ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

৪৬ নালা দখলকারীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে পৌরসভা

তুষার তুহিন, কক্সবাজার  :
কক্সবাজার পৌরসভার নালা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে ১২৯ জন প্রভাবশালী। প্রাথমিক তালিকায় থাকা এসব দখলকারীর মধ্যে যাচাই- বাছাই করে ৪৬ জন দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে কক্সবাজার পৌরসভা। প্রথমধাপে ঘোনারপাড়া রাস্তার মোড় থেকে বার্মিজ মার্কেট, বাজারঘাটা হয়ে পেশকার পাড়া পর্যন্ত নালা দখলকারীদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে চাউলবাজারের রাবেয়া কুটিরের বর্ধিতাংশ থেকে ওই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান জানান, বর্ষাকালে কতিপয় নালা দখলকারীদের কারণে পৌরসভা পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে সারাদেশে কক্সবাজার পৌরসভার সুনাম ক্ষুন্ন হয়। সেই সুনাম ফিরিয়ে আনতে ও পৌরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতেই কক্সবাজার পৌরসভা এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে।
আর কক্সবাজার পৌরসভার সচিব শামসুদ্দিন জানান, প্রথম ধাপে কক্সবাজার পৌরসভার নালা দখলকারীদের মধ্যে ৪৬ জন দখলকারীর তৈরি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ইতিমধ্যেই এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসনের একটি টিম ও জেলা পুলিশ একটি টিম কক্সবাজার পৌরসভাকে সহযোগীতা করছে।
কক্সবাজার পৌরসভার সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে উচ্ছেদের চুড়ান্ত তালিকায় থাকাদের মধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মী, সিভিল সোসাইটির নেতা, সাংবাদিক, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ছাড়াও রয়েছে অনেক ক্ষমতাধরের নাম।
ঘোনার পাড়া রাস্তার মোড়ের নালার পূর্ব পার্শ্বে র্৫/৪র্০ সাইজের দখল করে একতলা ভবন নির্মাণ করেছেন ডাঃ সুরঞ্জন বড়–য়া ছেলে ডাঃ দিপংকর বড়–য়া। বৈদ্যঘোনা রাস্তার মুখ সংলগ্ন বৌদ্ধ মন্দিরের পিছনের গেইটের নালার উত্তর পশ্চিম পার্শ্বে ১র্০/৪র্র্৫ দখল করে ২য় তলা ভবন নির্মাণ করেছেন আজিজুর রহমানের ছেলে ঝংকার শিল্পগোষ্ঠীর পরিচালক গোলাম মোর্শেদ। বৈদ্যঘোনা রাস্তার মুখ সংলগ্ন বৌদ্ধ মন্দিরের পিছনের গেইটের নালার উত্তর পশ্চিম পাশের র্৪/৪র্০ নালা দখল করে টিনসেট স্থাপনা নির্মাণ করেছেন সাংবাদিক বদিউল আলম। গোলদীঘির পুকুরের উপর র্৪/র্৫ সাইজের টিনসেট ঘর নির্মাণ করে দখল করেছেন ইয়াকুব আলী ছেলে আবদুর রাজ্জাক। গোলদীঘির উত্তর পাড় কালভার্ট সংলগ্ন নালার উত্তর পার্শ্বে র্৪/র্৫ সাইজের দখল করে টিনসেট স্থাপনা নির্মাণ করে আফি মং। গোলদীঘির উত্তর পাড় কালভার্ট সংলগ্ন নালার র্৩/৩র্০ সাইজের নালা দখল করে ২য় তলা ভবন নির্মাণ করেছেন মংপ্রু এর ছেলে আখন ঞে।
গোলদীঘির উত্তর পাড় কালভার্ট সংলগ্ন র্৩/২র্০ সাইজের নালা দখল করে এক তলা ভবন নির্মাণ করেছেন মংসেন এর ছেলে কেওসিন। ঘোনা পাড়া রাস্তার মোড়ে পশ্চিম পার্শ্বের নালার র্৩/২র্র্৫  দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন সুনিল দে। বৈদ্যঘোনা রাস্তার মুখ দক্ষিণ পার্শ্বের র্৪/৩র্৪ সাইজের নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন মংক্য রাখাইন। বৈদ্যঘোনা রাস্তার মুখ ও রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বের র্৪/৪র্৫ সাইজের নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন থেমিয় বড়–য়া। বৈদ্যঘোনা রাস্তার মাথা ও রাস্তার পূর্ব পার্শ্বের র্৬/১র্র্৫ নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন নবিউল হকের ছেলে খোরশেদ। ঘোনাপাড়া রাস্তার মুখ ও রাস্তার উত্তর পার্শ্বের র্৩/৫র্৫ সাইজের নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন বখতিয়ার জামাল চৌধুরী। বৌদ্ধ মন্দির প্রধান গেইট সংলগ্ন নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্৪/৪র্৫ সাইজের নালা দখল করে কক্স সিটি মার্কেট নির্মাণ করেছেন ছমি উদ্দিনের ছেলে আবদুল্লাহ। বৌদ্ধ মন্দির সড়কস্থ কালভার্ট সংলগ্ন নালার উত্তর পার্শ্বে ১র্৩/৪র্৫  দখল করে ইটের সীমানা দেওয়াল নির্মাণ করেছেন জহির আহমদের ছেলে মাহাতাব। বার্মিজ মার্কেট আগের পড়শী নালার উপর উভয় পার্শ্বে ১র্০/৮র্০  দখল করে ৫ম তলা আশরাফিয়া ভবন নির্মাণ করেছেন লোকমান মাষ্টার।
পৌরসভার নালা দখলকারীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। কক্সবাজার চেম্বার্স এন্ড কর্মাসের একাংশের সহ-সভাপতি এই নেতার নাম দখলকারী হিসেবে ৩ জায়গায় রয়েছে। বৌদ্ধ মন্দির সড়ক কালভার্ট সংলগ্ন নালার দক্ষিণ পার্শ্বে/নালার উপর উভয় পার্শ্বে ১র্৬/১৩র্৪ সাইজের নালা দখল করে পাকা দোকান নির্মাণ ও আবু সেন্টার ভবন নির্মাণ করেছেন আবু আহমদের ছেলে আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। বাজারঘাটা প্রধান সড়কের নালার উপর উভয় পার্শ্বে র্৫/১র্০  দখল করে ইটের দেওয়াল নির্মাণ করেছেন কক্সবাজার বিল্ডার্স ছিদ্দিক আহমদের ছেলে মৌলভী নুরুল হুদা। বাজারঘাটা প্রধান সড়কের নালার উভয় পার্শ্বে ১র্০/৫র্০  দখল করে হোটেল ভাতঘর নির্মাণ করেছেন মৌলভী বখতিয়ার আহমদ। বাজারঘাটার নালার উত্তর পার্শ্বে র্৪/৫র্০ দখল করে নালার উপর ছাদ ও বীম নির্মাণ করেছেন  ইসলাম সওদাগরের ছেলে হাজী আজিজুল হক। বাজারঘাটায় নালার পূর্ব পার্শ্বে র্৩/৫র্০ সাইজের নালা দখল করে সিঁড়ি এবং ৭ম তলা বিশিষ্ট ইসলামীয়া ম্যানশন ভবন নির্মাণ করেছেন হাজী নুরুল ইসলামের ছেলে আবদুল্লাহ। এর পাশে নালার পশ্চিম পার্শ্বে ১র্০/৭র্র্০ সাইজের নালা দখল করে ৩য় তলা ভবন হোটেল সী-হার্ট নির্মাণ করেছেন মৃত হাজী মকবুল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ওমর ফারুক ও জাহাঙ্গীর আলম। ছালামত উল্লাহ সড়কের নালার দক্ষিণ পার্শ্বে র্৩/৩র্র্০  দখল করে টিনসেট ভবন নির্মাণ করেছেন সাজ্জাদ ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক নুরুল আজিম ফরাজী। ছালামত উল্লাহ সড়কের নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্৮/৬র্০  দখল করে টিনদ্বারা সীমানা দেওয়াল নির্মাণ করেছেন মহব্বত আলীর ছেলে সিরাজুল হক। পূর্ব চাউল বাজার সৈকত টাওয়ারের পিছনের নালার পূর্ব পার্শ্বে র্৮/৬র্০ দখল করে ভবন নির্মাণ করেছেন মৌলভী জামাল আহমদ। পূর্ব চাউল বাজারের নালার পূর্ব পার্শ্বে র্৮/৬র্০  দখল করে আছিয়া মঞ্জিল নামের ভবন নির্মাণ করেছেন হাজী নুর আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। বাজারঘাটায় নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্৪/১০র্০ সাইজের নালা দখল করে  হোটেল শাহবাজ নামের ভবন নির্মাণ করেছেন মৃত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে জাকের উল্লাহ।
বাজারঘাটার নালার পূর্ব পার্শ্বে র্৯/৫র্০  দখল করে ৩য় তলা হেফাজত মার্কেট নামের ভবন নির্মাণ করেছেন হেফাজত মিয়ার ছেলে পারভেজ। এরপাশে নালার পশ্চিম পার্শ্বে ১র্১/৬র্০  দখল করে টিনসেট ঘর নির্মাণ করেছেন  মৃত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে জাকের উল্লাহ। তারপাশে নালার পূর্ব পার্শ্বে র্৬/৪র্০  দখল করে টিনসেট ঘর নির্মাণ করেছেন নুরুল ইসলাম। এর একটু পরেই নালার পূর্ব পার্শ্বে র্৫/৩র্০  দখল করে ২য় তলা ভবন নির্মাণ করেছেন দাশ ট্রেডিং জমজম মার্কেটের দিলীপ দাশ। তারপরে নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্৫/১০র্০  দখল করে জাফর প্লাজা নির্মাণ করেছেন এডভোকেট আবু হায়দার ওসমানী ও একই এলাকার সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু জাফর ছিদ্দিকী। এর বিপরীত পাশে নালার পূর্ব পার্শ্বে ১র্০/৫র্০ দখল করে টিনসেট ঘর নির্মাণ করেছেন মৃত সাধু বদ্দার। এর উত্তরে নালার পূর্ব পার্শ্বে ১র্০/৬র্০  দখল করে ৪র্থ তলা বিশিষ্ট আহমদ ম্যানশন নির্মান করেছেন মৃত নুরুল হক কোম্পানী ছেলে জানে আলম জানু। এরপাশেই নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্৪/৫র্০ দখল করে টিনসেট ঘর নির্মাণ করেছেন শফি আলম। চাউলবাজারের বড় নালার দক্ষিণ পার্শ্বে ১র্০/১০র্০  দখল করে রাবেয়া কুটির নামের ৪র্থ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন মৃত নুরুল হক কোম্পানীর ছেলে জানে আলম জানু। চাউলবাজার নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্৩/৫র্০ সাইজের নালা দখল করে ৩য় তলা ভবন নির্মাণ করেছেন মাস্টার কলোনীর মৃত বাচা মিয়ার ছেলে নুরুল আমিন। চাউল বাজারের মাষ্টার কলোনীর নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্৩/৫র্০  দখল করে টিনসেট ঘর নির্মাণ করেছেন আবুল বশরের ছেলে শাহ আলম। নালার পূর্ব পার্শ্বে র্২/৫র্০ সাইজের নালা দখল করে ইটের দেওয়াল নির্মাণ করেছেন ফুলবাগ সড়কের মৃত নজর আলীর ছেলে এডভোকেট ছালামত উল্লাহ রানা। একই স্থানে নালার পূর্ব পার্শ্বে র্২/৫র্০ দখল করে ইটেল দেওয়াল নির্মাণ করেছেন ফুলবাগ সড়কের মৃত নজর আলীর পুত্র রহমত উল্লাহ। ফুলবাগ সড়কে নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্২/১০র্০ সাইজের নালা দখল করে ইটেল দেওয়াল নির্মাণ করেছেন ফুলবাগ সড়কের মৃত নজর আলীর ছেলে বিএনপি নেতা নুরুল আলম। এর উত্তরে নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্২/১০র্০ দখল করে দেওয়াল নির্মাণ করেছেন বাহাদুর বোর্ডিং এর মালিক মোহাম্মদ করিম। এরপরে পেশকার পাড়ায় নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্৩/১০র্০ দখল করে দেওয়াল ও টয়লেট নির্মাণ করেছেন মৃত নুর আহমদের ছেলে এডভোকেট বখতিয়ার আহমদ। এরপাশে নালার পূর্ব পার্শ্বে র্৪/২র্০ দখল করে ১ম তলা ভবন নির্মাণ করেছেন মৃত গোলশেদ মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ জাহাঙ্গির। এরপরে নালার পশ্চিম পার্শ্বে র্৬/৮র্০ দখল করে টিনসেট ঘর নির্মাণ করেছেন  নুর পাড়ার মৃত নুর আহমদের ছেলে এডভোকেট বখতিয়ার আহমদ। সর্বশেষ রয়েছে চাউল বাজারে র্৭/৩র্০ সাইজের নালা দখল করে হাসান মার্কেট নির্মানকারী মৌলভী জালাল আহমদের ছেলে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, এই উচ্ছেদ অভিযানে পৌরসভাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করছে জেলা প্রশাসন। শুধুমাত্র পুলিশ কিংবা জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এত বড় উচ্ছেদ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এজন্য পৌরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি চলমান উচ্ছেদ অভিযানকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করার জন্য সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: