ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার কার্গোবোট ‘আল মদিনা’ ডুবে গেল গভীর সমুদ্রে প্রাণে বাঁচল ১০ জন

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
চকরিয়ার একটি কার্গো বোট মহেশখালী থেকে প্রায় সাত হাজার মণ লবণ বোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে গভীর সমুদ্রে ডুবে গেছে। এ সময় বোটে থাকা মাঝি-মাল্লাসহ ১০জন পানিতে ডুবে গিয়ে হাবুডুবু খাওয়ার সময় নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে যাওয়া একটি যাত্রীবাহী জাহাজের ক্রেনে এবং লাইফ জ্যাকেটের সহায়তায় প্রাণে বাঁচে তারা। উদ্ধার হওয়া এসব মাঝি-মাল্লা সকলেই সুস্থ রয়েছে বলে কার্গো বোট মালিক নিশ্চিত করেছেন। গত সোমবার দুপুর বারোটার দিকে লবণবোঝাই কার্গো বোটটি গভীর সমুদ্রের ভাসানচর বয়া-১ পয়েন্টে (দ্বীপ হাতিয়া থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে) ডুবে যায়।
জীবিত উদ্ধার হওয়া মাঝি-মাল্লারা হলেন বোটের মাঝি চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের কাটাখালী এলাকার সাহাব উদ্দিন (৫০), মো. কালুর পুত্র বোট চালক ফরিদুল আলম (৪৮), মৃত আবদুছ ছালামের পুত্র গিয়াস উদ্দিন (৪৫), মাঝি সাহাব উদ্দিনের পুত্র মো. আরাফাত (১৮), নুরুল ইসলাম (৪০), মোহাম্মদ আজাদ (৩৫), মো. লোকমান (৪০), মো. নুরুচ্ছালাম (৩৭)। তবে অন্য দুইজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তাদের বাড়ি মহেশখালী উপজেলায় বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বাসিন্দা হাজি মো. এয়াকুব, আসলাম চৌধুরী ও খলিলুর রহমানের মালিকানাধীন কার্গো বোট ‘আল মদিনা’য় মহেশখালী থেকে প্রায় ৭ হাজার মণ লবণ ভর্তি করে ঢাকার লবণ মিলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় গত রবিবার সকালে। বোটটি একদিন পর সোমবার চট্টগ্রাম হয়ে নোয়াখালীর দক্ষিণ হাতিয়া পয়েন্টে গেলে প্রবল স্রোতের মুখে পড়ে। এ সময় বোটের তলানীতে ফুটো হয়ে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সমুদ্রে ডুবে যেতে থাকে। এ সময় বোটে থাকা মাঝি-মাল্লারাও পানিতে ডুবে হাবুডুবু খাচ্ছিল। এই অবস্থায় হাতিয়া থেকে চট্টগ্রামমুখি একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যাওয়া বোটের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়ে ডুবে যাওয়া মাঝি-মাল্লাদের প্রাণে বাঁচিয়ে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া বোটের মাঝি সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী নিলুফা পারভীন ও পুত্র আরশেদ রাহাদ বলেন, ‘হাতিয়া থেকে চট্টগ্রামমুখি বার আউলিয়া নামের একটি যাত্রীবাহী জাহাজ সংশ্লিষ্টরা ক্রেন দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে চেষ্টা চালানোর পর তাদের উদ্ধার করে। বর্তমানে তারা বার আউলিয়া জাহাজেই চিকিৎসা নিচ্ছে এবং ভাল আছে বলে জানতে পেরেছি।’
সূত্র জানায়, মূলত বিআইডাবি¯œউটিসির এম ভি বার আউলিয়া নামের একটি লঞ্চের (জাহাজ) মাস্টার অফিসার কাজী আবদুল হকের প্রাণাšত্মরকর প্রচেষ্টাতেই এসব মাঝি-মাল্লা প্রাণে বাঁচতে পেরেছেন। এসব মাঝি-মাল্লাকে প্রাণে বাঁচাতে পারায় তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
কার্গো বোট মালিক হাজি মো. এয়াকুব জানান, বোটটি তিনিসহ তিনজনের। মহেশখালীর এক লবণ ব্যবসায়ী তাদের বোটটি ভাড়া নিয়ে লবণভর্তি করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে গভীর সমুদ্রে প্রবল ঢেউয়ের আছড়ে বোটের তলানীতে ফুটো হয়ে গেলে লবণ ও মাঝি-মাল্লা নিয়ে ডুবে যায়। তবে বোটটি সমুদ্রে পুরোপুরি ডুবে গেলেও মাঝি-মাল্লা ১০জনই জীবিত উদ্ধার হয় বার আউলিয়া নামের একটি যাত্রীবাহী জাহাজের সহায়তায়।
বোট মালিক আরো জানান, লবণবোঝাই বোট ‘আল মদিনা’ পুরোপুরি ডুবে যাওয়ায় তা উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন তারা।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘লবণভর্তি কার্গো বোটটি ১০ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে গভীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার খবরে তাদের পরিবারে কান্নার রোল পড়ে যায়। তবে এসব মাঝি-মাল্লাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে শুনে কান্না থামলেও দ্রুত বাড়িতে ফিরে পেতে চায় তারা।’

পাঠকের মতামত: