ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ঈদগাঁওতে পাসর্পোটের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেয় সিএনজি চালক!

passসেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার ) প্রতিনিধি ::

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে পাসর্পোট তৈরির জন্য পুলিশি ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে খোদ পুলিশের বিরুদ্ধেই। আর এ ক্ষেত্রে পুলিশ অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাধারণত নিয়ম অনুযায়ী যে ব্যাক্তি পাসর্পোট করবেন তিনি পাসপোর্ট অফিসে আবেদন পত্র জমা দেয়ার পর এই অফিস থেকে পাসপোর্ট আবেদনকারীর সমন্ধে তদন্ত করার জন্য পুলিশের জেলা বিশেষ শাখা (ডিএসবি) কে দায়ীত্ব দেওয়া হয়। ওই তদন্তে যদি আবেদনকারীর বিরুদ্ধে তথ্য বিভ্রাট, দেশদ্রোহীতা বা মামলা আছে এমন কোন বিষয় থাকে তাহলে পুলিশ তাকে ক্লিয়ারেন্স দিবেনা। তখন ওই ব্যাক্তি পাসপোর্ট পাবেনা।

কিন্তু ঈদগাঁওতে পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) তদন্ত না করেই যে কাউকে টাকার বিনিময়ে ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিচ্ছে। এতে করে পাসপোর্টের আবেদনকারী ব্যাক্তি যত বড় অপরাধী-ই হোক না কেন সহজেই সে পাসপোর্টের মতো একটা গুরুত্বর্পূণ সম্পদ পেয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় আবেদনকারী ভুল নাম-ঠিকানা ব্যাবহার করেও সহজেই পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে তদন্ত না করার কারণে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সদরের ঈদগাঁওতে বেশির ভাগ আবেদনকারী পাসপোর্ট তৈরি করেন দালালের মাধ্যমে। তখন ওই দালাল বাড়িতে পুলিশি তদন্ত যাবেনা এই চুক্তিতে আবেদনকারীর কাছ থেকে টাকা নেয়। পরে এই টাকার একটা অংশ পুলিশকে দেয়া হয়। তখন পাসপোর্ট আবেদনকারী ব্যাক্তি যত বড় দুষ্কৃতিকারী-ই হোকনা কেন সহজেই তিনি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে এই ক্লিয়ারেন্সের মাধ্যমে পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন। এই তথ্য জানালেন ঈদগাঁওর নামকরা পাসপোর্ট দালালরা ।

২৩ জুলাই ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ঢালার দোয়ার এলাকার শাহ আলম জানান, তিনি যখন দালালের মাধ্যমে পাসর্পোট করবেন তখন পুলিশ তদন্ত করবেনা এই শর্তে দালালকে টাকা দেয়া হয়। পরে আর পুলিশ তদন্ত করতে এলাকায় যায়নি। তদন্তের কাজটি ডিএসবি অফিসারের ঈদগাঁওস্থ সিএনজি চালক নুরুল আলম করে দিয়েছেন। তাকে টাকা দিলে মিলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ছাড়পত্র।

একই তথ্য জানালেন ঈদগাঁও ইউনিয়নের চান্দেরঘোনা সরিয়া পাড়ার জয়নাল মিয়া। তিনি বলেন, পুলিশ তদন্ত করলে পাসপোর্ট পেতে দেরি হয়। তাই দালালের মাধ্যমে পুলিশকে টাকা দিয়ে তদন্ত না করেই পাসপোর্ট পেয়েছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই এলাকার আরেকজন জানান, তিনি উমরাহ হজ্বের ভিসাই সৌদি গিয়ে আর দেশে ফিরে আসবেননা। তিনি সেখানে কোন কাজে লেগে পরবেন। তাই তিনি ভুল নাম ও ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করেছেন। তিনি আরও জানান, সঠিক নাম ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্ট করে উমরাহ হজের ভিসাই গিয়ে আবার হজ করে যদি ফিরে না আসে তবে নাকি তার বিরুদ্ধে সরকার বাদী মামলা হবে। তাই তিনি এমন ভুল তথ্যে পাসপোর্ট করেছেন। এরকম অসংখ্য ঘটনার প্রমান পাওয়া গেছে।

এসব বিষয়ে কক্সবাজার ডিএসবি’র (জেলা বিশেষ শাখা) সহকারী পুলিশ সুপারের সাথে কথা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, কোন পাসপোর্টের ছাড়পত্র তদন্ত ছাড়া দেয়া হয়না। পাসপোর্ট অফিস থেকে আমাদের কাছে তদন্তের জন্য পাঠানো হলে আমরা থানায় আবেদনটি পাঠিয়ে দেই। সেখান থেকে তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর আমরা পাসপোর্ট অফিসে পাঠাই। টাকা দেয়ার বিষয়টি মিথ্যা।

তিনি আরও জানান, পুলিশ গোপনে তদন্ত করতে যায়। তাই লোকে ভাবে পুলিশি তদন্ত ছাড়াই পাসপোর্ট হচ্ছে। কিন্তু এসব তদন্তের ক্ষেত্রে কোন গোপনীয়তার প্রয়োজন বা বিধান আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।

যদি তদন্ত হয় তবে কিভাবে একজন লোক ভুল নাম-ঠিকানা ব্যাবহার করেও পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তদন্তে গিয়ে যদি পাসপোর্ট আবেদনকারীর প্রতিবেশিরা ওই ভুল নামটাই বলে তাহলে আমাদের সেটাই মানতে হয়। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র বা অন্যান্য সার্টিফিকেট দেখলে সত্যটা জানা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি সবার এগুলো থাকেনা বলে জানান ।

পাঠকের মতামত: