ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পর্যটকদের সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার সড়কটি যেন ড্রেন

137907_174গোলাম আজম খান, কক্সবাজার :::
কলাতলীস্থ আণবিক শক্তি কমিশনমুখী সড়কটি ভিআইপি দর্শনার্থীদের জন্য সমুদ্রসৈকতে নামার একমাত্র হোটেল-মোটেল জোনের ৫ নম্বর সড়ক। সেই সাথে আণবিক শক্তি কমিশনের লোকজনেরও সৈকতের বালিয়াড়িতে গবেষণা কাজে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এটি।
পর্যটন শিল্প বিকাশে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রণীত মাস্টার প্লানের হোটেল-মোটেল জোনের ৫ নম্বর সড়কটি সমুদ্রসৈকতে নামার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের একটি। কিন্তু তিন বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। পাহাড়ি ঢলে বিলীন হয়ে যাওয়ার দশা হয়েছে।
সড়কটির পাশে হোটেল ওশান প্যারাডইস ও ডিভাইন ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্টসহ বেশ কয়েকটি নামীদামি আবাসিক হোটেলের অবস্থান। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ৯০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সড়কটির পুরোটাই সাগরের সাথে মিশে যায়। দিন দিন সরে পড়ছে অবশিষ্ট মাটিও। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে আশপাশের আবাসিক হোটেল-কটেজগুলোও। মূলত সড়কটি টেকসই হলেও এর ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এ জন্য কক্সবাজার পৌরসভা, হোটেল ওশান প্যারাডাইজ ফকির গ্রুপ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হচ্ছে। এ ছাড়া হোটেল-মোটেল জোনে পৌরসভার নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা ও প্লট মালিকদের কা হীনতার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, কলাতলীর বড়ছরা থেকে শুরু করে বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে সাগরে প্রবাহিত ছরার উপরে পৌরসভা কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দুই কিলেমিটার যে ড্রেন করেছে, তাতে হয়েছে পুকুর চুরি। পানি নিষ্কাশনের প্রধান এই নালাটি জেলা প্রশাসনের খাতায় ১৬ ফুট ছরা বলে উল্লেখ থাকলেও সঙ্কুচিত করে ৮-১০ ফুটের একটি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে বিস্তীর্ণ হোটেল-মোটেল জোনের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হলেও অনেক বিষয়ে তিনি তেমন কিছু জানেন না বলে উত্তর দেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, হোটেল-মোটেল জোনে পৌরসভার ড্রেন নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। প্রতিটি প্লট থেকে ড্রেনে পানি ঢুকার পথ রাখা হয়নি। স্বাভাবিক মাটির চেয়ে উঁচু করে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে গতিপথ না পেয়ে সড়ক দিয়েই পানি চলছে। ভেঙে যাচ্ছে সৈকত এলাকার রাস্তাঘাট। ডুবে যাচ্ছে হোটেল-মোটেল ও আবাসিক কটেজগুলো। তাছাড়া গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রণীত মাস্টার প্ল্যানের আওতায় সড়কটি পড়লেও দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না করে দায়িত্বহীনতা দেখিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, হোটেল-মোটেল জোনের ৫ নম্বর সড়ক দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে সোজা সাগরে। চলমান পানির গতির ধাক্কায় পার্শ্ববর্তী ‘ডিভাইন ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’-এর সীমানা ভেঙে পড়ছে। সরে পড়ছে আশপাশের বসতবাড়ি ও স্থাপনার মাটি। এ দিকে পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়া রাস্তার ওপর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধে চেষ্টা করছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী হাসিব উদ্দিন আহমদ জানান, পৌরসভার অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ পুরো হোটেল-মোটেল জোনেই পানি জমে থাকে। ড্রেনের পানি রাস্তার ওপর দিয়ে চলছে। ভেঙে পড়ছে পথঘাট। পৌরসভা ও সংশ্লিষ্টরা পানি সরানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে আশপাশের স্থাপনাসমূহ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তার অভিযোগ, সঙ্কীর্ণ ড্রেনের কারণে গতিপথ না পেয়ে পানি জমে থাকে। অথচ প্রশাসন তা না দেখে চলাচলের রাস্তা কেটে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে জানান, ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসাইন শাওন। একই কথা স্থানীয়দেরও। তাদের দাবি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা হোক। তাহলে শহর পরিচ্ছন্ন থাকবে।
আণবিক শক্তি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গবেষণাসহ সাগরের সাথে আণবিক শক্তি কমিশনের সমুদ্রসৈকতের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক। মাস্টার প্লানের ৫ নম্বর সড়কটি তাতে অনেক কাজ দিয়েছে। কিন্তু সড়কটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত আণবিক শক্তি কমিশন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার জানান, পৌরসভা এবং সরকারের বিভিন্ন দফতর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব নিলেও হোটেল-মোটেল জোনের সংযোগ সড়ক, বর্জ্য ও পানি নিষ্কাশনে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যৎ হোটেল-মোটেল জোন একটি বিশাল ‘ময়লার ডিপুতে’ পরিণত হবে তিনি মন্তব্য করেন।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহাবুবর রহমান চৌধুরী জানান, সড়কটি পুনর্নির্মাণের জন্য শুষ্ক মওসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব আগামী শীত মওসুমে পৌরসভার পক্ষ থেকে পর্যটকদের সুবিধার্থে হোটেল-মোটেল জোনের ৫ নম্বর সড়কটি মেরামত করে দেবেন।

পাঠকের মতামত: