবান্দরবান সড়কে। ফলে রুমা উপজেলা সদরের সাথে বান্দরবান জেলা সদরের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। যেকোন সময় সড়কপথ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সেতুগুলো নির্মিত হয়েছে। মূল সড়কের দুইপাশ এপ্রোচ সড়ক শক্তিশালী না করে ড্রামশিটের প্রটেকশন দেয়ায় সড়কের মরণদশা আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। সাংগু নদীর তীরে রুমা গ্যারিসনের প্রধান ঘাটে নির্মিত বড়সেতুর পাশেই রুমা বাসস্টেশন। এ বাসস্টেশন থেকে রুমা সরকারি কলেজের সামনে হয়ে রুমা উপজেলা পরিষদ অফিস পর্যন্ত প্রায় ৫কিমি এলাকায় কয়েকটি পাহাড়ি ঝিরির ওপর নির্মিত হয় ৩টি আরসিসি সেতু। সেতুগুলো মূলসড়কের চেয়ে গড়ে ৩/৪ফুট নিচুতেই নির্মিত হয়েছে। প্রকৌশলগত নিয়মানুসারে সড়কপথ থেকে গড়ে ৪/৫ ফুট উচুঁ করেই সেতু নির্মাণ করার কথা। এ ৩টি সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। সংবাদপত্রে কিংবা সরকারি দপ্তরগুলোতে সড়ক ও সেতুগুলোর নির্মাণের কোন প্রকার দরপত্র প্রকাশ করা ছাড়াই কর্মকর্তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজভিত্তিক নির্মাণ কাজ করানো হয়েছে। এসব কারণেই সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই চলতি বর্ষার শুরুতেই ভারী বর্ষণে এপ্রোচ সড়ক ছিন্নভিন্ন ও দেবে গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে পাহাড় কেটে মাটির আস্তর দিয়ে যানবাহন চলাচল খানিকটা সচল রাখার চেষ্টা করতে দেখা গেছে । রোববার বিকেল থেকে ও মঙ্গলবার দুপুর রুমা উপজেলা সদরে অবস্থানকালে ওই সেতুগুলোর মুমূর্ষু অবস্থা অবলোকন করেছেন সরেজমিন এ প্রতিনিধি। সেই সময় দেখা গেছে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ এবং সড়কের মরণফাঁদের অবস্থা। তাছাড়াও রুমা উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে এলজিইডির মাধ্যমে নির্মাণাধীন নাইক্যঝিরির ওপর আরসিসি সেতুর কাজ রহস্যজনকভাবে বন্ধ রাখায় সেই পয়েন্টে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে কাদায়। এ সেতুর দুইপাশে ৪টি পিলারের একাংশ কাজ শেষ করেই নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখায় বর্ষার এ সময় যানবাহন চলাচল তো দূরে থাক, স্থানীয়দের পায়ে হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছোটবড় যানবাহনগুলো চলাচল করছে বর্তমানে। রুমা বাজার থেকে পর্যটন কেন্দ্র বগালেক, ক্যক্রাডং এবং তাজিংডং পাহাড়ের এলাকা পর্যন্ত সড়কপথ প্রসস্তকরণসহ নতুন করে নির্মাণ ও প্রযোজ্য এলাকাসমূহে সেতু নির্মাণে সেতু ও সড়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি গত ৯ জুলাই বান্দরবান জেলার মেঘলায় স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানান। তিনি ওই সময় জানিয়েছেন, বান্দরবান জেলা সদর থেকে রুমা উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় ৪৮ কিমি দীর্ঘ সড়কপথ ও সেতুগুলোর পুননির্মাণে ১৬কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বিপুল অর্থ বরাদ্দ সত্ত্বেও এ সড়কের নাজুক অবস্থা জিইয়ে থাকায় ভুক্তভোগী জনগণসহ সচেতন নাগরিকদের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রুমা এলাকায় সেতুসহ সড়কপথ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত সেনা নির্মাণ প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি অর্থবরাদ্দ সাপেক্ষেই উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। রুমা বাজার থেকে বগালেক পর্যন্ত ভগ্নদশায় পরিণত সেতু ও সড়কপথের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল বিভাগের কাছে অর্পিত হলে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, রুমা উপজেলা সদরে যাবার পথে যে ৩টি আরসিসি সেতুর এপ্রোচসড়ক বিনষ্ট বা দেবে গেছে সেইসব খুব শিঘ্রই পুনঃনির্মাণ করা হবে, আপাতত যানবাহন চলাচল সচল রাখার লক্ষ্যে মাটির আস্তরন ও ড্রামশিটের প্রটেকশন দেয়া হচ্ছে।

 

পাঠকের মতামত: