ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

খুটাখালীতে বনভূমি দখল : নিয়ন্ত্রনে ৩ কুতুবের অস্ত্রের মহড়া !

aaসেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার ) প্রতিনিধি ::

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ফুলছড়ি রেঞ্জের অধীনস্থ খুটাখালীর তানজুককাটা এলাকার সামাজিক বনায়নের বিপুল পরিমাণ জায়গা জবর-দখলে নেওয়ার জন্য সন্ত্রাসীদল মহড়ায় লিপ্ত হয়েছে। গত ২দিন ধরে এই অবস্থা অব্যাহত থাকায় আশপাশের মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে বনভূমি জবর-দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দেখা দিতে পারে। অবশ্য দখলবাজদের ব্যাপক তৎপরতার মুখে বার বার ফিরে আসতে হচ্ছে বনকর্মীদের।

জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ফুলছড়ি রেঞ্জের অধীনস্থ খুটাখালী বিটের ৬৩ নং খুটাখালী মৌজার সামাজিক বনায়নের আর এস ৩৭/৭১ বিএস ৩৬নং দাগে বনভূমি এবং পাদদেশের ৩০হেক্টর সামাজিক বনায়নের ভূমি দখলে নেওয়ার প্রতিযোগীতায় নেমেছে স্থানীয় জয়নাল, ছৈয়দ, ও নুরুল আলম নামের ৩ কুতুবের শসস্ত্র সন্ত্রাসীদল।

স্থানীয়রা জানান, সশস্ত্র জবর দখলকারীরা ভূমিহীন এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নাম ভাঙিয়ে বনভূমি জবর-দখলের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন বারবার। ইতিপূর্বেও দখলকারীরা খুটাখালী মৌজায় অসংখ্যবার বনভূমি জবর-দখলে নিতে বনবিটের অধীনে ২০০৭-২০০৮ সালের সামাজিক বনায়নের আওতায় ৩০হেক্টর বাগানের লক্ষাধিক টাকা মূল্যের গাছ কেটে নিয়ে যায়। একইভাবে গত ২০ জুলাই উজাড় করা সমতল ভূমি জবর-দখল করে নিতে দফায় দফায় অস্ত্রের মহড়া চালায়।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, ফুলছড়ি রেঞ্জের জঙ্গল খুটাখালী মৌজার ৩০ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ইতিপূর্বে উপকারভোগী নির্বাচন করে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে সামাজিক বনায়নের আওতায় প্লট আকারে বরাদ্দ দেয়। সেখানে সামাজিক বনায়নও সৃজিত হয়। কিন্তু দখলবাজ-সন্ত্রাসীরা সামাজিক বনায়নের গাছ উজাড় করে এসব বনভূমি দখলে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত তৎপরতা চালাচ্ছে। এ কারণে উপকারভোগীরা ধারে-কাছেও ভিড়তে পারছেননা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ২দিন ধরে সশস্ত্র জবর দখলকারীরা এসব বনভূমি দখলে নেওয়ার জন্য মহড়ায় লিপ্ত হলে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় বনবিভাগ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলেও দখলবাজ সন্ত্রাসীদের মারমুখি তৎপরতার কারণে বার বার পিছু হটছে।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী মোকাম্মেল কবির জানান, ৬৩ নং জঙ্গল খুটাখালী মৌজার ৩০ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি জবর-দখলে নেয়ার জন্য গত ২দিন ধরে অসংখ্যবার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সশস্ত্র দল এসব বনভূমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। এই অবস্থায় সামাজিক বনায়নের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া এসব বনভূমির জবর-দখল ঠেকাতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। অচিরেই বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের সমন্বয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দখলে নেয়া এসব বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হবে।’

খুটাখালী বিট কর্মকর্তা আবদু রজ্জাক অভিযোগ করেন, সরকার দলের নাম ভাঙিয়ে এসব বনভূমি জবর-দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে দখলবাজ-সন্ত্রাসীরা। প্লট আকারে বনভূমি পাইয়ে দেয়ার নাম করে দখলবাজ-সন্ত্রাসীরা কয়েকশত গরীব লোকজনের কাছ থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে লিখিতভাবে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

ফুলছড়ি সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ ইউছুপ জানান, দখলদারিত্ব স্থায়ীত্ব করতে বনভূমিতে স্থাপনাও করে দখলবাজরা।

বিট কর্মকর্তা আবদু রজ্জাক আরো জানান, সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী ও বন জায়গীরদারদের সহায়তায় জবর-দখলকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু সশস্ত্র জবর-দখলকারীরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় বনকর্মীরা তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা কয়েক জনকে আসামী করে চকরিয়া থানায় গত ২২ জুলাই সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। এর পরও দখলবাজদের তৎপরতা থেমে নেই।

২০০৭-২০০৮ সালের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা বলেন, সরকার মহৎ উদ্দেশ্যে সামাজিক বনায়নের আওতায় বাগান সৃজন করে উপকারভোগী নির্বাচন করে ৬৩ নং খুটাখালী মৌজার ৩০ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু বনভূমি দখলবাজ-সন্ত্রাসীদের তৎপরতার মুখে সামাজিক বনায়নের মতো বৃহৎ প্রকল্প ভেস্তে যেতে চলেছে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, কোন অবস্থাতেই বনভূমি জবর-দখল করতে দেয়া হবে না কাউকে। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম আমার সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেছেন। প্রয়োজনে জবর-দখলকারীদের উচ্ছেদে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ এবং বনকর্মীরা যৌথভাবে অভিযান চালাবেন।

পাঠকের মতামত: