ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

পোকখালীর মানচিত্র থেকে গোমাতলী বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা

xসেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার ) প্রতিনিধি :::

কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীতে স্থায়ী বেড়ীবাঁধের অভাবে প্রতিনিয়ত জোয়ার ভাটায় বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়ে সাগরের পানির তীব্র স্রোতে সড়কের অংশ ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে । সেই থেকে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে । জোয়ার-ভাটায় ভাঙ্গা অংশ বাড়তে বাড়তে এখন ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্থ হয়েছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে বেড়ীবাঁধের আরো নতুন নতুন অংশ। ঈদগাঁও থেকে গোমাতলীর দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার হলেও বিধ্বস্থ ৩ কিলোমিটার ভাঙ্গা অংশের কারনে বর্তমানে এই ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি কয়েক ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। তার উপর নৌকা, সিএনজি, নিয়ে কয়েকদফা গাড়ী বদলিয়ে আসা যাওয়া যেন সেই প্রাচীন যুগের কথা মনে করিয়ে দেয় এলাকাবাসীকে। সবচেয়ে বেশী দূর্ভোগ পোহাতে হয় বিধ্বস্থ সড়ক দিয়ে নৌকা পার হয়ে অসুস্থ, নারী ও বৃদ্ধদের গোমাতলীতে যাতায়াত করা। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে গোমাতলীবাসী জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানিয়ে আসলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি । এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ না করলে বিচ্ছিন্ন সড়কটি সংস্কার করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তারা বলছেনে সড়কটি মেরামতের জন্য টেন্ডার হওয়ার পরও কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকার কারনে।

পোকখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানান, সড়ক বিভাগ চাইলে কয়েক ফুট উচু করে সড়কটি মেরামত করতে পারতো। সে ক্ষেত্রে জোয়ারের পানি ঢুকলেও সড়ক যোগাযোগে কোন সমস্যা হতোনা, এলাকার মানুষের যাতায়াত সমস্যা লাঘব হতো। তিনি মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি ক্ষতির প্রভাবটা পড়েছে গোমাতলীর উপর। সাগরের পানির উচ্চতা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই নাজুক অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে টেকসই উচু বেড়ীবাঁধ ও সড়ক নির্মাণ করতে হবে। না হলে গোমাতলী একদিন সাগর গর্ভে তলিয়ে যাবে।

সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে গোমাতলী রক্ষা বাঁধের ৫ কিলোমিটার অংশ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে নির্মিত বেড়ী বাঁধ ২০০৭ সালের প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের তোড়ে বড় ধরণের ভাঙ্গনের ফলে শত শত পরিবার গৃহহারা ও চাষাবাদের জমিতে লবন পানি প্রবেশ করতে থাকে। তাছাড়া সাগরের জোয়ারের পানির কারনে লবণ মাঠ, ঘের, ফসলী জমি ও বসত-ভিটায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানু’র তান্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। সামুদ্রিক জোয়ার ও বন্যার পানির প্রবল ধাক্কায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার বর্তমানে ভেঙ্গে যাওয়া অন্তত ৪টি পয়েন্টে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে প্রতিদিন চলছে রীতিমত জোয়ার-ভাটা। সাগরের লোনা পানি গ্রাস করছে লোকালয়। ফলে সাগর উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার লোকজনের চোখের ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ায় জোয়ারের লবন পানি ডুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। চিংড়ী ঘের, ফসলী জমি, বসত বাড়ী ও বিভিন্ন গাছপালা ধ্বংস হয়ে পড়ছে। এমনকি রাতে জোয়ারের পানি উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করায় লোকজনকে ঘর-বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হচ্ছে।

পোকখালী ইউপি মেম্বার আলাউদ্দিন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ শুস্ক মৌসুমে কোন কাজ না করে বর্ষার আগে বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ কাজে হাত দেয় ফলে বাঁধের কাজ শেষ করতে পারেনা। ফলে বছর বছর গোমাতলীর দূর্ভোগ শেষ হচ্ছেনা।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান জানান, গোমাতলী রক্ষায় টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মানে একটি প্রকল্প পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেটি অনুমোদন হলে গোমাতলী রক্ষায় স্থায়ী সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন ।

পাঠকের মতামত: