ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আদালত পাড়ায় ভীমরুলের কামড়ে সাংবাদিকসহ আহত ১৫

Rasedul_1আজিম নিহাদ, কক্সবাজার:
কক্সবাজার শহরের আদালত পাড়ায় স্বর্বত্র বিরাজ করছে ভীমরুল আতঙ্ক। ভীমরুলের ভয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে জনবহুল জজ আদালত প্রাঙ্গন ছিলো জনশূণ্য। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে জজ আদালত প্রাঙ্গনে ভীমরুলের কামড়ে সাংবাদিক, জেলা প্রশাসকের কর্মচারী, মুহুরিসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকের অবস্থা আশংকাজনক। বর্তমানে জজ কোর্টের চারপাশের প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে বিচরণ করছে ভয়ঙ্কর ভীমরুল পোকা। ভীমরুলের ভো ভো শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আদালত প্রাঙ্গন, জেলা পরিষদ, পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চবিদ্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়সহ আশপাশের এলাকা গুলোয়।

সূত্রমতে, দিন দিন বন জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিলুপ্তির পথে সব ধরণের বন্য প্রাণী। একারণে অন্যান্য প্রাণীর মতো বিলুপ্ত প্রায় বিষাক্ত পোকা মাকড়ও আশ্রয় নিচ্ছে লোকালয়ে। লোকালয়ে সামান্য ঝোপ পেলেই বাসা বাঁধছে বিষাক্ত পোকা মাকড় গুলো। এধরণেরই বিষাক্ত ‘ভীমরুল’ পোকা এক সময় লোক চক্ষুর আড়ালে থাকলেও আশ্রয়হীন হয়ে এখন জনবসতিতে ঢুকে পড়ছে। সম্প্রতি একদল বিষাক্ত ভীমরুল পোকা বাসা বেঁধে বসতি গড়ে তুলে জেলা জজ আদালতের পূর্ব পাশের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে। জেলা জজের বাস ভবনের ওই পুকুরটির প্রায় দুই পাশই ঝোপ ঝাড়ে ভরপুর। পুকুরটির পশ্চিম পাশের বাঁশ বাগানে বাসা তৈরী করে ওই ভীমরুলের দল। এতোদিন সাধারণ মানুষের নজর এড়িয়ে গেলেও সম্প্রতি জজ আদালত ভবন এলাকায় দু’একটি ভীমরুল পোকা দেখতে পাই পথচারিরা। যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এতোদিন নিরবে বসবাস করলেও বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে কয়েকজন দুষ্টু বালকের ছুটা ঢিলে ভীমরুলের দল বেরিয়ে পড়ে বাসা থেকে। দল বেঁধে বিচরণকারি ভীমরুল কয়েক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আক্রমন করে পথচারিদের। সাথে সাথেই ভীমরুলের আক্রমনে মারাত্মকভাবে আহত হয় অন্তত ১৫ জন।

আহতদের মধ্যে দৈনিক সকালের কক্সবাজার পত্রিকার ব্যবস্থা সম্পাদক ও বার্তা প্রধান রাশেদুল মজিদ, ঝাউতলার বিল্পব মল্লিক, জেলা প্রশাসনের কর্মচারি আজিজুল হক, মোহাজের পাড়ার ইরন বড়ুয়ার নাম পাওয়া গেলেও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় অনেকের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। ভীমরুলের আক্রমন থেকে বাঁচতে গিয়েও আহত হয়েছেন অনেকে। এসময় আশপাশের এলাকা গুলোতে ভীমরুলের দল ভো ভো করে ছুটে বেড়ায়। আর আতঙ্কে হই হুল্লোড় শুরু হয় পথচারিদের মধ্যে। তারা আরো বলেন, আদালত পাড়া একটি জন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সারাদিন এ এলাকায় জনগণের অবাধ বিচরণ থাকে। তাই শীঘ্রই এসব ঝোপ ঝাড় পরিস্কার করে ভীমরুল মুক্ত করা জরুরি।

আহতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই সময় তারা জজ আদালতের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো। এসময় হঠাৎ একদল ভীমরুল পোকা পথচারিদের উপর আক্রমন করে। ওই সময় পথচারিরা আতঙ্কে দিকবিদিক ছুটাছুটি করে।

আহত সাংবাদিক রাশেদুল মজিদ জানান, অন্যান্যদের মতো দৌড়ে পালাতে গিয়ে দুইটি ভীমরুল তাকে মাথায় ও পায়ে কামড় দেয়। কামড়ের পর পরই তার শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হয়। পরে দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। বর্তমানে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে জন বহুল ওই এলাকা থেকে ঝোপঝাড় পরিস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

আহত বিপ্লব মল্লিক জানান, তাকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ৪/৫ টি ভীমরুল কামড় দিয়েছে। কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুর সম্ভাবনাও ছিলো বলে জানান।

কথিত আছে, পাঁচ-সাতটি ‘ভীমরুল’ এক সঙ্গে কামড়ালে বিষক্রিয়া হয়ে যে কেউ মারা যেতে পারে। গ্রাম গঞ্জের মুরুব্বিরা এখনো ভীমরুলে কামড়ালে গোবর অথবা অন্যকোন গাছপালার রস দিয়ে বিষক্রিয়া থামানোর চেষ্ঠা করে। যদিও ভীমরুলের বিষক্রিয়ার তেমন কোন সঠিক প্রতিষেধক সর্ম্পকে এখনো ধারণা নেই কক্সবাজারের চিকিৎসকদের।

গত বুধবার লিংকরোড়ের মুহুরী পাড়ায় ভীমরুলের কামড়ে বাহাদুর নামে এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শুধু বাহাদুর কক্সবাজারে ভীমরুলের আক্রমনে অতীতে প্রাণ হারিয়েছে আরো অনেকে। এরমধ্যে বাহারছাড়া এলাকার আব্দুর সবুর, কলাতলীর গইয়মতলী এলাকার একটি মেয়ের মৃত্যু উল্লেখযোগ্য।

প্রাণী বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, ভীমরুল হলো বোলতার মতো এক প্রকারের পতঙ্গ। কিছু কিছু প্রজাতির ভীমরুল দৈর্ঘ্যে ৫৫ মিমি. পর্যন্ত হতে পারে। ভীমরুল জাতীয় পতঙ্গরা ভেজপা গণের অর্ন্তগত। শ্রেণীবিভাগের ব্যাপারে স্পষ্ট আলাদা হলেও ভীমরুল ও বোলতার মধ্যে পার্থক্য করা অনেক সময় মুশকিল হতে পারে। সাধারণতঃ বোলতারা হলুদ ও ছোট হয়ে থাকে। আর ভীমরুল বড় ও এর অনেকটাই কালো তবে পিঠে হলুদ সাগ থাকতে পারে।

ভীমরুল পোকা কামড়ালে ক্ষতস্থানে যা করা উচিত :
ভীমরুলের কামড়ে ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হতে পারে। এমনকি গায়ে জ্বরও আসতে পারে। এমতাবস্থায় ক্ষত সারাতে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ভীমরুল মূলত হূল ফুটিয়ে দংশন করে থাকে। এমতাবস্থায় প্রথমেই লক্ষ্য করা উচিত ক্ষতস্থানে কোনো হুল ফুটে রয়েছে কি না। হুল থাকলে তা বের করে ফেলতে হবে। পাতলা কাপড় পরতে হবে। ক্ষতস্থান আটসাঁট হয়ে থাকে এমন কোনো কাপড় পরা উচিত না। ক্ষতস্থান পরিস্কার রাখতে হবে যেন কোনো ধরনের ইনফেকশন না হয়, এর জন্য ক্ষত স্থানে বরফ দিতে হবে। এছাড়া ইনফেকশন থেকে মুক্তি পেতে ক্ষতস্থানে টুথপেস্ট/ভিনেগার/বেকিং সোডা লাগাতে হবে। বাসাতে প্রাথমিক এই চিকিৎসা গুলো করার পরে পরবর্তী প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতে একজন ভালো বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

পাঠকের মতামত: